বাবরি মসজিদ রায়ের আদ্যোপান্ত

আসুন জেনে নেওয়া যাক ১০৪৫ পৃষ্ঠার ওই রায়ের আদ্যোপান্ত।
বাবরি মসজিদ :
তিন গম্বুজের এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন মীর বাকি। মসজিদের নামকরণ করা হয়েছিল সম্রাট বাবরের নামে। ১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে গঠিত জৌনপুরি ঘরানার এই মসজিদই বিতর্কের কেন্দ্র।
মন্দির পক্ষের অনেকের বিশ্বাস ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যেখানে বাবরি মসজিদ দাঁড়িয়েছিল, ঠিক সেখানেই জন্ম হয়েছিল রামচন্দ্রের। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, মসজিদ নির্মিত হয়েছিল অ-ইসলামি এক কাঠামোর উপর।ভারতীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারতের রাজনীতির একটা বড় অংশ আবর্তিত হয়েছে এই বিতর্ককে কেন্দ্র করেই। তবে এবার সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যখন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এ বিষয়ে রায় দিতে চলেছে। এই অবসরে এক ঝলকে দেখে নেয়া যাক, ঠিক কোন পথে এগিয়েছে এই অতি বিতর্কিত মামলা-

১৫২৮- মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি বাবরি মসজিদ তৈরি করলেন।
১৮৮৫- ফৈজাবাদ জেলা আদালতে বাবরি মসজিদের বাইরে চাঁদোয় টাঙানোর আবেদন জানালেন মহান্ত রঘুবর দাস। আদালতে আবেদন নাকচ হয়ে যায়।
১৯৪৯- বিতর্কিত ধাঁচার মূল গম্বুজের মধ্যে নিয়ে আসা হল রাম লালার মূর্তি।
১৯৫০-রামলালার মূর্তিগুলির পূজার অধিকারের আবেদন জানিয়ে ফৈজাবাদ জেলা আদালতে আবেদন করলেন গোপাল শিমলা বিশারদ।
১৯৫০- মূর্তি রেখে দেওয়ার এবং পূজা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মামলা করলেন পরমহংস রামচন্দ্র দাস।
১৯৫৯- ওই স্থানের অধিকার চেয়ে মামলা করল নির্মোহী আখড়া।
১৯৬১- একই দাবি জানিয়ে মামলা করল সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড।
১৯৮৬- ফেব্রুয়ারি ১- স্থানীয় আদালত সরকারকে নির্দেশ দেয়, হিন্দু তীর্থযাত্রীদের প্রবেশাধিকার দিতে। সে সময়ে রাজীব গান্ধী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
অযোধ্যা রামজন্মভূমির রামলালা বিরাজমনের নিকট বন্ধু তথা এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি দেবকী নন্দন আগরওয়ালের মাধ্যমে মামলা দায়ের করে।
১৯৮৯, ১৪ আগস্ট- এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, বিতর্কিত স্থানে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে হবে।
১৯৯০, ২৫ ডিসেম্বর- বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি গুজরাটের সোমনাথ থেকে রথযাত্রা শুরু করেন।
৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২- করসেবকরা বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়।
৩ এপ্রিল, ১৯৯৩- অযোধ্যার জমি অধিগ্রহণ করার জন্য বিতর্কিত এলাকার অধিগ্রহণ আইন পাস হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্টে এই আইনের বিভিন্ন বিষয়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রিট পিটিশন জমা পড়ে। সংবিধানের ১৩৯ এ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে ওই রিট পিটিশন বদলি করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট, যা এখনও হাইকোর্টে বিচারাধীন।
২৪ এপ্রিল, ১৯৯৪- সুপ্রিম কোর্ট ঐতিহাসিক ইসমাইল ফারুকি মামলায় রায়ে জানায়, মসজিদ ইসলামের অন্তর্গত ছিল না।
