শাহ জালালের দরগাহ, সিলেট শহরের একটি আধ্যাত্মিক স্থাপনা, যা মূলত ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে আগত পাশ্চাত্যের ইসলাম ধর্মপ্রচারক শাহ জালালের
বাসস্থান ও শেষ সমাধি। এই দরগাহ সিলেট শহরের উত্তর প্রান্তে একটি টিলার
উপর অবস্থিত। কারো কারো মতে সিলেট ভূমির মুসলিম সভ্যতা ও ধর্মমত এই দরগাহকে
কেন্দ্র করে প্রসার লাভ করেছে। শাহ জালালের লৌকিক ও অলৌকিক স্মৃতি বিজড়িত এই স্থান সিলেটের অন্যতম পূণ্য তীর্থ হিসেবে পরিচিত।] ঐতিহাসিক অচ্যুৎচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধির মতে এই দরগাহ থেকে প্রেরিত শাহ জালালের সঙ্গী অনুসারীদের দ্বারা ঢাকা, ময়মনসিংহ, ত্রিপুরা, কুমিল্লা ও আসাম প্রভৃতি স্থানে মুসলিম সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রচার ও প্রসার হয়েছে।বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাৎসরিক উরস (স্থানীয় উচ্চারণ:
উরুস) উপলক্ষে প্রতিবছর হাজার হাজার লোক এখানে এসে শাহ জালালের উপলক্ষ ধরে
(অসিলা) স্রষ্টার কাছে ভক্তি নিবেদন ও কৃতজ্ঞতা জানান।
দরগাহের ইতিহাস
দরগাহ প্রধান ফটক
সিলেট বিজয়ের পর দিল্লীর সুলতান শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহ, শাহ জালালকে
সিলেটের শাসনভার গ্রহণের প্রস্তাব করেন। কিন্তু শাহ জালাল এই প্রস্তাব
প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তিতে সুলতান বিশেষ ঘোষণা জারি করে সিলেট শহরের
(কসবে সিলেট) খাজানা মুক্ত করে দরবেশকে সম্মানীত করেন যা এখনো (দরগাহর
সংশ্লিষ্ট এলাকা) বলবত আছে।
সুলতানি আমল হতে প্রথা অনুযায়ী নবাব, বাদশা বা রাজকর্মচারীদের মধ্যে যারা
সিলেট আসতেন, নানা প্রকার দালান ইত্যাদি নির্মাণ করে সম্মানের সাথে
দরগাহের সংস্কার ও প্রসার সাধন করতেন। দরগাহ চত্বরে অবস্থিত স্থাপনা গুলো
সুলতান ও মোগলদের আমলের নির্মিত বলে তাম্রফলক ও প্রস্তরফলকে লিখিত বিভিন্ন
নিদর্শন রয়েছে। যেমন; সিলেট শহরের সর্ব বৃহৎ দরগাহ মসজিদের ফলকে লিখিত
তথ্যে আছে, 'বাংলার সুলতানদের কর্তৃক ১৪০০ সালে ইহা নির্মিত। শাহ জালালের
সমাধি ঘিরে যে দেওয়াল রয়েছে তা লুত্ফুল্লাহ আমীন বকশী কর্তৃক নির্মিত বলে
একটি ফলক সূত্রে উল্লেখ পাওয়া যায়। এভাবে বিভিন্ন দালান, মসজিদ ও পুকুর
ঘাট ইত্যাদি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শাসনকর্তা সহ বাদশা ও সুলতানদের দ্বারা
শাহ জালালের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে তৈরি বলে উল্লেখ আছে। এছাড়া
