ইতিকাফের শর্ত


 
ইতিকাফের শর্ত 
১. মুসলমান হওয়া ২. পাগল না হওয়া ৩. বালেগ
হওয়া ৪. নিয়ত করা ৫. ফরজ গোসলসহ হায়েজ
নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া ৬. মসজিদে
ইতিকাফ করা (ইমাম মালেক রহ:-এর মতে
জামে মসজিদে ইতিকাফ করা উত্তম। ইমাম
আবু হানিফা ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ:-এর
মতে, যে মসজিদে জামাতসহকারে নামাজ হয়
না, সে মসজিদে ইতিকাফ জায়েজ নেই।) ৭.
রোজা রাখা।

ইতিকাফকারীর কর্তব্য:
অনর্থক কথা ও কাজ পরিহার করে সালাত,
কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার,
ইস্তিগফার, দুআ ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগীতে
লিপ্ত থাকা। তবে পরিবার-পরিজন বা অন্য
কারো সাথে অতিপ্রয়োজনীয় কথা বলতে দোষ
নেই। ইতিকাফকারী নিজ অন্তরকে সর্বদা
আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত রাখতে চেষ্টা করবে।
নিজের অবস্থার দিকে খেয়াল করবে।
আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালনের ব্যাপারে
নিজের অলসতা ও অবহেলা করার কথা মনে
করবে। নিজের পাপাচার সত্ত্বেও আল্লাহ যে
কত নেয়ামত দিয়েছেন তা স্মরণ করে তার
প্রতি কৃতজ্ঞ হবে। গভীরভাবে আল্লাহর
কালাম অধ্যয়ন করবে। খাওয়া-দাওয়া, নিদ্রা
ও গল্প গুজব কমিয়ে দেবে। কেননা এ সকল
কাজ-কর্ম আল্লাহর স্মরণ থেকে অন্তরকে
ফিরিয়ে রাখে।
অনেকে ইতিকাফকে অত্যধিক খাওয়া-দাওয়া
ও সাথীদের সাথে গল্প-গুজব করে সময়
কাটানোর সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন।
এতে ইতিকাফের ক্ষতি হয় না বটে তবে
আল্লাহর রাসূলের ইতিকাফ ছিল অন্য রকম।
ইতিকাফ অবস্থায় শরীরের কিছু অংশ যদি
মসজিদ থেকে বের করা হয় তাতে দোষ নেই।
নবী করীম রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইতিকাফ অবস্থায় নিজ মাথা মসজিদ থেকে
বের করতেন। তখন আম্মাজান আয়েশা (রা.)
তাঁর মাথার চুল বিন্যস্ত করে দিতেন।
ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদ থেকে বের হওয়ার
বিধান :
ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদ থেকে বের হওয়া
তিন ধরনের হতে পারে :
এক:- মানবীয় প্রয়োজনে বের হওয়ার।
এতে অনুমতি আছে। যেমন পায়খানা,
প্রস্রাবের জন্য, খাওয়া-দাওয়ার জন্য,
