মুসলিম বিশ্ব কেন পিছিয়ে

 


শৌর্যবীর্য, প্রভাব-প্রতিপত্তি, জ্ঞানবিজ্ঞান, গ্রহণযোগ্যতা, আত্মমর্যাদা প্রভৃতি বিবেচনায় বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা ধর্মীয় জনগোষ্ঠী মুসলিম। অথচ একসময় তারাই ছিল শ্রেষ্ঠ। সপ্তম শতক হতে ষোড়শ শতক পর্যন্ত প্রায় হাজার বছরের অধিক সময় পুরো পৃথিবীর সামগ্রিক আধিপত্য মুসলিমদের পদানত ছিল। তখন পুরো বিশ্ব মুসলিমদের ইচ্ছার বলয়ে পরিচালিত হতো।

জ্ঞানবিজ্ঞানে যুগোপযোগী ঋদ্ধতা ও একতাই ছিল বিশ্বপ্রভাবের অন্যতম কারণ। কিন্তু এখন অবস্থা উল্টে গেছে। মূলত জ্ঞানবিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়া এবং নিজদের অনৈক্যই মুসলিমদের দুরবস্থার প্রধান কারণ। বর্তমানে বিশ্ব মুসলিমের অবস্থা কত করুণ সে বিষয়ে ধারণা দেওয়া জন্য শ্রীমতি প্রমিতা দাস লাবণীর (Research work, University of Oxford; Statistics taken from Diaspora Jewry.) গবেষণার কিছু তথ্য প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় উদ্ধৃত করা হলো:


পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ৭.০০ বিলিয়ন। তন্মধ্যে খ্রিস্টানের সংখ্যা ২.২ বিলিয়ন, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৩১.৫০ ভাগ। তবে বিশ্বে তাদের সামগ্রিক প্রভাব ৩২.২১ ভাগ। মুসলিমের সংখ্যা ১.৬ বিলিয়ন, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২২.৩২ ভাগ। অথচ বিশ্বে তাদের সামগ্রিক প্রভাব মাত্র ৪.১২ ভাগ। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে অবিশ্বাসীর সংখ্যা ১.২ বিলিয়ন, যা বিশ্বের মোট জনংসখ্যার ১৫.৩৫ ভাগ। বিশ্বে তাদের প্রভাব ১৯.৬৯ ভাগ। পৃথিবীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১.০ বিলিয়ন, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৩.৯৫ ভাগ। বিশ্বে তাদের প্রভাব ১১.৮৭ ভাগ। পৃথিবীতে মোট ইহুদির সংখ্যা ১৪.৪ মিলিয়ন, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ০.০২ ভাগ। অথচ বিশ্বে তাদের সামগ্রিক প্রভাব ২২.৩২ ভাগ। বাকি ৯.৭৯ প্রভাব অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নিয়ন্ত্রণে।
এই গবেষণায় মাপকাঠি হিসেবে শিক্ষা, সামরিক শক্তি, বিশ্বরাজনীতি, প্রভাবিত করার যোগ্যতা, সৃজনশীলতা, আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহে উপস্থিতি, আর্থিক সংগঠন ও সমৃদ্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পাসপোর্টের গুরুত্ব, আন্তর্জাতিক পুরস্কার, সার্বভৌমত্ব, নিজ ভূখন্ডের উপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, নির্ভরশীলতা, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্থা, প্রতিক‚ল অবস্থাকে অনুকূল অবস্থায় নিয়ে আসার তথা অভিযোজিত করার সামর্থ্য, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা, গত ত্রিশ বছরের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, গত ত্রিশ বছরের মধ্যে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর উপর প্রভাব, আবিষ্কার ও আবিষ্কৃত যন্ত্র বা কৌশলের বিস্তৃতি, ধর্মীয় পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানের সাযুশ্য, উত্তরণের গতি, অনুসারীদের আচার-আচরণ ও কর্মকান্ডের বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা, আত্মোন্নয়নে সম্মিলিত প্রয়াস, একতা, ঐক্য, দেশপ্রেম ও ব্যক্তিচেতনা, গ্রহণযোগ্য মানসিকতা, ধর্মালম্বীর অগ্রায়ণ প্রয়াস, বিশ্বায়নে অবদান, বিশ্বের উন্নয়নে অবদান প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে।


