চীনে সংখ্যালঘু মুসলমান জনগোষ্ঠীর ওপর যা হচ্ছে তা 'গণহত্যা'
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইগুর ও অন্য সংখ্যালঘু মুসলমান জনগোষ্ঠীর ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলছে অত্যাচার। উইগুরদের জোর করে বন্ধ্যা করে দেওয়াসহ তাদের জনসংখ্যা কমাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে চীনা সরকার। চীনা কর্তৃপক্ষ এসব সংখ্যালঘু মুসলমান জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি এবং জীবনাচরণ নির্মূল করার উদ্দেশ্যে তাদের বন্দিশিবিরে আটকে রাখছে। আর এমন নির্যাতন-নিপীড়নের মূল্য উদ্দেশ্য জাতিগত গণহত্যা।
ফাঁস হওয়া কিছু নথি থেকে জিনজিয়াংয়ের কারাকাক্স কাউন্টির বন্দিশিবিরে আটক ৪৮৪ জনের তথ্য জানা যায়। তাদের মধ্যে ১৪৯ জনকে বেশিসংখ্যক সন্তান নেওয়ায় আটক করা হয়েছিল। এটি আটক করার জন্য খুব সাধারণ একটি কারণ। এ বন্দিশিবিরগুলোকে কারিগরি শিক্ষালয় বলে দাবি করে চীনা সরকার।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) করা একটি তদন্ত প্রতিবেদন এবং জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের বিশেষজ্ঞ অ্যাড্রিয়ান জেনজের নতুন একটি গবেষণা প্রতিবেদন এসব তথ্য সামনে এনেছে। নতুন তথ্য-প্রমাণ বলছে, জিনজিয়াংয়ের উইগুর ও অন্য সংখ্যালঘু মুসলমান জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা কমাতে নারীদের জরায়ুতে আইইউডি (ইন্ট্রা-ইউটেরিন ডিভাইস) স্থাপন করা হচ্ছে, জোরপূর্বক সার্জারি করে তাদের বন্ধ্যা করে দেওয়া হচ্ছে, এমনকি অনেকক্ষেত্রে গর্ভপাতও করানো হচ্ছে। যেসব নারী একাধিক সন্তান নিচ্ছে, তাদের বন্দিশিবিরে আটক করে রাখা হচ্ছে।
এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোটা অংকের জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে বেশিসংখ্যক সন্তান নেওয়া নারী-পুরুষদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে বন্দিশিবিরে আটক করে কর্তৃপক্ষ।
জেনজের গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৯ সালে জিনজিয়াং কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা করে, প্রদেশটির দক্ষিণাঞ্চলে সন্তানধারণে সক্ষম অন্তত ৮০ শতাংশ নারীকে জোরপূর্বক গর্ভনিরোধক সার্জারি করে দেওয়া হবে, তাদের জরায়ুতে আইইউডি স্থাপন করা হবে বা তাদের বন্ধ্যা করে দেওয়া হবে। ২০১৮ সালে চীনে যতো নারীর শরীরে আইইউডি স্থাপন করা হয়েছে, তার ৮০ শতাংশই জিনজিয়াংয়ে হয়েছে। অথচ এ প্রদেশটির জনসংখ্যা চীনের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ।
উইগুরদের জনসংখ্যা কমানোর এ ক্যাম্পেইনটি অনেকাংশেই কাজ করছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে হোতান এবং কাশগার অঞ্চলে উইগুরদের জন্মহার ৬০ শতাংশেরও বেশি কমেছে। জিনজিয়াং অঞ্চলজুড়ে জন্মহার কমা অব্যাহত রয়েছে। শুধু গত বছরই জন্মহার কমেছে ২৪ শতাংশ, যেখানে গোটা চীনে জন্মহার কমেছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
১৯৪৮ সালের ‘কনভেনশন অন দ্য প্রেইভেনশন অ্যান্ড পানিশমেন্ট অব দ্য ক্রাইম অব জেনোসাইড’ অনুযায়ী, কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্মহার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে তা গণহত্যা হিসেবে বিবেচিত হবে।
সূত্র: ওয়াশিংটিন পোস্ট