দরগাহের লঙ্গখানায় অর্থ সাহায্য, খাদেমগনের জন্য জায়গির ব্যবস্থা,
দরগাহের আলোক সজ্জা ইত্যাদি অনুদান সুলতানগণ ও মোগল বাদশাহদের দরবেশের
প্রতি সম্মান প্রদর্শনের বিভিন্ন বিবরণীতে পাওয়া যায়।
যখনই দিল্লীর রাজপুরুষগণ সিলেটের শাসনকর্তা নিযুক্ত হতেন, প্রথা অনুযায়ী;
শাসন ভার গ্রহনের পূর্বে দরগাহে এসে জিয়ারত সম্পন্য করে দরগাহের
স্থলাভিষিক্ত খাদেমগণ কর্তৃক স্বীকৃত হয়েই কার্যভার গ্রহণ করতেন এবং এ
প্রথা ব্রিটিশ
রাজত্বের প্রারম্ভ কাল পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। দরগাহের পুরানো রেকড পত্র
অনুসন্ধানে পরিলক্ষিত হয়, দিল্লীর রাজপুরুষগণ রাজকীয় আড়ম্বরে দরগায় এসে
পৌছলে পরে, খানকার শেখ রাজপুরুষদের মাথায় পাগড়ি বেঁধে অনুষ্ঠানিকভাবে
তাদের প্রতি শাহ জালালের মনোনয়ন জ্ঞাপন না করা পর্যন্ত জনসাধারণ তাদেরকে
শাসনকর্তা হিসেবে গ্রহন করতেন না।
দরগাহর পরিক্রমা
দরগাহ মিনারের মাথায় অবস্থিত আলোকোজ্জ্বল আল্লাহু শব্দ
শাহ জালালের সমাধিকে দরগাহ টিলা বলে অভিহিত করা হয়। টিলার উত্তর
প্রান্তে প্রাচীর বেষ্টিত স্থানে শাহ জালালের সমাধি অবস্থিত। চার কোণে
চারটি উঁচু স্থম্ভ দ্বারা তা নির্মিত। দরবেশের সমাধির পশ্চিম প্রান্তে
প্রাচীর সীমা ঘেঁষে একটি ছোট মসজিদ রয়েছে। যা সিলেটের তদানীন্তন মাজিষ্ট্রেট ও কালেক্টর উইলস দ্বারা পুনঃনির্মিত হয়। দরবেশের সমাধির পুর্ব পশ্চিমে যথাক্রমে ইয়ামনের যুবরাজ শেখ আলী ও ভারতের গৌড় রাজ্যের উজির মকবুল খানের কবর রয়েছে। শাহ জালালের দরগাহর দক্ষিণ দিকে প্রবেশ পথে বাহির হতে পাশে ছিল্লাখানা ও দরবেশের সহাধ্যায়ী হাজি ইউছুফ, হাজী খলিল ও হাজী দরিয়া
নামক এই তিন জন অলির সমাধি বিদ্যমান। তাঁদের পাশে দরগাহের ভূতপূর্ব
মোতওয়াল্লী আবু তুরাবের কবর। এখান থেকে পশ্চিমের প্রবেশ পথে বাহির হতে
আরেকটি বেষ্টনীর পাশে দরগাহের আরো দুই জন মোতওয়াল্লী আবু নাসির ও আবু নসর
পাশাপাশি অন্তিম শয্যায় শায়িত আছেন। ইহার দক্ষিণে একটি উচুঁ স্থানে
গম্বুজ বিশিষ্ট ঘড়ি ঘর নামে এক দালান দেখতে পাওয়া যায়। এই ঘড়ি
ঘরের পূর্ব দিকে প্রকাণ্ড গম্বুজ ওয়ালা বৃহৎ অট্টালিকা, যা এই অঞ্চলে
সুদৃঢ় অট্টালিকা বলে খ্যাত।
এটি সাধারণত গম্বুজ বলে অভিহিত। এই গম্বুজটি সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে তার
বিশ্বস্ত কর্মী ফরহাদ খান দ্বারা নির্মিত। গম্বুজের দক্ষিণে দরগাহ মসজিদ
নামে খ্যাত মুসলমানদের একটি বৃহৎ উপসানাগার রয়েছে। বাংলার সুলতান আবু
মুজাফফর ইউসুফ শাহের সময় কালে ( ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে ) মন্ত্রী মজলিশে আতার