পবিত্রতা অর্জনের জন্য। তবে শর্ত হল এ সকল
বিষয় যদি মসজিদের গণ্ডির মাঝে সেরে
নেওয়া যায় তবে মসজিদ থেকে বের হওয়া
যাবে না।
দুই:-নেক আমলের জন্য।
এমন সকল নেক আমল বা ইবাদত-বন্দেগীর জন্য
বের হওয়া যাবে না যা তার জন্য অপরিহার্য
নয়। যেমন রোগীর সেবা করা, জানাজাতে
অংশ নেওয়া ইত্যাদি।
তিন:-এতিকাফ বিরুদ্ধী কাজে বের হওয়া।
এমন সকল কাজের জন্য মসজিদ থেকে বের
হওয়া যাবে না যা ইতিকাফের বিরোধী। যেমন
ক্রয়-বিক্রয়, চাষাবাদ ইত্যাদি। ইতিকাফ
অবস্থায় এ সকল কাজের জন্য মসজিদ থেকে
বের হলে ইতিকাফ বাতিল হয়ে যায়।
ইতিকাফ পালনের সময়টুকুতে বেশি বেশি
করণীয় বিষয়াদি তুলে ধরছি—
১| নামায আদায় করবে। যত বেশী পারা যায়
তত সুন্নাৎ, নফল ইত্যাদি নাময আদায় করতে
হবে।
২| বেশী বেশী আল্লাহ্র কাছে দুআ-মুনাজাত
করবে।
৩| আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চাইবে।
৪| কলেমা ও তাকবীর পড়বে।
৫| জিকির করবে।
যেমন— সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ
ইত্যাদি।
৬| মুহাম্মদ (সা.)-এর রূহের প্রতি দুরুদ পাঠ এবং
মাগফিরাত কামনা করবে।
৭| যথাসম্ভব বেশী বেশী কুরআন তিলওয়াত
করবে।
৮| কুরআন তিলাওয়াতের পাশা-পাশি তাফসীর
পড়তে হবে। হাদীস পড়বে।
কোনো ব্যাপারে চরমপন্থা বা গোঁড়ামী করা
যাবে না।
হাদীসে এসেছে যে, একদিন মুহাম্মদ (সা.) এক
ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা
করলেন, কী ব্যাপার? সে বলল যে, সে আবু
ইসরাইল এবং সে শপথ করেছে যে, সে দাঁড়িয়ে
থাকবে এবং বসবে না। কথা বলবে না, ছাউনির
বাইরে যাবে না এবং সে রোজা রাখবে।
অতঃপর মুহাম্মদ কোনো একজনকে বললেন,
তাকে কথা বলতে বল, বসতে বল এবং তাকে
রোজা সম্পূর্ণ করতে বল।’ (বুখারী, হাদীস নং
৬৭০৪)
ইতিকাফের কিছু মাসয়ালা:
* রমজানের ইতিকাফ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ
কিফায়া। মহানবী সা: সর্বদাই রমজানের
ইতিকাফ করেছেন, কখনো ছাড়েননি। তাই
মহল্লার কেউই ইতিকাফ না করলে সবাই
গুনাহগার হবেন।
* ওয়াজিব ও সুন্নাত ইতিকাফ রোজা থাকা
অবস্থায় করা জরুরি।
* ইতিকাফরত অবস্থায় যেকোনো ধরনের যৌন
কাজ হারাম।
* প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার মতো মানবিক
প্রয়োজন ছাড়া ইতিকাফরত ব্যক্তির মসজিদ
থেকে বের হওয়া জায়েজ নয়।