গবেষণার ফল এটাই প্রমাণ করে যে, প্রভাব বিস্তারে সংখ্যা দিয়ে কিছু যায় আসে না, গুণমানই আসল বিষয়। আধুনিক মিসাইল যুগে কেউ যদি মধ্যযুগের তলোয়ার দিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে চায় তা হলে তার পতন ছাড়া আর কিছু থাকতে পারে না। এই গবেষণার সঙ্গে সবাই একমত হবেন, এমন প্রত্যাশা গবেষক করেননি। তিনি বলেছেন, কোনো গবেষণাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। মত-অমত নিয়ে গবেষণা। তাই বিষয়টি নিয়ে তর্ক চলতে পারে। কিন্তু গবেষকের মতো আমিও মনে করি, তার গবেষণার বিষয়ে প্রাপ্ত ফলে যে বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়েছে, তা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ মুসলিমদের নেই।


মধ্যপ্রাচ্য থেকে আলোচনা শুরু করা যাক। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া অফিস প্রথম মধ্যপ্রাচ্য নামটি উল্লেখ করে। তবে জনৈক মার্কিন মেরিন অফিসার ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে আরব ও ইন্ডিয়ার সীমারেখা চিহ্নিত করার জন্য নামটি ব্যবহার করলে এটি ব্যাপক প্রচার পায়। বাহরাইন, সাইপ্রাস, মিশর, ইরান, ইরাক, ইসরাইল, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, ওমান, প্যালেস্টাইন, কাতার, সৌদি আরব, সিরিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন- এই সতেরটি রাষ্ট্র নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য। মধ্যপ্রাচ্যের মোট আয়তন ৭২,০৭,৫৭৫ বর্গকিলোমিটার। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের হিসাব মতে, জনসংখ্যা ৩৭৫ মিলিয়ন এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে লোক সংখ্যা ৫২। গাণিতিকভাবে রাষ্ট্র ১৭টি হলেও ইসরাইল ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের সবকটি দেশের অধিবাসী মুসলিম এবং তাদের ভাষা, বর্ণ, সংষ্কৃতি ও জাতিগত ইতিহাসও প্রায় অভিন্ন। তারপরও এরা একটি রাষ্ট্রের নাগরিকে পরিণত হওয়ার মতো ঐক্যে পৌঁছতে পারেনি। এমন অনৈক্যর মধ্যে থাকা জাতি কীভাবে প্রভাবশালী হবে?


মধ্যপ্রাচ্যের সতেরটি মুসলিম রাষ্ট্রের একটির সঙ্গে অন্যটির সামান্য সদ্ভাবও নেই। সবসময় এক মুসলিম রাষ্ট্র অন্য মুসলিম রাষ্ট্রের ক্ষতির চিন্তায় মশগুল থাকে এবং ক্ষতি করার জন্য অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোর কাছে নিজেদের মর্যাদা বিলিয়ে দিতে কুণ্ঠিত হয় না। প্রয়োজনে চিরশত্রু ইহুদির কাছে মাথা নত করতেও দ্বিধা করে না। নিজেদের খনিজ সম্পদ দিয়ে স্বধর্মানুসারী ভাইয়ের রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য শত্রু লবির সঙ্গে আঁতাত করে, কোটি কোটি ডলারের অস্ত্র কেনে, যন্ত্র কেনে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় পুরো নিরাপত্তা এখন ইহুদি-মার্কিন বলয়ের নিয়ন্ত্রণে। মধ্যপ্রাচ্যের অমূল্য খনিজ সম্পদ বিজাতিদের হাতে তুলে দিচ্ছে ডলাররূপী কাগজের বিনিময়ে; ডলার তো কাগজই, যা মেশিনে দিলে বের হয়ে আসে কিন্তু খনিজ সম্পদ তো আর কাগজ নয়।