২০০২ এপ্রিল- বিতর্কিত স্থলের মালিকানা নিয়ে হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়।
১৩ মার্চ, ২০০৩- সুপ্রিম কোর্ট বলে, অধিগৃহীত জমিতে কোনও রকমের ধর্মীয় কার্যকলাপ চলবে না।
১৪ মার্চ- সুপ্রিম কোর্ট বলে, এলাহাবাদ হাইকোর্টে দেওয়ানি মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য অন্তর্বর্তী আদেশ কার্যকর থাকবে।
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১০- হাইকোর্ট রায় দেয়, বিতর্কিত জমি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখড়া এবং রামলালার মধ্যে সমবণ্টন করে দেওয়া হোক। এই রায়ে তিন বিচারপতি সহমত পোষণ করেননি। ২-১ ভিত্তিতে রায়দান হয়।
৯মে, ২০১১- অযোধ্যা জমি বিতর্কে হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট।
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬- বিতর্কিত স্থানে রাম মন্দির তৈরির অনুমতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী।
২১ মার্চ, ২০১৭- প্রধান বিচারপতি জেএস খেহর যুযুধান পক্ষগুলিকে আদালতের বাইরে সমঝোতার প্রস্তাব দেন।
৭ আগস্ট- এলাহাবাদ হাইকোর্টের ১৯৯৪ সালের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা আবেদনের শুনানির জন্য তিন বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট।
৮ আগস্ট - উত্তর প্রদেশের শিয়া সেন্ট্রাল বোর্ড সুপ্রিম কোর্টে জানায়, বিতর্কিত স্থান থেকে কিছুটা দূরে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় মসজিদ বানানো যেতে পারে।
১১ সেপ্টেম্বর- সুপ্রিম কোর্ট এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নির্দেশ দেয়, বিতর্কিত জমির ব্যাপারে সদর্থক মধ্যস্থতার জন্য দু’জন অতিরিক্ত জেলা বিচারককে ১০ দিনের মধ্যে মনোনয়ন করতে হবে।
২০ নভেম্বর- উত্তর প্রদেশের সিয়া সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড সুপ্রিম কোর্টকে বলে, অযোধ্যায় মন্দির ও লখনউয়ে মসজিদ বানানো যেতে পারে।
১ ডিসেম্বর- এলাহাবাদ হাইকোর্টে ২০১০ সালের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আবেদন করেন ৩২ জন নাগরিক অধিকার রক্ষা কর্মী।
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮- সুপ্রিম কোর্টে সমস্ত দেওয়ানি মামলার আবেদনের শুনানি শুরু হয়।
১৪ মার্চ- সুব্রহ্মণ্যম স্বামী-সহ সকল অন্তর্বর্তী আবেদন (যারা এই মামলার পক্ষ হতে চেয়েছিল) নাকচ করে সুপ্রিম কোর্ট।
৬ এপ্রিল- ১৯৯৪ সালের রায়ে যে পর্যবেক্ষণ ছিল তা বৃহত্তর বেঞ্চে পুনর্বিবেচনা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানালেন রাজীব ধাওয়ান।
২০ জুলাই- সুপ্রিম কোর্ট রায়দান স্থগিত রাখল।
২৭ সেপ্টেম্বর- পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে মামলা নিয়ে যেতে অস্বীকার করল সুপ্রিম কোর্ট। জানানো হল, ২৯ অক্টোবর থেকে মামলার শুনানি হবে নবগঠিত তিন বিচারপতির বেঞ্চে।
২৯ অক্টোবর- সুপ্রিম কোর্ট জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে যথাযথ বেঞ্চে মামলার শুনানি স্থির করল, ওই বেঞ্চই শুনানির দিন ধার্য করবে।
২৪ ডিসেম্বর- সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নিল, এ সম্পর্কিত সমস্ত আবেদনের শুনানি হবে ৪ জানুয়ারি থেকে।
৪ জানুয়ারি, ২০১৯- সুপ্রিম কোর্ট জানায়, তাদের তৈরি করা যথোপযুক্ত বেঞ্চ মামলার শুনানির তারিখ ১০ জানুয়ারি স্থির করবে।