* যদি মসজিদে খানা পৌঁছে দেয়ার মতো
কেউ না থাকে তাহলে খাবারের জন্য
বাড়িতে যাওয়া জায়েজ আছে।
* যে মসজিদে ইতিকাফ করা হয় সেখানে যদি
জুমার নামাজ না পড়া হয় তাহলে জুমার
নামাজ পড়ার জন্য জামে মসজিদে যাওয়া
জায়েজ আছে। তবে এতটুকু আগে যেতে হবে,
সেখানে পৌঁছে যেন খুতবার আগে সুন্নাত
পড়া যায়। নামাজ শেষ হওয়ামাত্র ইতিকাফের
মসজিদে ফিরে যেতে হবে।
* ভুলে ইতিকাফের মসজিদ থেকে বাইরে
বেরোলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।
* ইতিকাফে বসে অপ্রয়োজনীয় পার্থিব
কাজে লিপ্ত হওয়া মাকরুহ তাহরিমি। যেমন
বিনা প্রয়োজনে মসজিদে বসে কোনো
জিনিস কেনাবেচা করা। অবশ্য গরিব কেউ
যদি ইতিকাফে বসেন এবং বেচাকেনা তার
জন্য জরুরি হয়ে পড়ে তাহলে তিনি বেচাকেনা
করতে পারবেন। তবে পণ্য মসজিদের ভেতর
নেয়া যাবে না।
* ইতিকাফের সময় কোনো কথাবার্তা না বলে
একেবারে চুপচাপ বসে থাকাও জায়েজ নেই।
অবশ্য জিকির, কুরআন তিলাওয়াত প্রভৃতির
কারণে ক্লান্ত হয়ে চুপচাপ বসে বসে আরাম
করা জায়েজ আছে। এ সময় ভালো ও শালীন
কথাবার্তা বলা জায়েজ।
* পুরোপুরি দশ দিন ইতিকাফ করার জন্য ২০
রমজান সূর্যাস্তের আগে ইতিকাফের নিয়তে
মসজিদে প্রবেশ করতে হবে। কারণ সূর্য ডোবার
সাথে সাথে একুশ তারিখ শুরু হয়ে যায়। সূর্য
ডোবার পর সামান্য সময়ও যদি ইতিকাফের
নিয়ত ছাড়া অবস্থান করেন তাহলে সুন্নাত
অনুযায়ী তার ইতিকাফ হবে না।
* ইতিকাফের জন্য রোজা শর্ত। আল্লাহ না
করুন কারো রোজা যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে
তার ইতিকাফও নষ্ট হয়ে যাবে।
* ইতিকাফকারী কোনো অসুস্থ ব্যক্তির
খোঁজখবর নেয়ার জন্য মসজিদ থেকে
বেরোনো জায়েজ নেই। নিজের প্রাকৃতিক
প্রয়োজন পূরণের জন্য বেরিয়েছেন, তখন তিনি
যদি কোনো রোগীর খোঁজখবর নেন তা
জায়েজ আছে। তবে সেখানে দেরি করতে
পারবেন না।
* রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নাত।
তবে যখনই মসজিদে অবস্থান করা হয় তখন
ইতিকাফের নিয়তে অবস্থান করা মুস্তাহাব। *
মনে মনে ইতিকাফের নিয়ত করাই যথেষ্ট।
অবশ্য মুখে উচ্চারণ করাও ভালো।
* দশ দিনের নিয়তে ইতিকাফ শুরুর পর কেহ তা
কোনো কারণে ভঙ্গ করে ফেললে বেশির ভাগ
আলেমের মতে তার যে ক’দিন ইতিকাফ নষ্ট
হবে পরে সে ক’দিনের কাজা আদায় করে
নেবেন।


