মুহাম্মদ সাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সংক্ষপ্তি জীবনী

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সংক্ষপ্তি জীবনী


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ। আসসালামু আলাইকুম। প্রথমে আমি মহান আল্লাহ তা-আলার কাছে সুক্রিয়া জ্ঞাপন করছি।এটি হচ্ছে আমার জীবনের প্রথম ব্লগ সাইট। যেহেতু এটিই আমার জীবনের প্রথম ব্লগ সাইট সেহেতু আমি এই ব্লগে প্রথমেই কিছু ইসলামিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। আমি চাই এই ব্লগে আপনারা আপনার নিজের মতামত তুলে ধরুন এবং আপনার বন্ধুদেরকেউ এখানে আমন্ত্রন জানান। তো যাই হোক আজ আমি আমার প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত্র তুলো ধরছি।
1.    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বংশ পরিচয় :
তিনি মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ইবনে হাশেম। হাশেমের দিকে সম্পর্কযুক্ত করে নবীজীর বংশ হাশেমী বংশহিসেবে পরিচিত। আর হাশেম ছিলেন কুরাইশ গোত্রের যা আদনান পর্যন্ত পৌঁছেছে।
2.    জন্ম  শৈশব :
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হস্তীবাহিনী ধ্বংসের বছর জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পূর্বেই তার পিতা  ইন্তেকাল করেন।নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনী সা গোত্রে লালিতপালিত হন এবং চার অথবা পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত সেখানেইবসবাস করেন। আর সেখানেই তাঁর বক্ষ বিদীর্ণের ঘটনা ঘটে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাতা  দুধ মাতা গণ :
•    স্বীয় মাতা আমেনা বিনতে ওয়াহাব        
•    হালমিহ সাদিয়াহ    
•    আবূ লাহাবের বাঁদী সুয়াইহাব   
3.    মায়ের মৃত্যু :
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাতা আমেনা মদিনা মুনাওয়ারায় নিজ স্বামী আব্দুল্লাহ এর কবর যিয়ারতের পরফেরার পথে মক্কা  মদিনার মাঝে অবসি' আবহাওয়া নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন। তখন নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম এর বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর।
4.    দাদা  চাচার তত্ত্বাবধানে : 
মাতাপিতার মৃত্যুর পর দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাঁর লালন পালনের দায়িত্ব ভর গ্রহণ করেন। তিনি তাকে খুব স্নেহ করতেন।এমনকি নিজের ছেলেদের উপরও তাঁকে প্রাধান্য দিতেন। নিজের আসনে বসাতেন। দাদার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি তাঁরতত্ত্বাবধানেই ছিলেন।
দাদা আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর চাচা আবু তালিব তাঁর দায়িত্ব নেন। তখন তার বয়স ছিল আট বছর। তিনি স্বীয় চাচাকেবকরী লালনপালন  শাম দেশের ব্যবসায়ে সহযোগিতা করতেন।
5.    খাদীজা রাএর সাথে বিবাহ এবং সন্তানাদি :
পঁচিশ বছর বয়সে খাদীজা রাকে বিবাহ করেন। একমাত্র ইবরাহীম ব্যতীত তাঁর সব কয়টি সন্তান খাদীজার থেকেই হয়েছে।
কাসেম তাঁর প্রথম সন্তান। এর নামেই তাঁর উপনাম আবুল কাসেম। অতঃপর যয়নবরুকাইয়াউম্মে কুলসুমফাতেমা আব্দুল্লাহ এর জন্ম হয়।