ভারতের আয়তন ৩২,৮৭,২৬৩ বর্গকিলোমিটার। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের হিসাব মতে, জনসংখ্যা ১৩১১ মিলিয়ন এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৩৯২.৬। ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে জনগণের মধ্যে ব্যাপক ভিন্নতা, বৈচিত্র্য ও মতপার্থক্য সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যের ৩৪ গুণ অধিক জনসংখ্যার দেশ ভারত, স্বাধীনতার পর হতে একটিমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে শাসিত হয়ে আসছে। প্রকৃত অর্থে একদিনের জন্যও সামরিক শাসন কায়েম করতে হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথাও এ প্রসঙ্গে প্রণিধানযোগ্য। নানা জাতি-ধর্মের ৫০টি অঙ্গরাজ্য নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গঠিত। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরাজ ভারতবর্ষ থেকে বিদায় হওয়ার সময় পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে পাকিস্তান নামের একটি রাষ্ট্র গঠন করে দিয়েছিল। এরপর পশ্চিম পাকিস্তানিরা কীভাবে পূর্ববঙ্গের জনগণকে শোষিত করেছিল, তা কমবেশি সবার জানা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে, একটা দিনের জন্যও পাকিস্তান, সামরিক শাসন ছাড়া প্রকৃত অর্থে শাসিত হয়নি। মুসলিমরা ঐক্য বোঝে না, আত্মভোগের জন্য নিজ সংকীর্ণ স্বার্থ চিন্তায় এত সংকীর্ণ হয়ে যায় যে, পুরো জাতিটাই সংকীর্ণতা আর অসহায়ত্বেও চোরাগলি পথে হারিয়ে যায়। নইলে ভারত ২৯টি অঙ্গরাজ্য নিয়ে এতদিন এক থাকতে পারলে পাকিস্তান কেন দুটি রাজ্য নিয়ে একদিনের জন্যও ভালোভাবে থাকতে পারল না!


মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের আয়তন ২০,৭৭০ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৭.৭ মিলিয়ন। তন্মধ্যে ১.৪ মিলিয়ন মুসলিম এবং ইহুদি ৬.৩ মিলিয়ন। মধ্যপ্রাচ্যের মোট জনসংখ্যা থেকে ইসরাইলের জনসংখ্যা বাদ দিলে মধ্যপ্রাচ্যের জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬৭.৩ মিলিয়ন। ইসরাইল মূলত মুসলিম রাষ্ট্র পরিবেষ্টিত একটি খুদে ভূখন্ড। তারপরও ৩৬৭.৩ মিলিয়ন জনগণ অধ্যুষিত ৭১,৮৬,৮০৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যপ্রাচ্যকে মাত্র ৭.৭ মিলিয়ন অধ্যুষিত ২০,৭৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ইসরাইল পুতুলের ন্যায় ইচ্ছেমতো নাকানি-চুবানি খাইয়ে যাচ্ছে।

ইসরালের সঙ্গে সংঘটিত একটি যুদ্ধেও মুসলিমরা জয়ী হতে পারেনি। পৃথিবীতে মুসলিমের সংখ্যা ১৪০ কোটি কিন্তু ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের হিসাব মতে, ইহুদির সংখ্যা মাত্র ১ কোটি ৪৪ লাখ। প্রমিতার গবেষণার কথা গ্রাহ্য না করলেও, সারা বিশ্বের ১৪০ কোটি মুসলিম ১ কোটি ৪৪ লাখ ইহুদির কাছে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শৌর্যবীর্য, প্রভাব-প্রতিপত্তি, মর্যাদা প্রভৃতি বিবেচনায় কত তুচ্ছ, কত নগণ্য, কত দুর্বল তা মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের দিকে নজর দিলে বোঝা যায়। বিশ্ব বিবেচনায় ১.৪৪ কোটি ইহুদির কাছে ১৪০ কোটি মুসলিম নেহাত অসহায় এবং মধ্যপ্রাচ্য বিবেচনায় ৩৬৭.৩ কোটি মুসলমান ১.৪ কোটি ইহুদির কাছে রাঁধুনীর বাটির তলায় পড়ে থাকা পুঁটি মাছের চেয়েও কাতর।
অনেকে হয়তো বলবেন, আমেরিকা ইসরাইলকে সাহায্য করছে, তাই এমন হচ্ছে, আমাদের সাহায্য করুক, আমরাও পারব। তো মুসলিমকে কেন আমেরিকা সাহায্য করছে না। এর কারণ আছে। সাহায্য পাওয়ার যোগ্যতা যার আছে, তাকেই সবাই সাহায্য করে, সহযোগিতাকে যোগ্যতা দ্বারা অর্জন করতে হয় এবং যোগ্যতার মাধ্যমে প্রাপ্ত সহযোগিতাকে নিজের কল্যাণের আওতায় নিয়ে আসতে হয়। যার যোগ্যতা আছে তাকে চাকরি দেওয়া হয়, অযোগ্য লোক হাজার বছর বেকার থাকলেও কেউ চাকরি দেয় না, ভিক্ষা দিতে পারে হয়তো। মুসলমানদেরও হয়েছে এমন অবস্থা। আমেরিকা, মুসলমানদের সহযোগিতা প্রদানের যোগ্য মনে করে না। কেউ কাউকে এমনি এমনি সাহায্য করে না। আমেরিকা মুসলিমদের ভিক্ষা দেওয়ার যোগ্য মনে করে এবং তাই করে। সুতরাং সহায়তা দিতে যাবে কেন?