মহিলাদের ইতিকাফ :
মহিলারা ঘরের যে অংশে সাধারণত নামাজ
পড়া হয় সেই রকম কোনো অংশকে ইতিকাফের
জন্য নির্দিষ্ট করে দশ দিন কিংবা কম সময়ের
জন্য ইতিকাফের নিয়ত করে সেই জায়গায় বসে
ইবাদত বন্দেগি শুরু করবেন। শরঈ কোনো ওজর
ছাড়া সেখান থেকে উঠে অন্যত্র না যাওয়া।
(রাতে সেখানেই ঘুমাবেন)। ইতিকাফ অবস্থায়
যদি মহিলাদের মাসিক শুরু হয়ে যায় তাহলে
ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।
আল্লাহ আমাদের সহিহ তরীকায় ইতিকাফ
করার তাউফিক দিন।

প্রশ্ন:

১। ইতিকাফের সর্বনিম্ন সময় কতটুকু? আমি কি অল্প কিছু সময়ের জন্য ইতিকাফ করতে পারি? নাকি একসাথে কয়েকদিনের জন্য ইতিকাফ করতে হবে?
উত্তর
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
ইতিকাফের সর্বনিম্ন সময়ের ব্যাপারে আলেমগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে।অধিকাংশআলেমের মতে ইতিকাফের সর্বনিম্ন সময় এক মুহূর্তের জন্যও হতে পারে। এটি ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ি ও ইমাম আহমাদের মাযহাব।দেখুন:আদ্‌দুরুলমুখতার(১/৪৪৫), আলমাজমু (৬/৪৮৯), আলইনস্বাফ (৭/৫৬৬)।
ইমাম নববী আলমাজমূ (৬/৫১৪) গ্রন্থে বলেছেন:
“আর ইতিকাফের সর্বনিম্ন সময় সম্পর্কে অধিকাংশ আলেম দৃঢ়তার সাথে যে মত ব্যক্ত করেছেন সেটাই সঠিক মত। তা হচ্ছে-ইতিকাফের জন্য মসজিদে অবস্থান করা শর্ত।সেটা বেশি সময়ের জন্য হতে পারে, কম সময়ের জন্যেও হতে পারে। এমনকি সামান্য সময় বা এক মুহূর্তের জন্যেও হতে পারে।”সমাপ্ত ও সংক্ষেপিত।
এ মতের পক্ষে তাঁরা কয়েকটি দলীল পেশ করেছেন :
১. ইতিকাফ শব্দেরআভিধানিকঅর্থ হচ্ছে-অবস্থানকরা।এটিদীর্ঘসময়ের জন্যেও হতে পারে, অল্পসময়েরজন্যেওহতেপারে। শরিয়তের এমনকোনদলীলপাওয়াযায়নাযানির্দিষ্টকোনসময়সীমার মধ্যে ইতিকাফকেসীমাবদ্ধ করে দিবে।
ইবনে হাযম বলেছেন:
“আরবী ভাষায়ইতিকাফ শব্দের অর্থ-অবস্থান করা। তাই আল্লাহর মসজিদে তাঁর নৈকট্য লাভের আশায় যে কোন অবস্থানই হল ইতিকাফ। সেটা কম সময়ের জন্যে হোক অথবা বেশি সময়ের জন্যে হোক। যেহেতু কুরআন ও সুন্নাহ নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা বা সময় নির্ধারণ করেনি”সমাপ্ত। [আল-মুহাল্লা (৫/১৭৯)]
২. ইবনে আবু শাইবাহ ইয়ালা ইবনে উমাইয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেন:“আমি মসজিদে অল্প কিছু সময় অবস্থান করলেও সেটা আমি ইতিকাফের নিয়্যতে অবস্থান করি।”ইবনে হাযম‘আল-মুহাল্লা’ গ্রন্থে (৫/১৭৯) এই রেওয়ায়েতদিয়েদলীল পেশ করেছেন এবং হাফেজ ইবনে হাজার ‘ফাতহুল বারী’গ্রন্থে তা উদ্ধৃতকরেছেন; কিন্তু কোন মন্তব্য করেননি। রেওয়ায়েতটিতে الساعة (ঘন্টা) দ্বারা বর্তমান পরিভাষায় যা বুঝি ৬০ মিনিট সেটা উদ্দেশ্য নয়। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- কিছু সময়।
কিছু কিছু আলেমের মতে ইতিকাফেরসর্বনিম্ন সময় একদিন। ইমাম আবু হানিফা থেকে ও মালেকি মাযহাবের কোন কোন আলেম থেকে এ ধরনের একটি বর্ণনা পাওয়া যায়।
শাইখ ইবনে বায ‘মাজমুউল ফাতাওয়া’গ্রন্থে (১৫/৪৪১) বলেছেন:“ইতিকাফ হলো আল্লাহতাআলার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করা, সময় কম হোক অথবা বেশি হোক। কারণ আমার জানা মতে এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না যা একদিন, দুইদিন বা এর চেয়ে বেশী দিনের জন্য ইতিকাফ করাকে নির্দিষ্ট করবে। ইতিকাফশরিয়তসম্মত ইবাদত।তবে কেউ যদি মান্নত করে তখন মান্নতের কারণে তার উপর ইতিকাফ করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। ইতিকাফের বিধান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।”

  ২: ই‘তিকাফ কী? এর হুকুম কী?

উত্তর : দুনিয়াবী সকল কাজ থেকে মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ আল্লাহর ইবাদতের জন্য মসজিদে অবস্থান করাকে ই‘তিকাফ বলা হয়ে থাকে।
ইতেকাফ করা সুন্নাত।

প্রশ্ন ৩ : ই‘তিকাফের উদ্দেশ্য কী?

