চামড়া শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা

চামড়া শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা
আমাদের অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় বড় একটি খাত চামড়া শিল্প। ২০১২-১৩ অর্থবছরে চামড়া, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে ৯৮ কোটি ২০ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী শুধু জুতার চাহিদা ছয় হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। এর মধ্যে এককভাবে ৭৫ ভাগ বাজার চীনের দখলে। আমাদের রফতানি তৃতীয়। বাংলাদেশ থেকে প্রধানত ইতালি, নিউজিল্যান্ড, পোল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানি, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়। এছাড়াও আরো বেশ কিছু দেশে বাংলাদেশ থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানির সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে। গুরুত্বপূর্ণ খাত হলেও চামড়া শিল্প অনেকটা অবহেলা-অযত্ন ও অপরিকল্পিতভাবে এগিয়ে চলেছে। যথাযথ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে গার্মেন্ট শিল্পের মতো এটিও হতে পারে আরেকটি শক্তিশালী রফতানি খাত।

জানা যায়, ১৯৪০ সালে নারায়ণগঞ্জে প্রথম ট্যানারি স্থাপন করে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ ব্যবসা শুরু হয়। এর পরে আরো বেশ কয়েকটি ট্যানারি গড়ে উঠেছিল সেখানে। ১৯৫১ সালে সরকারি গেজেট নোটিফিকেশন-এর মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণ করে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকার হাজারীবাগে স্থানান্তর করা হয় ট্যানারি। বর্তমানে দেশে ট্যানারির সংখ্যা ২৭০টি। এর ৯০ ভাগই হাজারীবাগে। ৬৩ বছর ধরে হাজারীবাগে চামড়া শিল্পের কার্যক্রম চলছে। এ সময়ে চামড়া শিল্পের যে প্রসার হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি।  বিদেশি ক্রেতাদের দাবি চামড়া শিল্পের পরিবেশের উন্নতি করতে হবে, তা না হলে তারা বাংলাদেশ থেকে চামড়া কিনবেন না। যার প্রেক্ষিতে হাজারীবাগ থেকে সাভারের হরিণধারায় ট্যানারি শিল্প কারখানা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। ইতিমধ্যে সাভারে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের কাজের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমানে দ্রুততার সঙ্গে কাজ চলছে।

২০১২-১৫ রফতানি নীতিতে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতের তালিকায় রাখা হয়েছে। ফলে এ খাত যেসব সুবিধা পাবে তা হলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কম সুদহারে প্রকল্প ঋণ দেয়া, আয়কর রেয়াত, বিদ্যুত্, পানি-গ্যাস ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার নিয়মের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সম্ভাব্য আর্থিক সুবিধা বা ভর্তুকি দেয়া, সহজ শর্তে রফতানি ঋণ দেয়া, বন্ড সুবিধা অবকাঠামো, প্রাতিষ্ঠানিক ও করিগরি সুবিধা সম্প্রসারণ বহির্বিশ্বে বাজার খুঁজতে সহায়তা দেয়া, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ইত্যাদি।

বাংলাদেশের চামড়ার তৈরি জুতার আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা অনেক ভালো। তবে আমাদের এখানে চাহিদার চেয়ে চামড়া উত্পাদন কম। তাছাড়া দামের দিক থেকে কাঁচা চামড়া ও ফিনিশড লেদার বা চামড়াজাত পণ্যসামগ্রীর ব্যবধান অনেক। কাঁচা চামড়া রফতানি করে যে পরিমাণ কাঁচা চামড়া থেকে উত্পাদিত ফিনিশড লেদার বা চামড়াজাত পণ্যসামগ্রী রফতানি করে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।

পরিকল্পিত উপায়ে যথাযথভাবে এ খাত সমৃদ্ধ করা হলে আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। পরিবেশবান্ধব আধুনিক চামড়া শিল্প গড়ে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এখাত থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গুণগত মানের চামড়া, সস্তা দরের শ্রমিক ও কাঁচামালের সহজ প্রাপ্যতাসহ অন্যন্যা তুলনামূলক সুবিধা ইতিবাচক অবদান রাখবে, জোর দিয়ে বলা যায়। রফতানি প্রবৃদ্ধি ধারায় শক্তিশালী প্রবাহ সৃষ্টি করতে চামড়া শিল্প খাতে ব্যাংক ঋণ প্রবাহ বাড়ানো, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, প্রশিক্ষণ সুবিধার প্রসার ও বিদেশি ক্রেতাদের কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে ট্যানারি শিল্পে গুণগত পরিবর্তন আনার কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

চামড়া শিল্পের মানোন্নয়নে সরকারের আর্থিক সহযোগিতা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষিত জনবল  তৈরির লক্ষ্যে আরো লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউট স্থাপন, চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা গ্রহণ, চামড়া শিল্পের জন্য আলাদা শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা, চামড়া শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা, ব্যবসায়ীদের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানির বিপরীতে পাওনা শুল্ক ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা নেয়া, চামড়া সংরক্ষণে ও প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব দূরীকরণ, চামড়া প্রক্রিয়াকরণে লবণ ও অন্যান্য ব্যবহূত কেমিক্যালের মূল্য না বাড়ানো, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বাড়াতে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে আরো কার্যকর করাসহ প্রয়োজনীয় বিষয়ে বাস্তবমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী সম্ভাবনাময়       শিল্পখাত হিসাবে শক্তিশালী অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত হবে   আমাদের চামড়া শিল্প।

সাততেতৈয়া

শরিয়ত,তরিকত,হাকিকত ও মারফত কাকে বলে? বিস্তারিত?

পবিত্র কুরআন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান।

হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)-বড় পীর এর জীবনী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

তাজবীদ

জামে মসজিদ নীতিমালা