কাশ্মীরে বিশ্বাসের ঘাটতি

 প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কাশ্মীরি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন নরেন্দ্র মোদি

প্রধানমন্ত্রীর আচরণও এ দেশের রাজনীতির বৈশিষ্ট্য! ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের পর মোদি বলেছিলেন, উপত্যকার রাজনীতিকে তিন পরিবারের (আবদুল্লাহ, সাঈদ ও গান্ধী) মুঠো থেকে মুক্ত করে সাধারণের হাতে তুলে দিতে চান। জোটবদ্ধ রাজনীতিকদের তীব্র শ্লেষে ‘গুপকর গ্যাং’ বলে চিহ্নিত করেছিলেন। বলেছিলেন, ওঁরাই ভিলেন। তারপরও তাঁদের বৈঠকে ডাকা বুঝিয়ে দেয়, আবদুল্লাহদের ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি), সাঈদদের পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) ও গান্ধীদের কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কাশ্মীরের রাজনীতি অসম্ভব। কাশ্মীরকে ‘সংঘাতের এলাকা’ থেকে ‘শান্তির অঞ্চল’ করতে গেলে এদের সাহচর্য ও সহযোগিতা দরকার। সে কাজ বিজেপি ও তার মদদে গড়ে তোলা আপনি পার্টির একার কম্ম নয়।

সেই নিরিখে সরকারের এই বোধোদয় ও প্রচেষ্টা দেরিতে হলেও প্রশংসনীয়। তবে লক্ষ্যপূরণে এখনো অনেক ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’র ছড়াছড়ি।

সেসব নিয়ে কথার আগে আলোচনার তাগিদ ও ‘টাইমিং’টা দেখা জরুরি। কাশ্মীরের এই নবপর্বের বয়স ঠিক তিন বছর। ২০১৮ সালের জুন থেকে রাজ্যে চলছে কেন্দ্রের শাসন। বৈশ্বিক দুনিয়ায় কাশ্মীর আলোচিত নানা কারণে। ট্রাম্প প্রশাসনে মোদি যতটা নিশ্চিত ছিলেন, বাইডেনের আমলের ছবি তার বিপরীত। কাশ্মীর নিয়ে চিন্তিত যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে ভারতকে সতর্ক করছে। ভারত ও পাকিস্তানের গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক বোঝাপড়া বাড়াতে তারা সচেষ্ট। কেননা, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার নির্বিঘ্ন করতে উপমহাদেশে শান্তি থাকা জরুরি। বাইডেন চান না, সেনা প্রত্যাহারের সময় আফগানিস্তান ফের উত্তপ্ত হোক এবং অশান্ত কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াক। এ লক্ষ্যে সৌদি আরবে ভারত ও পাকিস্তানের ‘ব্যাক চ্যানেল ডিপ্লোমেসি’ চলছে। কাশ্মীর বৈঠকের ঘণ্টা কয়েক আগে তাজিকিস্তানে সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশনের মঞ্চে হাজির ছিলেন পাকিস্তান-ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা। অন্যদের সঙ্গে তাঁরা সেখানে সন্ত্রাসবিরোধী যৌথ বিবৃতিতে সইও করেন। আজ রোববার ওয়াশিংটন যাচ্ছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। টাইমিং বোঝাচ্ছে, কাশ্মীরি নেতাদের বৈঠকে ডাকার তাগিদটা কোথায়।

তাগিদ উল্টো দিকেও। তিন বছর ধরে রাজনীতিহীনতায় কাশ্মীরি নেতারাও হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। ৩৭০ খারিজের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আনা মামলাগুলোর শুনানি এখনো সুপ্রিম কোর্টে শুরুই হয়নি। দুবছর আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ সব মামলা পাঠিয়ে দেন সাংবিধানিক বেঞ্চে। সেই থেকে তিনজন প্রধান বিচারপতি কাজের মেয়াদ শেষ করেছেন। শুনানি এগোয়নি। সিদ্ধান্ত রূপায়ণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালত স্থগিতাদেশও দেননি। মামলাগুলো কত দিন পড়ে থাকবে, কেউ জানে না। অথচ সরকার যা কিছু করণীয়, করেই চলেছে। বিনা বাধায়। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান কাশ্মীরি নেতাদের প্রাসঙ্গিক থাকার সুযোগ এনে দিল। সুযোগটা হাতছাড়া করা তাঁরা বিবেচকের কাজ মনে করেননি।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বুঝিয়েছেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল হবে না। বলেছেন ‘বিষয়টি বিচারাধীন’। অতএব আলোচনার অবকাশ নেই। এ–ও বুঝিয়েছেন, সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য নির্বাচন কেন্দ্রের সীমানা পুনর্বিন্যাস বা ‘ডিলিমিটেশন’ প্রক্রিয়া শেষ করা। তারপর বিধানসভার নির্বাচন। পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা ফেরাতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা–ও বলেছেন। ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, সিপিএম ও কংগ্রেস আবার চায় আগে পূর্ণাঙ্গ রাজ্য, তারপর ভোট। দেশের সর্বত্র ডিলিমিটেশনের কাজ শেষ করার কথা ২০২৬ সালে। তাঁরা চান কাশ্মীরেও তখনই হোক। আপাতত রেষারেষি এ নিয়েই।