উত্তর : দুনিয়াদারীর ঝামেলা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হওয়া, বিনয় নম্রতায় নিজেকে আল্লাহর দরবারে সমপর্ণ করা এবং বিশেষ করে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করার সুযোগ লাভ করাই ই‘তিকাফের উদ্দেশ্য।

প্রশ্ন ৪: ই‘তিকাফের জন্য কী কী শর্ত পূরণ আবশ্যক?

উত্তর : (ক) মুসলমান হওয়া, (খ) জ্ঞান থাকা, (গ) বড় নাপাকী থেকে পবিত্র থাকা, গোসল ফরয হলে গোসল করে নেয়া। (ঘ) মসজিদে ই‘তিকাফ করা।
কাজেই কাফির-মুশরিক, অবুঝ শিশু, পাগল ও অপবিত্র লোক এবং হায়েয-নিফাস অবস্থায় নারীদের ই‘তিকাফ শুদ্ধ হবে না।

প্রশ্ন ৫ : ই‘তিকাফের রুকন কয়টি ও কী কী?

উত্তর : এর রুকন ২টি : (ক) নিয়ত করা, (খ) মাসজিদে অবস্থান করা, নিজ বাড়ীতে বা অন্য কোথাও ই‘তিফাক করলে তা শুদ্ধ হবে না।

প্রশ্ন ৬ : মেয়েরা কি নিজ বাসগৃহে ই‘তিকাফ করতে পারবে?

উত্তর : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় নারীরা মসজিদে ই‘তিকাফ করতেন।

প্রশ্ন ৭ : ই‘তিকাফ অবস্থায় কী কী কাজ নিষিদ্ধ?

উত্তর : তাহল :
(১) স্বামী স্ত্রীর মিলন, স্ত্রীকে চুম্বন ও স্পর্শ করা,
(২) মাসজিদ থেকে বের হওয়া। বেচাকেনা, চাষাবাদ, এমনকি রোগীর সেবা ও জানাযায় অংশ গ্রহণের জন্যও মাসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয নয়। বের হলে ইতেকাফ বাতিল হয়ে যাবে।

প্রশ্ন ৮ : বিশেষ প্রয়োজনে ই‘তিকাফ অবস্থায় মাসজিদ থেকে বের হতে পারবে কি?

উত্তর : মাসজিদের গণ্ডির মধ্যে ব্যবস্থা না থাকলে শুধুমাত্র মানবিক প্রয়োজনে প্রস্রাব-পায়খানা, খাওয়া-দাওয়া ও পবিত্রতা অর্জনের জন্য মাসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয আছে,
দলীল :
তবে মাসজিদে এসব ব্যবস্থা থাকার পর যদি কেউ বাইরে যায় তাহলে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

ই‘তিকাফ অবস্থায় এক রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রী সাফিয়া রাদ্বি আল্লাহু আনহা কে ঘরে পৌঁছিয়ে দিয়ে এসেছিলেন। (বুখারী)

প্রশ্ন ৯ : কী কী কারণে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়?

উত্তর : নিু বর্ণিত যে কোন একটি কাজ করলে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১. স্বেচ্ছায় বিনা প্রয়োজনে মাসজিদ থেকে বের হলে
২. কোন শির্ক বা কুফরী কাজ করলে।
৩. পাগল বা বেঁহুশ হয়ে গেলে।
৪. নারীদের হায়েয-নিফাস শুরু হয়ে গেলে।
৫. স্ত্রীসহবাস বা যে কোন প্রকার যৌন সম্ভোগ করলে।

প্রশ্ন ১০ : ই‘তিকাফ অবস্থায় কী কী কাজ করা বৈধ অর্থাৎ মুবাহ?