কেউ কাউকে এমনি এমনি সাহায্য করে না। রাষ্ট্রাচারে এটি উচিতও নয়। মুসলিমরা এখনও মধ্যযুগের চিন্তাচেতনায় আবদ্ধ; পরিবর্তনশীলতাকে প্রচন্ড ঘৃণা করে, গ্রহণ-মানসিকতা নেই বললেই চলে। নতুন কিছু করতে ভয় পায়। এত পশ্চাৎপদ গোষ্ঠীকে কে-ই বা সাহায্য করবে? কেনই বা করবে? তারা তো নিজেরাই নিজেদের সাহায্য করছে না বরং কামড়াকামড়ি করে নিজেদের অল্প যে শক্তি আছে সেটাও শেষ করে দিচ্ছে। অধিকন্তু মুসলিমদের সহযোগিতা না করেও, তাদের কাছ থেকে আরও বেশি সুবিধা ও গোলামী পাওয়া যাচ্ছে। তো আর অযথা সহযোগিতা কেন? যে জিনিস দশ টাকায় পাওয়া যায়, সে জিনিসের জন্য কেউ এক হাজার টাকা খরচ করতে যাবে কেন? যারা নিজেদের অবস্থার জন্য অপরের সহযোগিতা না পাওয়াকে দায়ী করে, তাদের সহযোগিতা বঞ্চিত হওয়ার কারণ এর চেয়ে আর বেশি কী হতে পারে! শুধু আল্লাহার উপর নির্ভর করে থাকলে হবে না। মনে রাখতে হবে, God helps those who help themselves.