কর্তৃক দরগাহ চত্বরে নির্মিত হয়ে ছিল। পরবর্তিতে বাহারাম খান ফৌজদারের
সময়ে (১৭৪৪ খ্রিঃ) পূর্ণনির্মিত হয়। সিলেট শহরের মুসলমানদের উপাসনাগার
হিসেবে এই মসজিদই সর্ব বৃহৎ । উক্ত মসজিদের সম্মুখে উত্তর দক্ষিণ হয়ে
লম্বালম্বি প্রকাণ্ড প্রাঙ্গন রয়েছে। টিলার উপর পাথরের গাঁথুনী দিয়ে অতি
সুদৃঢ়ভাবে প্রাঙ্গনটি প্রস্তত করা হয়েছে। টিলা হতে নীচে অবতরণের জন্য
উক্ত প্রাঙ্গনের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে সিঁড়ি আছে। সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে
আসলে দরগাহ টিলা ঘেঁষে একচালা একটি ঘর পাওয়া যায়। এই ঘর মহিলা
দর্শনার্থীদের উপাসনার জন্য নির্মিত। ইহার উত্তরে মুসল্লীদের অজুর জন্য
(নতুন ভাবে প্রস্তত) টাব সিস্টেমে পানির ব্যবস্থা রয়েছে। এখান থেকে অল্প
পরিসর উত্তরে একটি বড় পুকুরে গজার জাতীয় মাছ সাঁতার কেটে বেড়ায় এবং
খাবার দেখিয়ে ডাক দিলে কুলে এসে ভীড় জমায়। দরগাহ পুকুরের গজার মাছ
সম্পর্কে প্রচলিত লোককাহিনী অনুসারে, শাহ জালাল এগুলোকে পুষেছিলেন। যে
কারনে জিয়ারতকারী সহ সিলেটের আধিবাসীরা আজও প্রথাগতভাবে গজার মাছের প্রতি
স্নেহ দেখিয়ে আসছেন। ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে অজ্ঞাত লোকেরা বিষ প্রয়োগে
পুকুরের প্রায় ৭শ’রও বেশি গজার মাছ হত্যা করে। ফলে পুকুরটি গজার মাছ
শুন্য হয়ে পড়ে। পরে হযরত শাহ জালালের এর অপর সফরসঙ্গী মৌলভীবাজারের শাহ
মোস্তফার মাজারের পুকুর থেকে ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে ২৪ টি গজার মাছ এনে
পুকুরে ছাড়া হয়। বর্তমানে পুকুরের গজার মাছের সংখ্যা কয়েক শতকে
দাঁড়িয়েছে বলে জানা যায় ।[৫]
দরগাহ পুকুরের ঠিক উত্তর পাশে ও দরগাহ টিলার পূর্বে একটি বড় আঙ্গিনা
রয়েছে। উক্ত আঙ্গিনার উত্তর-পূর্বে একটি বৃহৎ লঙ্গরখানা ছিল। অনেক কাল
পূর্বে ইহা পর্য্যটক, বিদেশাগত দর্শক ও গবির দুঃখিদের আশ্রয় কেন্দ্র
হিসেবে ব্যবহার হতো। যা বর্তমানে পরিবেশজনিত কারণে বন্ধ আছে। লঙ্গরখানার
পূর্বদিকে অন্য একটি ঘরে তামার নির্মিত দুটি বড় বড় ডেগচী রয়েছে। যার
একেকটিতে সাতটি গরু ও সাত মন চাউল এক সাথে পাক করা যায়। উক্ত ডেগচীর
কিনারায় ফার্সী ভাষা লিখিত, জাহাঙ্গীর নগর (ঢাকা পুরানো নাম) নিবাসী ইয়ার
মোহাম্মদের পুত্র শায়খ আবু সাঈদ ইহা (ডেগচী) তৈরি করিয়ে মুরাদ বখস
কর্তৃক দরগাহে পাঠানো হলো। সন তারিখঃ- রমজান ১১০৬ হিঃ (১৬৯৫ খ্রিঃ)।
দরগাহের আঙ্গিনার পূর্ব সীমায় ও ডেগচী ঘরের অল্প পরিসর দহ্মিণে উত্তর