উত্তর : ই‘তিকাফকারীদের জন্য নিুোক্ত কাজ করা বৈধ :
১. একান্ত প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা।
২. চুল আঁচড়ানো, মাথা মুণ্ডানো, নখ কাটা, শরীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করা, এবং সুগন্ধি ব্যবহার ও উত্তম পোষাক পরিচ্ছদ পরিধান করা।
৩. মসজিদের ভিতরে পানাহার করা, ঘুমানো এবং বিশেষ প্রয়োজনে বিবাহের কাবিননামা ও ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিও সম্পাদন করা যাবে।

প্রশ্ন ১১ : ই‘তিকাফকারীর দায়িত্ব ও করণীয় কাজ কী কী? এবং তাঁর কী ধরনের ইবাদত করা উচিত?

উত্তর : উত্তম হল নফল ইবাদত বেশী বেশী করা। যেমন সলাত আদায়, কুরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন করা, যিক্র-আযকার ও তাসবীহ, তাহলীল করা অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, তাওবাহ-ইস্তেগফার, দু‘আ, দুরূদ ইত্যাদি ইবাদতে সর্বাধিক সময় মশগুল থাকা। তাছাড়া শরীয়া বিষয়ক ইলম চর্চা করা।
পার্থিব ব্যাপারে কথাবার্তা বলা, অনর্থক গল্পগুজব ও আলোচনা থেকে বিরত থাকা উচিত, তবে পারিবারিক কল্যাণর্থে বৈধ কোন বিষয়ে অল্পস্বল্প কথাবার্তা বলার মধ্যে কোন দোষ নেই।

প্রশ্ন ১২ : ই‘তিকাফ শুধুই রমযান মাসে? নাকি অন্য সময়ও করা যায়?

উত্তর : বৎসরের যে কোন সময় ই‘তিকাফ করা যায়। এজন্য নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট কোন দিন তারিখ নেই। যিনি যখন চাইবেন তখনি ই‘তিকাফ করতে পারবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার শাওয়াল মাসেও ই‘তিকাফ করেছেন। ‘উমার রাদিআল্লাহু আনহু একবার মাত্র এক রাত ই‘তিকাফ করেছিলেন।

প্রশ্ন ১৩ : ই‘তিকাফের জন্য কোন্টি উত্তম সময়?

উত্তর : রমযান মাস হচ্ছে ই‘তিকাফের উত্তম সময়। আরো উত্তম হচ্ছে রমযানের শেষ দশদিন ই‘তিকাফ করা।

প্রশ্ন ১৪ : সর্বনিু কী পরিমাণ সময় ই‘তিকাফ করা যায়?

উত্তর : এটি একটি মতবিরোধপূর্ণ মাসআলা। শাইখাইনের মতে ই‘তিকাফের ন্যূনতম সময়সীমা ১দিন। কেননা, হানাফী মতে ই‘তিকাফের জন্য রোযা শর্ত। আর রোযা ১ দিনের কমে পূর্ণ হয় না।

প্রশ্ন ১৫ : ই‘তিকাফ কখন শুরু ও শেষ করব?

উত্তর : ফযরের সলাত আদায় করে বা সূর্যাস্তের পর ই‘তিকাফে প্রবেশ করা সুন্নাত/মুস্তাহাব। আর শেষ করবে ঈদের চাঁদ দেখা গেলে।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটিই করতেন।

প্রশ্ন ১৬ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার ই‘তিকাফ করেছেন?

উত্তর : প্রত্যেক রমাযানেই তিনি শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমযানে তিনি ই‘তিকাফ করেছিলেন ২০ দিন। এভাবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কোন বছরই তিনি ই‘তিকাফ থেকে বিরত থাকেননি। (বুখারী)

প্রশ্ন ১৬ : ই‘তিকাফ কত প্রকার ও কী কী?