৮ জানুয়ারি- সুপ্রিম কোর্ট পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ঘোষণা করে। শীর্ষে রাখা হয় প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে। এ ছাড়া বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন এস এ বোবদে, এনভি রামানা, ইউইউ ললিত এবং ডিওয়াই চন্দ্রচূড়।
১০জানুয়ারি- বিচারপতি ইউইউ ললিত নিজেকে মামলা থেকে সরিয়ে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে বলেন, ২৯ জানুয়ারি নতুন বেঞ্চের সামনে মামলার শুনানি শুরু করতে।
২৫ জানুয়ারি- সুপ্রিম কোর্ট পাঁচ সদস্যের নতুন সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করে। নতুন বেঞ্চের সদস্যরা হলেন বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি এসএ বোবদে, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ এবং এস এ নাজির।
২৯ জানুয়ারি- কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে বিতর্কিত অংশ বাদ দিয়ে বাকি ৬৭ একর জমি তাদের আদত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেবার আবেদন জানায়।
২০ ফেব্রুয়ারি- সুপ্রিম কোর্ট জানায়, মামলার শুনানি শুরু হবে ২৬ জানুয়ারি থেকে।
২৬ ফেব্রুয়ারি- সুপ্রিম কোর্ট মধ্যস্থতার কথা বলে, আদালত নিযুক্ত মধ্যস্থতাকারীদের কাজে লাগানো হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য ৫ মার্চ দিন স্থির হয়।
৬ মার্চ- জমি বিতর্ক মধ্যস্থতার মাধ্যমে মীমাংসা করা হবে কিনা সে সম্পর্কিত রায় দান মুলতুবি রাখে সুপ্রিম কোর্ট।
৯ এপ্রিল- নির্মোহী আখড়া কেন্দ্রের জমি ফেরানোর আবেদনের বিরোধিতা করে।
৯ মে- তিন সদস্যের মধ্যস্থতাকারী কমিটি সুপ্রিম কোর্টে তাদের অন্তর্বর্তী রিপোর্ট জমা দেয়।
১৮ জুলাই- সুপ্রিম কোর্ট মধ্যস্থতা চালিয়ে যেতে বলে, ১ অগাস্ট রিপোর্ট জমা দেওয়ার দিন ধার্য হয়।
১ আগস্ট- মধ্যস্থতা সংক্রান্ত রিপোর্ট বন্ধ খামে সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়ে।
৬ আগস্ট- সুপ্রিম কোর্ট জমি মামলায় দৈনিক ভিত্তিতে শুনানির কথা জানায়।
১৬ অক্টোবর- সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শেষ হয়, রায়দান মুলতুবি রাখা হয়।
৯ নভেম্বর ২০১৯- অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম রায় ঘোষণা সকাল সাড়ে দশটায়। সংবিধান :
ভারতের শীর্ষ আদালকের রায়ের শুরুতেই রয়েছে সংবিধানের কথা। রায়ের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সাংবিধানিক মূল্যবোধ রাষ্ট্রের ভিত্তি এবং সে কারণেই ৪১ দিন ধরে এই আদালতে বিষয়টির আইনগত সমাধানের উদ্দেশ্যে শুনানি হয়েছে।
ধ্বংস :
বাবরি মসজিদ যখন ধ্বংস হয়েছিল, সে সময়ে উত্তর প্রদেশে বিজেপি সরকার ছিল এবং কেন্দ্র ছিল পি ভি নরসীমা রাওয়ের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার। রায়ের ৯১৩-১৪ পাতায় লেখা হয়েছে, মসজিদ ধ্বংস করা ছিল স্থিতাবস্থা এবং আদালতককে দেওয়া প্রতিশ্রুতিভঙ্গ। মসজিদ ধ্বংস করা এবং ইসলামিক সৌধ বিলোপ করা আইনের শাসনের গুরুতর লঙ্ঘন।
ন্যায় :
রায়ে ন্যায় শব্দটি উল্লিখিত হয়েছে ১০১ বার। রায়ে ন্যায় সম্পর্কিত বিষয়ে আইনবিদদের লেখা থেকে উদ্ধৃতি তো দেওয়া হয়েইছে, এমনকি সংবিধানের ১৪২ নং অনুচ্ছেদে ও উদ্ধৃত করা হয়েছে, যেখানে ন্যায় প্রসঙ্গ উল্লিখিত হয়েছে।
বিশ্বাস :