দক্ষিণে লম্বালম্বি একটি প্রশস্থ দেওয়াল ইহার মধ্যস্থলে দরগাহের প্রধান
প্রবেশ পথ। যা দরগাহ গেইট হিসেবে খ্যাত। দরগাহ গেইটের দক্ষিণ দিকে
ছাত্রাবাস সহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা রয়েছে।
অলৌকিক ঝরণা
দরগাহ
টিলার পশ্চিমে অল্প দুরে হযরত শাহ জালালের অলৌকিক উত্স বা ঝরণা অবস্তিত।
ঝরণাকে কেন্দ্র করে দরবেশের নানা অলৌকিক কীর্তি কিংবদন্তী রুপে এখনও
প্রচলিত আছে। সিলেটের লোক বিশ্বাস মতে, ঝরণায় প্রবাহিত পানি জমজমের পানির
সদৃশ, রোগীরা এই পানি পান করে আরোগ্য লাভ করে। অনেক কাল পূর্বে দরগাহ
টিলায় শাহ জালাল এর বাসস্থান ও উপাসনা গৃহের উত্তর পূর্ব দিকে একটি পুকুর
ছিল। সিলেটের সর্বসাধারণ হিন্দু ও মুসলিম সকলেই ইহার জল ব্যবহার করত। শাহ
জালাল অজু গোসল সম্পর্কিত পানি ব্যবহারে পবিত্রতা বিষয়ে চিন্তিত হয়ে
দরগাহ টিলার পশ্চিমে একটি কুপ খনন আদেশ দেন। কুপ তৈরি হওয়ার পর আল্লাহর
কাছে প্রার্থনা করলেন আল্লাহ যেন এই কুপটিকে জমজমের পানির সাথে সম্পর্ক
যুক্ত করেন। এরপর তিনি নিজ হাতের লাটি দিয়ে কুপের মাটিতে ইসলামী বাক্য
(বিছমিল্লাহ) পড়ে আঘাত করলে সাথে সাথে কুপের মধ্যে পানি প্রবাহিত হতে
লাগলো এবং সোনা ও রুপার রঙ্গের মাছের জন্ম হল। যা আজও এই কুপের মধ্যে দেখতে
পাওয়া যায়। এরপর উক্ত কুপের চার পাশে দেওয়াল করে কুপের উত্তর পাশে দুটি
পাথর বসিয়ে দেয়ার পর পাথরের মধ্য হতে অনবরত পানি বইতে থাকে। পূর্ব কালে
যে পানি লোকে বিশ্বাস ও ভক্তি করে পান করতো। আজকাল ঐ ঝরনার পানি বোতলে করে
বিক্রি হয় ।
শাহ জালালের ব্যবহারিক দ্রব্যাদি
শাহ জালালের সমাধিতে সোনার কৈ, মাগুর
ইত্যাদি দরগাহের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও শাহ জালালের ব্যবহৃত বিভিন্ন
দ্রব্যাদি দর্শনার্থীদের দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। যার মধ্যে দরবেশের ব্যবহৃত
তলোয়ার, কাঠের তৈরি খড়ম, হরিণের চাম্রা দ্বারা নির্মিত নামাজের মোসল্লা,
তামার নির্মিত প্লেট এবং বাটি। উল্লেখ্য যে, তামার নির্মিত বাটি বা
পেয়ালায় আরবিতে কিছু কালাম লিখিত আছে। রোগমুক্তির উছিলা হিসেবে ঐ বাটিতে
পানি ঢেলে পান করলে আরোগ্য লাভ হয় বলে লোকের বিশ্বাস রয়েছে।
ভক্তি ও শ্রদ্ধা
কিংবদন্তী মতানুসারে শাহ জালাল মক্কা হতে আসার কালে তদীয় মুরশীদ কর্তৃক দেয়া এক মুঠো মাটি
সঙ্গে এনেছিলেন। ঐ মাটির সাথে সিলেটের মাটির স্বাদ, গন্ধ ও বর্ণ যখন মিশে
গেল, স্বীয় মুরশীদের আদেশ অনুযায়ী এখানেই তিনি আস্তানা গড়েন এবং ধর্ম