উ: ইসলামী শরীয়তে ই‘তিকাফ ৩ প্রকার।
(ক) ওয়াজিব ই‘তিকাফ : ওলামায়ে কেরামের ঐকমত্যে ওয়াজিব ই‘তিকাফ হলো মানতের ই‘তিকাফ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“ তারা যেন তাদের মানৎ পূর্ণ করে।” (সূরা হাজ্জ : ২৯)
(খ) সুন্নাত ই‘তিকাফ : রমযানের শেষ ১০ দিনের ই‘তিকাফ। সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। যেমন :
(গ) মুস্তাহাব ই‘তিকাফ : উল্লেখিত দু’প্রকার ব্যতীত বাকী সব মুস্তাহাব ইতেকাফ।

মহিলাদের ইতিকাফ সংক্রান্ত বিবিধ মাসয়ালা
রমজানের শেষ দশকে শবেকদরের খোঁজে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইতিকাফ করতেন। একাধিক হাদিসে বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ সন্তুষ্টির নিয়তে যে ব্যক্তি মাত্র একদিন ইতিকাফ করবে আল্লাহতায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিনটি পরিখার সমান দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন।
রমজানের শেষ দশকে শবেকদরের খোঁজে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইতিকাফ করতেন। একাধিক হাদিসে বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ সন্তুষ্টির নিয়তে যে ব্যক্তি মাত্র একদিন ইতিকাফ করবে আল্লাহতায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিনটি পরিখার সমান দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। যে পরিখাগুলোর প্রতিটির দূরত্বই আসমান-জমিনের মধবর্তী দূরত্বের সমান। ইতিকাফ শুধু পুরুষের জন্য নয়। নারীরাও কিন্তু ইতিকাফ করতে পারেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সহধর্মিণীরা ইতিকাফ করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত নবী করিম (সা.) তার ওফাত পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ করতেন। তার ওফাতের পর তার স্ত্রীরা ইতিকাফ করেছেন। -সহিহ বোখারি: ২০২৬ ও সহিহ মুসলিম: ১১৭২
মাসয়ালা: মহিলাদের নামাজের স্থান তাদের ঘরের অন্দরমহল, মসজিদ নয়। কিন্তু মহিলারা সওয়াবের ক্ষেত্রে ঘরে নামাজ পড়ে ও ঘরে ইতিকাফ করে পুরুষদের মসজিদে নামাজ পড়ার সমপরিমাণ সওয়াবের অধিকারী বলে সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ অর্থে মহিলাদের ঘরকে মসজিদের সাদৃশ্য আখ্যা দেওয়া হয়েছে। যেন মহিলারা বেশি সওয়াব হাসিল করার আশায় মসজিদে আসার জন্য উদগ্রিব না হয়। মসজিদে গিয়ে শেষ ১০ দিন ইতিকফ সুন্নতে মোয়াক্কাদার হুকুম পুরুষদের জন্য, মহিলাদের জন্য নয়। সুতরাং মহিলারা চাই ঘরে ইতিকাফ করুক চাই মসজিদে পুরুষদের দায়িত্ব আদায় হবে না। তবে পুরুষদের মধ্যে একজনও যদি মসজিদে ইতিকাফ করে তাহলে গ্রামবাসীর পক্ষ হতে তা আদায় হয়ে সবাই দায়মুক্ত হয়ে যাবে। -সহহি বোখারি, হাদিস: ২০৩৩, উমদাতুল কারী: ১১/১৪৮, বাদায়েউস সানায়ে: ২/১১৩, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৩/১৪৫