রায়ে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, সিদ্ধান্তের কেন্দ্রে রয়েছে প্রমাণাদি, বিশ্বাস নয়। তবে একটি ১১৬ পাতার অতিরিক্ত সংযুক্ত অংশে বিশ্বাসের প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তার শেষে বলা হয়েছে, ফলে শেষ পর্যন্ত হিন্দুদের বিশ্বাসমতে সেখানে মসজিদ নির্মাণের আগেও ভগবান রামের জন্মস্থান ছিল, এবং সে বিশ্বাসের কথা বিভিন্ন নথি ও মৌখিক প্রমাণ থেকে প্রমাণিত হয়েছে।

সরকার :
স্থানীয় এক জমি সমস্যা সমকালীন ভারতের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার পিছনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে বিভিন্ন সরকার এবং তা ঘটেছে ব্রিটিশ সরকারের আমল থেকে, চলেছে ১৫০ বছরের বেশি সময় ধরে। ব্রিটিশরা বাবরি মসজিদের বাইরে এবং ভেতরে দেয়াল তুলেছিল, রাজীব গান্ধী তালা খোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর ১৯৯৩ সালে নরসীমা রাও ৬৭.৭ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিলেন। এই সমস্ত কার্যকলাপের তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটেছে, যার কিছু কিছু উল্লেখ রায়েও উঠে এসেছে।
ইতিহাস :
বাবরি মসজিদের কাহিনি ৫০০ বছরের বেশি সময়কার, যা শুরু হয়েছিল বাবরের আমলে এবং শেষ হলো ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে। এর সূত্রে সরকার গঠিত হয়েছে, সরকারের পতন হয়েছে, জনগণের বহুলাংশের মধ্যে মধ্যযুগীয় আবেগের প্রকাশ ঘটেছে, আধুনিক ভারতীয় গণতন্ত্রের নীতির ভিত্তিগুলোকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অনেকটাই জুড়ে রয়েছে ঐতিহাসিক তথ্য এবং তার ব্যাখ্যা।
ভারতের ধারণা :
এই ব্যাপক অর্থবাহী শব্দবন্ধটি ভারতীয়ত্বের ধারণাকে প্রতিফলিত করে। যা রায়ের প্রথম ও দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে লেখা হয়েছে। আদালত বলেছে, এই সমস্যাটি ভারতের ধারণার মতোই প্রাচীন।
রায়ে বলা হয়েছে, আমাদের দেশ (ভারত) বহু বহিঃশত্রুর আক্রমণ এবং মতবিরোধ প্রত্যক্ষ করেছে। তা সত্ত্বেও ভারতের ধারণা ব্যবসায়ী হোক বা ভ্রমণার্থী অথবা যুদ্ধজয়ী সবাইকেই অঙ্গীভূত করেছে।
জন্মস্থান :
আদালত জন্মস্থানকে আইনসিদ্ধ বলে মানতে অস্বীকার করছে। এ দাবি করেছিল ভগবান শ্রীলালা বিরাজমান এবং আস্থান শ্রীরাম জন্মভূমি। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বলেছে জন্মস্থানে অতি উত্তম রাম জন্মভূমির অস্তিত্ব ছিল এবং আদালত বলেছে এএসআই জানিয়েছে, বাবরি মসজিদ নির্মিত হয়েছে জন্মস্থানে যেখানে পুরনো মন্দির দাঁড়িয়েছিল, তার উপর।
কর সেবক :
হাজার হাজার ধর্মীয় স্বেচ্ছাসেবকরা ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে এল কে আদবানির রথযাত্রার পিছনে জড়ো হয়েছিলেন। তাঁরা করসেবক বলে পরিচিত ছিলেন। পুলিশের গুলিতে বেশ কিছু করসেবকের মৃত্যু হয়। সারা ভারত থেকে দেড় লাখের বেশি করসেবক অযোধ্যায় জড়ো হয়ে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে। ১০ বছর বাদে ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অযোধ্যা থেকে বেশ কিছু করসেবক ফেরবার সময়ে গোধরায় সবরমতী এক্সপ্রেসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, যার জেরে ৫৯ জন মারা যান। এ ঘটনার জেরে নরেন্দ্র মোদির গুজরাটে দাঙ্গা শুরু হয়, যাতে মারা যান ১০০০ জনেরও বেশি। মৃতদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলিম।
জমি :