২০১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৯০৪ জন লোক বিভিন্ন বিষয়ে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। তম্মধ্যে ২০০ জন ইহুদি যা মোট নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর ২২.৬ ভাগ। অথচ ইহুদির সংখ্যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ০.০২ ভাগেরও কম। নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী ইহুদির মধ্যে ৪০ ভাগ অর্থশাস্ত্রে, ২৮ ভাগ চিকিৎসা শাস্ত্রে, ২৬ ভাগ পদার্থ বিদ্যায়, ১৯ ভাগ রসায়ান শাস্ত্রে, ১৩ ভাগ সাহিত্যে এবং ৯ ভাগ শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। মুসলমানদের মধ্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ীর সংখ্যা ১০; যা মোট নোবেল পুরষ্কার বিজয়ীর মাত্র ১.০ ভাগ। অথচ সারা বিশ্বে মোট মুসলমানের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২০ ভাগ। মুসলমানদের মধ্যে ৬ জন শান্তিতে, ২ জন সাহিত্যে, ১ জন পদার্থ বিদ্যায়, ১ জন রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনজন মুসলিম এককভাবে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। তারা হলেন: সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী নাগিব মাহফুজ ও ওরহান পামুক এবং রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী মিশরীয়-মার্কিন বিজ্ঞানী আহমেদ জেবিল।
অ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর হিসাব মতে, পৃথিবীর সবচেয়ে নৃশংস ও আমানবিক দেশসমূহের মধ্যে সৌদি আরব, ইরান, ইরাক প্রভৃতি অন্যতম। বাংলাদেশ হতে যেসব মানুষ মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করতে যায়, তাদের উপর কী অমানবিক নির্যাতন হয়, তা ভুক্তভোগী মাত্রই জ্ঞাত। পৃথিবীর প্রায় সবকটি দেশে কমবেশি মুসলিম আছে। মুসলিম সংখ্যাঘরিষ্ঠ অধিকাংশ রাষ্ট্রে অন্তর্কোন্দল ও হানাহানি মারাত্মক। মধ্যপ্রাচ্যের কথা তো ইতোঃপূর্বে বলা হয়েছে। পাকিস্তান-আফগানিস্তানের দিকে তাকালে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়। প্যালেস্টাইন এবং মিয়ানমারের দিকে চোখ দিলে অনুধাবন করা যায়, মুসলিমদের অবস্থা কত করুণ। তথ্যগতভাবে মুসলিমেরা নিজেদের ভাই ভাই বলে ঘোষণা করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। ইয়ামেনের যুদ্ধে অসহায় কোনো মুসলিমকে প্রতিবেশী কোনো মুসলিম দেশে আশ্রয় দেওয়া হয়নি। তাদের আশ্রয় নিতে হয়েছে বিধর্মীদের দেশে।
মুসলিমরা পাঁচশ’ বছরের অধিক ভারত শাসন করেছে কিন্তু শাসন ক্ষমতা হস্তচ্যুত হবার পর ভারতবর্ষে তাদের প্রায় পুরো অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যায়। কারণ তারা শাসন করেছে, কিন্তু নিজেদের অবস্থানকে স্থায়িত্ব প্রদানের জন্য যা করা আবশ্যক তা করেনি, করতে পারেনি। ফলে, লর্ড ক্লাইভের নেতৃত্বে একদল ব্যবসায়ীর হাতে পুরো ভারতবর্ষ তুলে দিতে হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, ভারতবর্ষের যেখানে মুসলিম শাসকদের শাসনকেন্দ্র ছিল, সেখানেও বর্তমানে মুসলিম প্রভাব নেই। শুধু অনার্য-ভূমি হিসেবে পরিচিত অবহেলিত বঙ্গদেশে ছাড়া উপমহাদেশের আর কোথাও মুসিলম প্রভাব নেই। এটি যে কারণেই হোক না কেন, তা মুসলিম শাসনের দুর্বলতাই প্রমাণ করে।
বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের প্রভাব এবং এই প্রভাবের অবসানের কারণ কিন্তু বেশি নয়। অনৈক্য ও জ্ঞানবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে নিজেদের অভিযোজিত করতে না পারাই মূলত মুসলিমদের এমন দুরবস্থার অন্যতম কারণ। এই দুটি বিষয়ের সীমবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। মূলত অনৈক্যই মুসলিম বিশ্বের প্রভাবহীনতার কারণ। একসময় মুসলিমর সারা বিশ্বকে শাসন করেছে। তখন তাদের মধ্যে ঐক্য ছিল। তৎকালীন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য জয় কিংবা প্রভাব প্রতিষ্ঠার জন্য যেসব যন্ত্র বা কৌশল আবশ্যক ছিল, তাতে সমৃদ্ধ, ঋদ্ধ ও দক্ষ হওয়ার মতো জ্ঞান ছিল। এখন তারা যুগোপযোগী জ্ঞান হতে পিছিয়ে। কেউ যদি মনে করেন, সপ্তম শতকের অস্ত্র দিয়ে বিশ্বকে পদানত করবেন, তাহলে তারাই পদানত হয়ে যাবেন। মুসলিম বিশ্ব শুধু ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে পারলে নিজেদের প্রভাবকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে।

সাততেতৈয়া

শরিয়ত,তরিকত,হাকিকত ও মারফত কাকে বলে? বিস্তারিত?

পবিত্র কুরআন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান।

হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)-বড় পীর এর জীবনী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

তাজবীদ

জামে মসজিদ নীতিমালা