প্রচার করেন। সিলেটের মানুষের কাছে তিনি শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে আছেন এবং তাঁর
পূণ্যময় প্রত্যেক স্মৃতি গুলো আজও অত্র অঞ্চলের মানুষ ভক্তি ও শ্রদ্ধার
সাথে মান্য করে। লোক বিশ্বাস আছে; শাহ জালালের কবর জিয়ারতের উছিলায় মনের
বাসনা পূর্ণ হয়। তাই প্রতি দিন হাজার হাজার মানুষ তাঁর দরগাহ'তে আসা
যাওয়া করে এবং তাঁকে অসিলা বা উপলক্ষ করে বিভিন্ন উদ্দেশ্য হাসিলে জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা নিবেদন করে ।এছাড়া বাংলাদেশের ভেতর ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রচুর বাংলাদেশী খোদার করুনা হিসেবে মান্য করে। বাংলাদেশ সহ বিদেশেও শাহ জালালের নামে অগণিত প্রতিষ্ঠান স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মক্তব, মসজিদ, হোস্টেল, শহর, দোকান ও বাজার ইত্যাদির নাম করণ করা হয়েছে।
এভাবেই তাঁর ভক্তরা ভক্তি ও শ্রদ্ধা ভরে শাহ জালালের সিলেট আগমনকে উপলক্ষ
করে তাঁর স্মৃতিকে যুগের পর যুগ স্মরণে ধারণ করে আসছেন। তাঁর স্মরণে লিখা
হয়েছে অগণিত পুথিপুস্তক, গজল, কবিতা ও গান।
তাসাউফের বা তরীকতের পরিচয়- শরীয়ত, তরীকত, মারিফত, হাকিকত 28 জুলাই, 2013, 8:58 AM-এ তাসাউফের বা তরীকতের পরিচয় শরীয়ত, তরীকত, মারিফত, হাকিকত সুফীগণ পূর্নাঙ্গ ইসলামের ৪টি স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন । যেমন : ১. শরীয়ত। ২. তরীকত। ৩. হাকিকত। ৪. মা’রিফত। শরীয় তের পরিচয় : ইসলামী জীবন ব্যবস্থার যাবতীয় বিধানকে শরীয়ত বলা হয়। সর্বপ্রথম শরীয়তের পূর্ণ অনুসারী হতে হয়। শরীয়তের যাবতীয় বিধানের মধ্য দিয়ে সুফী তার প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রিত করে প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আত্মার অনুগত করেন। শরীয়তের পূর্ণ অনুসরণ ব্যতীত কেউ সুফী হতে পারবে না। জীবনের সকল দিককে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটি বাহ্যিক এবং অন্যটি অভ্যন্তরীন বা আধ্যাত্মিক। ইহলৌকিক জীবনের অভাব অভিযোগ প্রয়োজন ও গুরুত্ব এবং ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত এর বাহ্যিক ক্রিয়া পদ্ধতির রূপ শরীয়তের অন্তর্গত। শরা ,শব্দ হতে শরীয়ত শব্দটির উৎপত্তি। শরা’ অর্থ বিধি, ব্যবস্থা, পথ বিধান ইত্যাদি। জীবনের ব্যক্তিক ও সামাজিক দিকের বাহ্যিক রূপের যে বিধি বা নিয়ম, তাই শরীয়ত। এক কথায় 'কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াসের' উপর ভিত্তি করে যে জীবন ব্য...