এই গোটা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ২.৭৭ একর জমি। রায়ের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে, দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে অযোধ্যা শহরের ১৫০০ বর্গগজ জমির মালিকানা নিয়ে বিতর্কের কথা। বিতর্কিত জমি হিন্দুদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড অন্যত্র ৫ একর জমি পাবে।
মোদি :
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৯৯০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর গুজরাটের সোমনাথ থেকে আদবানির নেতৃত্বে যে রথযাত্রা শুরু হয়েছিল তার অন্যতম সংগঠক। এ যাত্রা মাঝপথেই শেষ হয়ে যায় যখন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব সমস্তিপুরে আদবানিকে গ্রেপ্তারির নির্দেশ দেন। পরবর্তী বছর গুএলাতে রামমন্দির বিজেপির জন সমর্থন বাড়াতে থেকেছে এবং ২০১৪ সালে ঢেউ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেছেন মোদি।
নির্মোহী আখড়া :
রামনন্দী ধারার এই আখড়া অন্যতম বড় ও শক্তিশালী আখড়া। দশকের পর দশক ধরে সমস্ত স্তরে ব্যাপক ভাবে আইনি লড়াই চালিয়ে এসেছে তারা। ২০১০ সালে এলাহাবাদ কোর্ট এই আখড়াতে বিতর্কিত ২.৭৭ একরের এক তৃতীয়াংশ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য তাদের সেবায়েতের অধিকারের দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে।
বাইরের চবুতরা :
বিতর্কিত এলাকায় ১৮৫৬-৫৭ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার পর ব্রিটিশরা সেখানে দেওয়ল তুলে দেয়। বাইরের অংশ হিন্দুরা এবং ভিতরের অংশ মুসলিমরা ব্যবহার করবে এমনটা স্থির হয়। সুপ্রিম কোর্ট মেনে নিয়েছে বাইরের অংশ হিন্দুরা এককভাবে ভোগদখল করত, কিন্তু ভিতরের অংশ মুসলিমদের দখলে থাকলেও তা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে গেছে হিন্দুরা।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এও বলেছে যে দেয়াল ও রেলিং বানানো হয়েছিল সংঘাত এড়ানোর জন্য, জমি ভাগের জন্য নয়। আদালত মনে করছে ভেতরের অংশ ও বাইরের চবুতরা অবিচ্ছেদ্য, যে ধারণা মন্দিরের পক্ষে রায়ের পথ তৈরি করে দিয়েছে।
রাজনীতি :
কংগ্রেস রায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে, যে অবস্থানের ফলে বিজেপি থেকে তাদের আলাদা করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। আঞ্চলিক দলগুলো এ নিয়ে মূলত মৌনতা অবলম্বন করেছে, বামেরা গৌণ। ১৯৯২ সালে মসজিদের ধ্বংস যদি হিন্দুত্ব ১.০ কে সামনে নিয়ে আসে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া সে রাজনীতির সামনেই নীরবে বশ্যতা স্বীকার করছে।
প্রশ্ন :
ভারতের সুপ্রিম কোর্টে এলাহাবাদ হাইকোর্টের ২০১০ সালের রায়ের বিরুদ্ধে করা আবেদনের শুনানি হয়েছে। এলাহাবাদ হাইকোর্ট বিতর্কিত জমি তিনভাগে ভাগ করে দিতে বলেছিল। হাইকোর্ট এ প্রশ্নকে মূলত আটটি ভাগে ভাগ করে নিয়েছিল।
রামলালা :
পাঁচটি মামলা আদালতে করেছিল স্বয়ং ভগবান শ্রীরামলাল বিরাজমান এবং তার জন্মস্থান আস্থান শ্রীরাম জন্মভূমি। আদালত ভগবান শ্রীরামচন্দ্রকে আইনসিদ্ধ মেনেছে তবে জন্মস্থানকে আইনসিদ্ধ বলে স্বীকৃতি দেয়নি।
সংঘ :
আরএসএস, বিশ্বহিন্দু পরিষদ এবং বিজেপি, সংঘ পরিবারের এই তিন সদস্য রামজন্মভূমি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে এবং অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের দাবি করে এসেছে। সংঘ পরিবার দীর্ঘ দিন ধরেই বলে এসেছে মন্দির গল বিশ্বাসের প্রশ্ন, আদালতের বিষয় নয়, যে কথা হিন্দুদের হাতে জমি তুলে দেয়ার সময়ে সুপ্রিম কোর্ট নাকচ করে দিয়েছে। রামজন্মভূমি আন্দোলন বিজেপিকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছে, অন্যদিকে আরএসএস প্রমুখ রায় বের হওয়ার পর তাকে স্বাগত জানিয়েছে।