তাঁর ছেলের সকলেই বাল্য বয়সে মারা যান। মেয়েদের সকলেই ইসলাম গ্রহণ করে হিযরত করার সুযোগ পান। ফাতেমা রাব্যতীত তাদের সকলেই নবীজীর জীবদ্দশায় মারা যান। তিনি নবীজীর ইন্তেকালের ছয় মাস পর মৃত্যু বরণ করেন।
6.    নবুওয়্যাত পূর্ব গুণাবলি :
তিনি ছিলেন চিন্তায় সঠিকসিদ্ধান্তে নির্ভুলব্যক্তিত্বে অনন্যচরিত্রে শ্রেষ্ঠতরপ্রতিবেশী হিসেবে অতি মর্যাদাবানসহনশীলতায়সুমহানসত্যবাদিতায় মহত্ত্বর। সচ্চরিত্রবদান্যতাপুণ্যকর্মাপ্রতিশ্রুতি রক্ষা  বিশ্বস-তায় অনুপম আদর্শ। এসব গুণে মুগ্ধ হয়েস্বীয় জাতি তাঁকে আল-আমীন উপাধিতে ভূষিত করে।
7.    ওহী নাযিলের সূচনা :
তিনি মক্কায় অবস্থিত হেরা  গুহায় ইবাদত করতেন। চল্লিশ বছর বয়সে তিনি নবুয়ত প্রাপ্ত হন।
জিবরাইল আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ওহী নিয়ে অবতরণ করেন।
أول ما نزل عليه قوله تعالى : اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ ﴿﴾ خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ ﴿﴾ اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ ﴿﴾ الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ ﴿﴾ عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ ﴿﴾ (سورة العلق )
সর্ব প্রথম সূরা ‘আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাযিল হয় : যার অর্থপাঠ করুনআপনার পালন কর্তার নামেযিনি সৃষ্টিকরেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করুনআপনার পালনকৃত মহা দয়ালু। যিনি কলম দ্বারা শিক্ষাদিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। (সূরা আলাক:-)
8.    দাওয়াতের আদেশঃ   
أمر الله تعالى خاتم رسله وأنبيائه صلى الله عليه وسلم أن يدعو الناس إلى الإســلام، قال تعالي : يَاأَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ ﴿﴾ قُمْ فَأَنْذِرْ ﴿﴾ وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ ﴿﴾  . (سورة المدثر)
আল্লাহ তাআলা সর্বশেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মানুষের মাঝে ইসলাম প্রচারের আদেশ করেন।  মর্মে তিনিইরশাদ করেনহে চাদরাবৃত ব্যক্তিওঠ এবং সতর্ক কর।
9.    গোপনে দাওয়াত : 
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় প্রতিপালকের আদেশ যথাযথ পালন করেন এবং গোপনে গোপনে মানুষের মাঝেইসলাম প্রচার করতে শুরু করেন। যাতে করে কুরাইশদের বিরোধিতা প্রকট না হয়। তিনি সর্বপ্রথম আপন পরিবারপরিজন বন্ধু-বর্গকে ইসলামের দাওয়াত দেন। সর্বপ্রথম খাদীজা রাতাঁর দাওয়াত গ্রহণ করেন। পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম আবূ বকরসিদ্দীক রাছোটদের মধ্যে আলী ইবনে আবূ তালিব রাএবং ক্রীতদাসদের মধ্যে যায়েদ ইবনে হারেসা রাইসলাম গ্রহণ করেন।তিনি খাদিজা রাএর ক্রীতদাস ছিলেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন বছর পর্যন্ত তার নিকটস্থলোকদের মাঝে ইসলাম প্রচারে গোপনীয়তা অবলম্বনকরেন। তিনি দারুল আরকাম তথা কুরাইশ নেতা আরকাম ইবনে আবূ আরকামের বাড়িটি মুসলমানদের সম্মেলনস' হিসেবেনির্বাচিত করেন।
10.    প্রকাশ্যে দাওয়াত :
ثم أمر الله تعالى : النبي صلى اللع عليه وسلم بإعلان الدعوة على الناس قال تعالى : فاصدع بما تؤمر وأعرض عن المشركين. (سورة الحجر)
অতঃপর আল্লাহ তাআলা প্রকাশ্যে দ্বীন প্রচারের আদেশ করলেনইরশাদ হচ্ছেঅতএব আপনি প্রকাশ্যে শুনিয়ে দিন যা আপনাকেআদেশ করা হয় এবং মুশরিকদের পরওয়া করবেন না।” (সূরা হিজর : ৯৪)