পবিত্র আল কোরআন মহান আল্লাহ মানব জাতির হেদায়েতের জন্য নাযিল করেছেন। মহান আল্লাহ এই কোরআনে ইহকালে মানুষের দৈনন্দিন পথ চলার এবং পরকালের আমল সঙ্গে নেয়ার সার্বিক পথ সুনির্দিষ্টভাবে বাতলে দিয়েছেন। এ বিষয় নিয়ে কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হলো।০১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনুল কারীমে কতটি সূরা আছে? উত্তরঃ ১১৪টি। ০২) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরা র নাম কি? উত্তরঃ সূরা ফাতিহা।০৩) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরার নাম কি?উত্তরঃ সূরা বাকারা। ০৪) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে ছোট সূরার নাম কি?উত্তরঃ সূরা কাওছার। ০৫) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে বড় আয়াত কোনটি কোন সূরায়?উত্তরঃ সূরা বাক্বারার ২৮২ নং আয়াত। ০৬) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ আয়াত কোনটি? উত্তরঃ আয়াতুল কুরসী। (সূরা বাক্বারা ২৫৫ নং আয়াত। ০৭) প্রশ্নঃ ফরয নামাযান্তে কোন আয়াতটি পাঠ করলে, মৃত্যু ছাড়া জান্নাতে যেতে কোন বাধা থাকে না? উত্তরঃ আয়াতুল কুরসী। ০৮) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন্ সূরাটি পাঠ করলে কবরের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে?উত্তরঃ সূরা মুলক। (৬৭নং সূরা) ০৯) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কো...
শেখ আব্দুল কাদির আল জিলানী, মুহিইহ'দ-দীন, সুলতান আল সুফিবাদ, গাউস-ই-আযম [উল্লেখ্য গাউস একটি ফারসি শব্দ যার অর্থ ত্রাণকর্তা আর আযম অর্থ সবচেয়ে বড়, তাই কুরআন অনুযায়ী একমাত্র আল্লাহই তথাকথিত গাউসুল আযম।এবং অন্য কেউ তার শরিক না।] [১] পুরো নাম আল-সাইয়িদ মহিউদ্দীন আবু মুহাম্মদ আব্দুল কাদির আল-জিলানী আল-হাসানী ওয়াল-হুসানী জন্ম ১ম রমযান ৪৭০ হিজরী [২] বা মার্চ ১৭, ১০৭৮ [৩] ব্যবহারশাস্ত্র হাম্বেলি [৪] [৫] মৃত্যু ৮ রবিউল আউয়াল ৫৬১ হিজরী ≈ ফেব্রুয়ারি ১৪, ১১৬৬ সিই [৬] [৭] জন্মস্থান গিলন প্রদেশ , তাবারিস্তান , পারস্য [৮] কবর স্থান আব্দুল কাদির এর সমাধি , বাগদাদ , ইরাক পিতা আবু সালিহ মুসা আল-হাসানি মাতা উম্মুখ খায়ের ফাতিমা • • মদিনা • সাদিকা • মু'মিনাহ • মাহবুবা পুত্র (সকল) • সাফিউদ্দীন • শরীফুদ্দীন • আবু বকর • সিরাজুদ্দীন • ইয়াহয়িয়া • মুসা • মুহাম্মদ • ইব্রাহিম • আব্দুল্লাহ • আব্দুর রহমান • আবু নাসির মুসা উত্তরপুরূষ শেখ অন্যান্য উপাধী • শাইখ ("নেতা") • আব্দ আল-কাদির ("সর্বময় ক্ষমতার গোলাম...
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (আরবী: بِسْمِ الّٰلهِ الرَّحْمٰنِ الرَحِيْمِ ) একটি আরবী বাক্যবন্ধ যার অর্থ পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে ।, সংক্ষেপে বলা হয় বিসমিল্লাহ্ । পবিত্র কুরআন শরীফের ১১৪টি সূরার মধ্যে সূরা তওবা ব্যতিরেকে অন্য বাকি ১১৩টি সূরা শুরু করা হয়েছে "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম" দিয়ে। এছাড়া হাদীস থেকে জানা যায়, ইসলামের নবী মুহাম্মাদ প্রতিটি কাজ শুরু করার আগে "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম" বলতেন। অনেক কাজে "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম" বলা বা লেখার নির্দেশনা রয়েছে। বিধানগত বিচারে এটা মাসনূন বা মুস্তাহাব হলেও এর তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর।বিসমিল্লাহ লেখার ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি বিসমিল্লাহ লেখার ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম কোরআনে কারিমের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত। যার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অপরিহার্য। হাদিসে বলা হয়েছে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ ও মহৎ কাজ বিসমিল্লাহির রাহমানির রা...