মাসয়ালা:
মহিলারা ঘরে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের জন্য নির্ধারিত স্থানে ইতিকাফ করবেন। যদি আগে থেকেই ঘরে নামাজের জন্য কোনো স্থান নির্ধারিত না থাকে তাহলে ইতিকাফের জন্য একটি স্থান নির্ধারিত করে নেবেন। সেখানেই ইতিকাফ করবেন। হেদায়া: ১/২৩০, আলমগীরি: ১/২১১
মাসয়ালা: রমজানের (শেষ দশকের ইতিকাফ পুরুষের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া, তবে নারীদের জন্য তা মুস্তাহাব।
মাসয়ালা: বিবাহিত নারীকে রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ বা অন্য সময়ের নফল ইতিকাফের জন্য স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। স্বামীর অনুমতি ছাড়া ইতিকাফ করা অনুচিত। স্বামীদের উচিত, যুক্তিসঙ্গত, গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া স্ত্রীদের ইতিকাফে বাধা না দেওয়া। তাদের ইতিকাফের সুযোগ দেওয়া। এতে কিন্তু উভয়ই সওয়াব পাবেন। শামী: ৩/৪২৯, আলমগীরি: ১/২১১
মাসয়ালা: স্বামী স্ত্রীকে ইতিকাফের অনুমতি দেওয়ার পর আর বাধা দিতে পারবেন না। বাধা দিলেও সে বাধা মানা স্ত্রীর জন্য জরুরি নয়। -শামী: ৩/৪২৮, আলমগীরি: ১/২১১
মাসয়ালা: ইতিকাফ অবস্থায় (রাতেও) স্বামী-স্ত্রী মেলামেশা করা যাবে না। করলে ইতিকাফ ফাসিদ হয়ে যাবে।  -সূরা বাকারা: ১৮৭, বাদায়ে: ২/২৮৫, শামী: ৩/৪৪২
মাসয়ালা: মহিলাদের ইতিকাফের জন্য হায়েজ-নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া শর্ত। হায়েজ, নেফাস অবস্থায় ইতিকাফ সহিহ হয় না। -বাদায়ে: ২/২৭৪, আলমগীরি: ১/২১১
মাসয়ালা: মহিলাদের ইতিকাফে বসার আগেই হায়েজ-নেফাসের দিন-তারিখ হিসাব করে বসা উচিত। যাতে ইতিকাফ শুরু করার পর পিরিয়ড শুরু হয়ে না যায়। তবে কারও রমজানের শেষ দশকে পিরিয়ড হওয়ার নিয়ম থাকলে তিনি পিরিয়ড শুরু হওয়া পর্যন্ত নফল ইতিকাফ করতেই পারেন।
মাসয়ালা: ওষুধ-বড়ি খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ রেখে রোজা রাখলে, ইতিকাফ করলে রোজা ও ইতিকাফ সহিহ হবে।

মাসয়ালা:
ইতিকাফ শুরু করার পর পিরিয়ড শুরু হয়ে গেলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। পরে শুধু একদিনের ইতিকাফ রোজাসহ কাজা করতে হবে। -আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৫০২
মাসয়ালা: মহিলারা ঘরের যে স্থানটিকে ইতিকাফের জন্য নির্ধারিত করবেন তা মসজিদের মতো গণ্য হবে। মানবিক প্রয়োজন ছাড়া তারা সেখান থেকে বের হতে পারবেন না। মানবিক প্রয়োজন ছাড়া সে স্থানের বাইরে গেলে ইতিকাফ ফাসিদ হয়ে যাবে। -আলমগীরি: ১/২১১, বাদায়ে: ২/২৮২
মাসয়ালা: মানবিক প্রয়োজন বলতে বুঝায়, প্রস্রাব-পায়খানা। সুতরাং ইতিকাফ অবস্থায় মহিলারা প্রস্রাব-পায়খানার জন্য ইতিকাফের স্থান থেকে বের হতে পারবেন। অজুর জন্য বাইরে যেতে পারবেন।
মহিলারা খুব কমই ইতিকাফ করেন। অথচ ইতিকাফ অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। মহিলাদের জন্য ইতেকাফ খুব সহজও। কারণ তারা ঘরেই ইতিকাফ করবেন। ফলে সংসারের খোঁজখবরও নিতে পারবেন। সংসার ঠিক রেখে তাদের ইতিকাফও হয়ে যাবে। সুতরাং এমন সুযোগ হাতছাড়া করা মোটেই উচিত নয়। নারীদের মধ্যে ইতিকাফের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা উচিত। পুরুষদের উচিত নারীদের ইতিকাফের জন্য উদ্বুদ্ধ করা এবং সুযোগ তৈরি করে দেয়া। তাহলে পুরুষরাও সওয়াব পাবেন।

সাততেতৈয়া

শরিয়ত,তরিকত,হাকিকত ও মারফত কাকে বলে? বিস্তারিত?

পবিত্র কুরআন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান।

হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)-বড় পীর এর জীবনী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

তাজবীদ

জামে মসজিদ নীতিমালা