ম্যালকম এক্স-এর মেয়ের মৃত্যুতে শোকাহত মুসলিম বিশ্ব
২২ নভেম্বর, সোমবার আফ্রিকান-মার্কিন মুসলিম মানবাধিকার কর্মী ও ধর্মীয় নেতা ম্যালকম এক্স-এর কন্যা মালিকাহ শাবাজ মারা গেছেন। ৫৬ বছর বয়সী শাবাজকে তার মেয়ে ব্রুকলিনে তার বাড়িতে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। স্বাভাবিক কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। নিউ ইয়র্কে ফ্রেনক্লিফ কবরস্থানে মালিকাহ শাবাজকে দাফন করা হয়েছে।
মুসলিম মানবাধিকার কর্মী মালিকাহ শাবাজের আকস্মিক মৃত্যুতে আমেরিকার
মুসলিম কমিউনিটির মাঝে শোকের ছায়া বিরাজ করছে। কাউন্সিল অন
আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) এর সহকারী নির্বাহী পরিচালক এডওয়ার্ড
আহমেদ অনলাইনে এক বিবৃতিতে বলেন,
“দেশ এবং সারাবিশ্বের মানুষের সাথে সাথে আমরাও মালিকাহ শাবাজের পরিবার এবং প্রিয়জনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ তার পরিবারকে ধৈর্য ধারণের তৌফিক দিন এবং মালিকাহ শাবাজের পিতার সাথে তাকে জান্নাতে প্রবেশের তৌফিক দিন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।"
কেয়ার-নিউইয়র্কের নির্বাহী পরিচালক আফাফ নাসের মালিকাহ শাবাজের শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করে বলেন,
“মালিকাহ শাবাজের শোক-সন্তপ্ত পরিবারের ও প্রিয়জনদের এই মর্মান্তিক ক্ষতির জন্য আমরা শোক প্রকাশ করছি। তার বাবা-মা এবং বোনের মতো মালিকাহও সর্বাবস্থায় কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। আসুন আমরা ম্যালকম এক্স এবং তার পরিবারের উপর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সোচ্চার হওয়ার মাধ্যমে তার স্মৃতিকে সম্মান করি। নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চিতভাবেই আমাদের তাঁর সান্নিধ্যে ফিরে যেতে হবে।"
মালিকাহর মৃত্যুর খবরের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম শোকবার্তায় ছেয়ে যাচ্ছে। ড. ওমর সোলাইমান লিখেন,
"মালিকাহ তার মা বেটি এর গর্ভে থাকা অবস্থায় ম্যালকমকে তার পরিবারের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। এ পৃথিবীতে তার বাবার সাথে আলিঙ্গনের সুযোগ হয়নি। আমি দুয়া করি ম্যালকম যেন জান্নাতে তার কন্যাকে আলিঙ্গন করতে পারেন। আল্লাহ তাদের প্রতি রহম করুন এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য সহজ করে দিন।"
উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালে আপার ম্যানহাটনে আততায়ীর গুলিতে নিহত কর্মী
ম্যালকম এক্স ছিলেন একজন সাহসী নাগরিক অধিকার কর্মী ও সংগঠক।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলনের আলহাজ্জ্ব
মালিক আলশাবাজ ওরফে ম্যালকম এক্স এক প্রতীকসম ব্যক্তিত্ত্ব। আমেরিকার
কৃষ্ণাঙ্গ ও মুসলিম নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় তিনি তার সমগ্র জীবনে
প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। ১৯৬৫ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী এক সাধারণ নাগরিক
সম্মেলনে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা প্রদানের মাঝপথে হলের পিছন থেকে তিনি
গোলমালের কারণে থেমে যান। হঠাৎ শ্রোতাদের সামনের সারি থেকে তিন ব্যক্তি
তার প্রতি গুলি বর্ষণ শুরু হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ২১টি গুলির আঘাত
পাওয়া যায়। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার অল্প কিছু পরেই তিনি শাহাদাত
বরণ করেন। যে সাহস ও সহিষ্ণুতা নিয়ে তার জীবনের ঝুঁকি সত্ত্বেও
দাঁড়িয়েছিলেন, তা আজো অনেকেরই অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বিবেচিত। আর এই
সাহসের শক্তি তিনি লাভ করেছিলেন ইসলামের শিক্ষার অনুসরণের মধ্য দিয়েই।