وأنذر عشيرتك الأقربين. (الشعراء:২১৪)
আপনি নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।” (সূরা শুআরা : ২১৪)
امتثل النبي صلى الله عليه وسلم لأمر الله، ودعا عشيرته والمقربين له إلى اجتماع عند جبل الصفا. ثم أخبرهم بأنه قد جمعهم ليبلغهم رسالة ربه، بترك عبادة الأصنام وأن يعبدوا الله وحده. فقام من بين الحاضرين عمه أبو لهب غاضبا وقال له : تبالك ؟ لهذا جمعتنا؟ فأنزل الله سبحانه فيه وفي زوجته أم جميل: تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ ﴿﴾ مَا أَغْنَى عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ ﴿﴾ سَيَصْلَى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ ﴿﴾ وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ ﴿﴾ فِي جِيدِهَا حَبْلٌ مِنْ مَسَدٍ ﴿﴾  (سورة المسد)
আল্লাহ তাআলার আদেশ পেয়ে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিকটতম আত্মীয়স্বজনদেরকে সাফাপাহাড়ের পাদদেশে একত্রিত করেন। অতঃপর তাদেরকে মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করে এক আল্লাহর ‘ইবাদত করতে আহ্বান করেন।সমবেত লোকদের মধ্য থেকে তাঁর চাচা আবূ লাহাব বলে উঠলতোমার ধ্বংস হোক জন্যেই কি আমাদেরকে একত্রিতকরেছেএর প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা আবূ লাহাব  তার স্ত্রী উম্মে জামীল সম্পর্কে সূরা মাসাদ (লাহাবঅবতীর্ণ করেন : “আবূরাহাবের দুহাত ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজে। কোন কাজে আসেনি তার ধন-সম্পদ  যা সে উপার্জন করেছে। সত্বরইসে প্রবেশ করবে লেলিহান অগ্নিতে এবং তার স্ত্রীওযে ইন্ধন বহন করেতার গলদেশে খর্জুরের রশি নিয়ে।” (সূরা মাসাদ : -)
11.    ঠাট্টা-বিদ্রূপ :
মুশরিকরা নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বিভিন্ন উপায়ে উপহাস করত। কখনো কখনো তাকে পাগল যাদুকর বলত। আবার কখনো বলত কবি  গণক। অগান' লোকদেরকে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে অথবা কথা শুনতে বাধাদিত। তাঁর চলাচলের রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে রাখত এবং সালাতরত অবস'ায় তাঁর উপর ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ করত
12.    নির্যাতন নিপীড়ন :
মুশরিকরা তাদের মুসলিম গোলামদের উপর কঠিন নির্যাতন চালাতো। তাদেরকে হাতপা বেঁধে ভর দুপুরে উত্তপ্তবালুকারাশিতে শুইয়ে দিত এবং ভারী পাথর দ্বারা তাদের বুক চাপা দিত এবং ছড়ি দ্বারা প্রহার করত  অগ্নি সেঁকা দিত।নির্যাতনের এমন কোন পদ্ধতি নেই যা তারা মুসলমানদের উপর প্রয়োগ করেনি।
13.    ধৈর্য  অবিচল :
মুসলমানগণ মুশরিকদের সকল নির্যাতন  নিপীড়ন ধৈর্য  দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলা করতেন। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে সাওয়াব  জান্নাত লাভের আশায় বিপদে ধৈর্য ধারণ  অনড় থাকার পরামর্শ দেন।মুশরিকদের নির্যাতন ভোগ করেছেন এমন কয়েকজন উল্লেখযোগ্য সাহাবী হলেন : বিলাল ইবনে রাবাহ  আম্মার ইবনে ইয়াসিরপ্রমুখ রা. তাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ইয়াসির  সুমাইয়া রাইসলামের ইতিহাসে এরাই সর্বপ্রথম শহীদ।

14.    হাবশায় (আবিসিনিয়ায়হিজরত .