উত্তর: প্রতিটি হরফকে তার নিজ নিজ মাখরাজ থেকে সিফাতসহ উচ্চারণ করে পড়াকে তাজবীদ বলে। কোরআন মজীদের শব্দাবলী হচ্ছে, ইলমে তাজবীদের আলোচ্য বিষয়। প্রশ্ন: ইলমে তাজবীদ শিক্ষা করা কি? এবং এর ফায়দা কি? উত্তর: ইলমে তাজবীদ শিক্ষা করা ফরজে কিফায়া। কোরআন মজীদ তিলাওয়াতে ভুল-ভ্রান্তি হওয়া থেকে যুবানকে রক্ষা করা হচ্ছে, তার ফায়দা। তাজবিদ শব্দের অর্থ বিন্যাস করা, সাজানো । তাজবীদ শব্দের শাব্দিক অর্থ উন্নত করণ, উৎকর্ষ সাধন। পরিভাষায় বিশুদ্ধরূপে কুরআন পাঠের নীতিমালাকে তাজবীদ বলা হয়। যথা : কোথায় কত আলিফ টান হবে, কোথা গুন্না হবে, কোথায় গুন্নাহ হবে না, র লাম কোথায় মোটা হবে কোথায় চিকন হবে ইত্যাদি বিষয়ক আলোচনা সম্বলিত নীতিমালাই হলো তাজবীদ। আরো বিস্তারিত জানার জন্য অভিজ্ঞ কোনো কারী সাহেবের দ্বারস্থ হোন। প্রশ্ন: গুন্নাহ কাকে বলে? উত্তর: কুরআন মজিদ সহিহ-শুদ্ধভাবে তিলাওয়াতের একটি নিয়ম হলো গুন্নাহ। নাক ব্যবহার করে উচ্চারণ করাকে গুন্নাহ বলে। প্রশ্ন: গুন্নাহর হরফ কয়টি? উত্তর: গুন্নাহর হরফ দুটি। প্রশ্ন: গুন্নাহ করা কী? উত্তর: গুন্নাহ করা ওয়াজিব। প্রশ্ন: সূরা ...
mvZ‡Z‰Zqv byixqv Rv‡g gmwR` e¨e¯’cbv bxwZgvjv 2019 প্রস্তাবনাঃ মসজিদ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় যোগ্য যারা সাধারণ অর্থে মসজিদ মুসলমানের নামাজের ঘর হলেও মসজিদ শুধু নামাজের স্থান নয়, বরং মুসলমানদের সব ধরনের কাজকর্মের কেন্দ্রবিন্দু। মসজিদ মুসলমানদের শিক্ষালয়, পরামর্শ সভাস্থল ও সমাজ-সংস্কৃতির উৎসস্থল। শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর যে ইসলামিস রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সে রাষ্ট্রের সচিবালয় ছিল মসজিদে নববী। তিনি সেখানে লোকদের কোরআন শিক্ষা দিতেন, মানুষকে আধ্যাত্মিকভাবে পরিশুদ্ধ করতেন, জ্ঞান শিক্ষা দিতেন, মামলা-মোকাদ্দমার বিচার করতেন। ইসলামি রাষ্ট্রের সংহতি ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পরামর্শ সভা করতেন, বিয়ে পড়াতেন, এমনকি যুদ্ধের কৌশল নিয়ে সাহাবিদের সঙ্গে আলোচনা করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) মসজিদে এমন আরও অসংখ্য কাজ করেছেন বলে হাদিসে উল্লেখ আছে। বর্তমানে আমাদের সমাজে মসজিদ আছে, মিম্বর আছে, মসজিদে নামাজও হচ্ছে। কিন্তু মসজিদের কর্মসূচিগুলো দিনে দিনে সংকুচিত হয়ে গেছে। মসজিদগুলো ধীরে ধীরে প্রাণহীন হয়ে যাচ্ছে। মসজিদগুল...