ইতিকাফের তাৎপর্য, উদ্দেশ্য ও বিধান
: বিশেষ নিয়্যতে বিশেষ অবস্থায় আল্লাহ তা'আলার আনুগত্যের
উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে।
আয়িশা রাদিআল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন
রমাদানের শেষ দশ রাত আসত, তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমরে
কাপড় বেঁধে নামতেন (অর্থাৎ বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে
থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহীহ বুখারী) ইতিকাফ একটি মহান ইবাদত,
মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি
বছরই ইতিকাফ পালন করেছেন। দাওয়াত, ট্রেনিং, শিক্ষা এবং জিহাদে ব্যস্ত থাকা
সত্ত্বেও রমজানে তিনি ইতিকাফ ছাড়েননি। ইতিকাফ ঈমানী ট্রেনিং এর একটি
ইনস্টিটিউশন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিদায়েতি আলোর
একটি প্রতীক। ইতিকাফরত অবস্থায় বান্দা নিজেকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য দুনিয়ার
অন্যান্য সকল বিষয় থেকে আলাদা করে নেয়। ঐকান্তিকভাবে মশগুল হয়ে পড়ে আল্লাহর নৈকট্য
অর্জনের নিরন্তর সাধনায়। ইতিকাফ ঈমান বৃদ্ধির একটি মূখ্য সুযোগ। সকলের উচিত
এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের ঈমানী চেতনাকে প্রাণিত করে তোলা ও উন্নততর
পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করা।
ইতিকাফ অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে কি আচরণ হবে তা বলতে গিয়ে
আল্লাহ তা'আলা বলেন ঃ ‘‘আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফকালে স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করো
না।’’ (সূরা বাকারা ঃ ১৮৭) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসংখ্য
হাদিস ইতিকাফ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্য হতে ফজিলত সম্পর্কিত কিছু হাদীস
নিম্নে উল্লেখ করা হল।
আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন ঃ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষের দশকে ইতিকাফ করেছেন, ইন্তেকাল
পর্যন্ত। এরপর তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন। [সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম]। আমি
(প্রথমে) এ রাতের সন্ধানে প্রথম দশে ইতিকাফ পালন করি। অতঃপর ইতিকাফ পালন করি মাঝের
দশে। পরবর্তীতে ওহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হয় যে, এ রাত শেষ দশে রয়েছে। সুতরাং
তোমাদের মাঝে যে (এ দশে) ইতিকাফ পালনে আগ্রহী, সে যেন তা পালন করে। লোকেরা তার
সাথে ইতিকাফ পালন করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন আমাকে তা এক
বেজোড় রাতে দেখানো হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে, আমি সে ভোরে কাদা ও মাটিতে সাজদা
দিচ্ছি। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একুশের রাতের ভোর যাপন
করলেন, ফজর পর্যন্ত তিনি কিয়ামুল্লাইল করেছিলেন। তিনি ফজর আদায়ের জন্য দন্ডায়মান
হয়েছিলেন।
তখন আকাশ ছেপে বৃষ্টি নেমে এল, এবং মসজিদে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি
পড়ল। আমি কাদা ও পানি দেখতে পেলাম। ফজর সালাত শেষে যখন তিনি বের হলেন, তখন তার
কপাল ও নাকের পাশে ছিল পানি ও কাদা। সেটি ছিল একুশের রাত। [সহীহ বুখারি]