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরদের অনবরত নির্যাতনের কারণে সাহাবাগণের প্রতি দয়া পরবশ হয়ে হাবশাতেহিজরত করার নির্দেশ দেন। হাবশার বাদশা নাজ্জাশী ন্যায়পরায়ণ  দয়ালু ছিলেন বলে হাবশাকেই হিজরতের জন্যে মনোনীতকরা হল। নাজ্জাশী মূর্তিপূজারী ছিলেন না। নবুয়্যাতের পঞ্চম বছর মুহাজিরদের প্রথম  দলে ছিলেন দশ জন পুরুষ  চার জনমহিলা। তারা কুরাইশদের অজান্তে চুপিসারে হাবশার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।
কিছুদিন পর আরো একটি মুহাজির দল তাদের সাথে মিলিত হলেন। পুরুষমহিলাশিশু সহ তাদের মোট সংখ্যা ছিল প্রায়একশো জন। বাদশা নাজ্জাশী তাদের সম্মান দেন। তাদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করেন এবং সেখানে নিরাপদে বসবাস করারঅনুমতি দেন।
15.    তায়েফ গমন
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আশ্রয়দাতা চাচা আবূ তালিবের মৃত্যুকে কুরাইশরা সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করল। তারউপর নির্যাতনের মাত্রা পূর্বের চেয়ে অনেক বাড়িয়ে দিল।  কঠিন পরিসি'তিতে সহযোগিতা  আশ্রয় পাওয়ার আশায় তিনিতায়েফ গমন করলেন। কিনসেখানে উপহাস  দুর্ব্যবহার ছাড়া আর কিছুই পেলেন না। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পাথর নিক্ষেপ করে আহত করে। ফলে তিনি মক্কায় ফিরে আসেন।
16.    বিভিন্ন গোত্রের নিকট রাসূলের উপস্থিতিঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজের মৌসুমে মক্কায় আগত বিভিন্ন গোত্রের নিকট দাওয়াত নিয়ে উপস্থি' হন।তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং শত্রুদের থেকে আত্মরক্ষা  দাওয়াতের নিরাপত্তা বিধানে  সহযোগিতা কামনা করেন।
তবে কোন গোত্রই এতে সাড়া দিল না। কারণকুরাইশরা তাদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং তাদেরকে তার নিকট হতে দূরেরাখার কৌশল অবলম্বন করে। ইত্যবসরে মদীনার নেতৃস্থানীয় ছয়জন লোক রাসূলের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং কুরাইশদেরভয়ে গোপনে তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। তারা নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করে মানুষের সাথে ইসলাম সম্পর্কে এবং রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চরিত্র  দাওয়াতের সত্যতা সম্পর্কে আলোচনা করেন। এবং মদীনাবাসীদের মাঝে ইসলামপ্রচারের কাজ করেন। ফলে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেন।

17.    আকাবার প্রথম বাইয়াত:
নবুয়্যাতের দ্বাদশ বছর হজ্জের মৌসুমে বার জন লোক মদীনা হতে বের হয়ে মিনাতে আকাবার প্রথম বাইআতের সময় রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে দেখা করে এবং বাইয়অতে অংশ গ্রহণ করেন।  বাইয়াতকে ইসলামের ইতিহাসে আলআকাবাতুল উলা’ প্রথম বাইয়াত বলা হয়। মদীনায় ফিরে যাবার সময় রাসূল তাদের সাথে মুসআব ইবনে উমায়ের রাকেকুরআন তিলাওয়াত এবং দ্বীন শিখানোর জন্য পাঠান।
18.    আকাবর দ্বিতীয় বাইয়াত:
আকাবর প্রথম বাইয়াতের পরবর্তী বছর নবুয়্যাতের তেরোতম বছর হজের মৌসুমে সত্তুর জন পুরুষদুই জন মহিলা মক্কারউদ্দেশ্যে হজ পালনের লক্ষ্যে মদীনা হতে রওয়ানা হন এবং কুরাইশদের অগোচরে গোপনে মিনাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাৎ করেন যাতে করে কুরাইশরা না দেখে। আর তারা সকলে রাসূলের চাচা আব্বাসআবূ বকর এবং আলীইবনে আবু তালিবের উপসি'তিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন।  বাইয়াতকেইসলামের ইতিহাসে ‘আল-আকবাতুস সানীয়াহ’ বলা হয়। এতে তারা জান-মালের বিনিময়ে রাসূল কে রক্ষা করার অঙ্গীকারকরেন। তারা তাঁকে  মর্মে আশ্বসকরলেন যেতিনি যদি তাঁদের দেশে তাঁদের নিরাপত্তায় হিজরত করেন তাহলে তারা স্বাগতজানাবেন। রাসূলের নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে তাদের দেশে হিজরত করাকে স্বাগত জানানো হবে।