প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে ‘দিল্লি কি দুরি’র পাশাপাশি ‘দিল কি দুরি’ ঘোচানোর কথা বলেছেন। এই দূরত্ব যে দুস্তর পারাবার, তা অনস্বীকার্য। সে জন্য মোদিকে আস্থা ও বিশ্বাসের ঘাটতি মেটাতে হবে। সূচনাপর্ব শুভ। কাশ্মীরি নেতারা নমনীয়। তাঁরা হাত বাড়িয়েছেন। বল এখন সরকারের কোর্টে। কী করবেন প্রধানমন্ত্রী?

এ ছাড়া রয়েছে নানাবিধ ‘সংশয়’, ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’। ডিলিমিটেশনের পর ভোট করানোর কেন্দ্রীয় তাগিদের ব্যাখ্যার পেছনে বিরোধী মননে ঘোরাফেরা করছে সেই ‘সংশয়’, আস্থার বিপুল ঘাটতি থেকে যার জন্ম।

জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার মোট আসন ১১১। এর মধ্যে ২৪টি আসন পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে। সেগুলো বাদ দিলে অখণ্ড রাজ্যের মোট আসন ৮৭। লাদাখে ছিল ৪টি, যা এখন পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। অতএব মোট আসন ৮৩। উপত্যকায় ৪৬টি, জম্মুতে ৩৭। সংখ্যাধিক্যের কারণে উপত্যকাই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করে। জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল অনুযায়ী আরও ৭টি নতুন বিধানসভা বাড়ার কথা। উপত্যকার রাজনীতিকদের ধারণা, বিজেপি সেই বাড়তি আসন জম্মুকে দিতে চায়, যাতে রাজ্য শাসনে তাদের পাল্লা ভারী হয়।

বিশ্বাসের ঘাটতিই এই সংশয়ের কারণ। ডিলিমিটেশনের আগে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা দিতে কেন্দ্র রাজি হবে কি না, সেটাও বড় প্রশ্ন। কেন্দ্র ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জনা প্রসাদ দেশাই নেতৃত্বাধীন কমিশনকে ডিলিমিটেশনের দায়িত্ব দিয়েছে। কমিশনে পাঁচ জনপ্রতিনিধির মধ্যে তিনজন এনসির, দুজন বিজেপির। ফারুক আবদুল্লাহরা কোনো বৈঠকে যাননি। এনসি, পিডিপি, কংগ্রেস, সিপিএমসহ অধিকাংশের দাবি, আগে রাজ্যের মর্যাদা ফেরাও, তারপর অন্য কিছু। ৩৭০ অনুচ্ছেদের দাবি তাঁরা আদালতে লড়বেন। এ ছাড়া বিরোধীদের সম্মিলিত দাবি সব রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি।

৩৭০ অনুচ্ছেদের অধীন ৩৫(ক) ধারা রাজ্যের অধিবাসীদের চিহ্নিত করার ক্ষমতা বিধানসভাকে দিয়েছে। রাজ্যের জমির মালিকানা রাজ্যের অধিবাসীরাই। কেন্দ্র তা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। অথচ কোনো দলই তা চায় না। সবাই ‘ডোমিসাইল নীতি’ বজায় রাখার পক্ষে। সরকারপক্ষীয় রাজনীতিকেরা চাইছেন ৩৫(ক) ধারাকে সংবিধানের ৩৭১ অনুচ্ছেদের আওতায় নিয়ে আসা হোক। ৩৭০ নিয়ে নীরব কংগ্রেসও তার ৫ দফা দাবিতে এটি রেখেছে। তাদের প্রথম দাবি রাজ্যের মর্যাদা। অবিলম্বে।

প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে ‘দিল্লি কি দুরি’র পাশাপাশি ‘দিল কি দুরি’ ঘোচানোর কথা বলেছেন। এই দূরত্ব যে দুস্তর পারাবার, তা অনস্বীকার্য। সে জন্য মোদিকে আস্থা ও বিশ্বাসের ঘাটতি মেটাতে হবে। সূচনাপর্ব শুভ। কাশ্মীরি নেতারা নমনীয়। তাঁরা হাত বাড়িয়েছেন। বল এখন সরকারের কোর্টে। কী করবেন প্রধানমন্ত্রী?

সাততেতৈয়া

শরিয়ত,তরিকত,হাকিকত ও মারফত কাকে বলে? বিস্তারিত?

পবিত্র কুরআন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান।

হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)-বড় পীর এর জীবনী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

তাজবীদ

জামে মসজিদ নীতিমালা