ট্রাস্ট :
আদালত কেন্দ্রকে বলেছে তিন মাসের মধ্যে একটি ট্রাস্ট গঠন করতে। যে ট্রাস্টের কাজের মধ্যে থাকবে মন্দির নির্মাণ। ট্রাস্টে নির্মোহী আখড়ার প্রতিনিধিত্ব রাখার কথাও বলেছে আদালত।
সর্বসম্মত :
অযোধ্যা রায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল প্রধান বিচারপতিসহ পাঁচ বিচারপতির সর্বসম্মত হওয়া। বিতর্কের দীর্ঘ সময়কাল বিবেচনা করলে, তার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় তাৎপর্যের কথা মাথায় রাখলে বিচারপতিদের ঐকমত্য তাপমাত্রা অনেকটাই কমিয়ে রাখতে সহায়তা করেছে। তবে সর্বসম্মত হওয়ার অর্থ সুবিচার, সব সময়ে এমনটা নাও হতে পারে।
হিংসা :
৬ ০ এর দশকের পর থেকে ৮০’র দশকের শেষে আদবানির রথযাত্রা পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রায় হয়ইনি। আদবানির রথের ফল ছিল রক্তপাত। মসজিদ ধ্বংসের পর দাঙ্গায় বিভিন্ন শহরে ২০০০ জনের বেশি মারা যায়। মুম্বাইয়ে দাঙ্গা চলেছিল একমাসের বেশি সময় ধরে।
দেয়াল :
৬-৭ ফুটের জাফরি ও ইটের দেয়াল তুলেছিল ব্রিটিশরা, যা দুই ধর্ম সম্প্রদায়ের স্থান ভিন্ন করে দিয়েছিল। তবে তাতে দুই পক্ষের লড়াই থামেনি। শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে পাঁচটি মামলা দায়ের হয়, এলাহাবাদ হাইকোর্ট ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর যার রায় দিয়েছিল।
এক্স ফ্যাক্টর :
এই রায়ে বিষয়টির পরিসমাপ্তি নাও হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। অনেকেই বলছেন এই রায়ের ফলে কাশী, মথুরাসহ অন্য জায়গা নিয়েও দাবি উঠবে। বিশেষ করে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তি, মুসলিমদের পৃথকীকরণের শঙ্কা জাগানো নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এবং ভারতজুড়ে এনআরসি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এ আশঙ্কা অমূলকও নয়।
যোগি :
গোরখপুর মঠে যোগি আদিত্যনাথের পূর্বসূরি মহান্ত আদিত্যনাথ এবং দিগ্বিজয় নাথ ছিলেন রাম মন্দির আন্দোলনের কেন্দ্রীয় চরিত্র। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নিজেও রাম মন্দিরের পক্ষে গলা তুলেছেন বহুবার। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে ১৯৯৩ সালে কেন্দ্র যে জমি অধিগ্রহণ করেছে, সেখানে বা অযোধ্যার কোনো বিশেষ জায়গায় মসজিদ বানানোর জন্য সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডকে জমি দিতে হবে।
জাফরইয়াব জিলানি :
জিলানি ও রাজীব ধাওয়ান ছিলেন মসজিদ পক্ষের আইনজীবী। জিলানি এ মামলার সঙ্গে প্রায় ৩০ বছর ধরে জড়িত। রাজীব ধাওয়ান সুপ্রিম কোর্টে প্রো বোনো হিসেবে অবতীর্ণ হন এবং ক্ষুরধার সওয়াল করেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে দুই কৌঁশুলিকেই অন্যদের সঙ্গে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।

সাততেতৈয়া

শরিয়ত,তরিকত,হাকিকত ও মারফত কাকে বলে? বিস্তারিত?

পবিত্র কুরআন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান।

হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)-বড় পীর এর জীবনী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

তাজবীদ

জামে মসজিদ নীতিমালা