19.    হিযরত  মক্কা ত্যাগ করার সিদ্ধান- :
কুরাইশরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তুতারা ব্যর্থ হয় এবং আল্লাহ তাআলাকে তাকেহেফাযত করেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় ঘর থেকে বের হন এবং আল্লাহ তাআলা কাফেরদের চক্ষু অন্ধ করে দেন যাতে তারারাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখতে না পারে। তিনি চলতে চলতে মক্কার বাইরে স্বীয় বন্ধু আবু বকর সিদ্দীক রাএরসাথে মিলিত হন। অতঃপর তারা উভয়ে এক সাথেই পথ চলা আরম্ভ করেন।   সওর’ নামক পাহাড়ে পৌঁছে একটি গুহায় তিনদিন পর্যন্ত আত্মগোপন করেন। আব্দুল্লাহ বিন আবূ বকর রাতাদের নিকট কুরাইশদের সংবাদ পৌঁছাতেন এবং তার বোনআসমা খাদ্য  পানীয় পৌঁছাতেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তার সঙ্গী গুহা হতে বের হন এবংইয়াসরিব (মদীনাঅভিমুখে যাত্রা শুরু করেন।
20.    ইয়াসরিবে (মদীনানতুন অধ্যায়ের সূচনা :
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় পৌঁছে তাকওয়ার ভিত্তিতে ইসলামের সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। বর্তমানেমদীনা শরীফে  মসজিদটি “মসজিদে কুবা” নামে পরিচিত।
মদীনাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তা হচ্ছে মসজিদে নববী নির্মাণ এবংমুহাজির  আনসারদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন। প্রথম কাজ  সর্বপ্রথম পরিকল্পনা যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামনির্ধারণ করেনতা ছিল মসজিদে নববী নির্মাণ এবং আনসার  মুহাজিরদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব 'াপন করা।
21.    ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধঃ
আবূ সুফিয়ানের কাফেলা -
কুরাইশদের একটি ব্যবসায়ী দল সিরিয়া থেকে বিশাল বাণিজ্যিক পণ্য নিয়ে মক্কা প্রত্যাবর্তন করছে মর্মে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ব্যাপারে অবগত হলে উক্ত সম্পদ দখল করার সংকল্প ব্যক্ত করেন। কারণ ইতিপূর্বেমক্কা বাসীরা মুহাজিরদের সম্পদ দখল করে নিয়েছিল। দলপতি আবূ সুফিয়ান রাসূল এর সংকল্পের কথা জানতে পেরে একলোককে কুরাইশদের নিকট পরিসি'তি সম্পর্কে সংবাদ দানের জন্য পাঠালেন। সংবাদ পেয়ে কুরাইশরা বাণিজ্যিক কাফেলারক্ষার্থে দ্রুত বের হয়ে আসল। এদিকে আবূ সুফিয়ান আগেই কাফেলা সহ পলায়ন করতে সক্ষম হয় এবং বেঁচে যায়।
কুরাইশরা মক্কায় ফিরে যেতে চাইল কিনকুরাইশ নেতারা বিশেষত আবূ জাহেল মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ঘোষণা দিলএবং প্রায় এক হাজার যোদ্ধার একটি সেনাদল মদীনাভিমুখে পাঠাল।
•    যুদ্ধের অনুমতি .
لما ازداد طغيان المشركين على المسلمين، أمر الله رسوله صلى الله عليه وسلم بقتالهم بقوله تعالى: وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ ﴿১৯০﴾ (البقرة : ১৯০)
মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের নির্যাতন যখন অসহনীয় পর্যায়ে বেড়ে গেল আল্লাহ তাআলা তখন আপন রাসূলকে তাদেরবিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেন। আল্লাহ বলেন :  যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় তোমরা আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকর। অবশ্য কারো প্রতি বাড়বাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘন কারীদের পছন্দ করেন না।” (সূরা বাকারাহ : ১৯০)
নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরামর্শ করে মুহাজির  আনসারগণের নিয়ে গঠিত প্রায় তিন শত তের জনেরএকটি সেনাদল নিয়ে মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার লক্ষ্যে বের হলেন।
হিজরী দ্বিতীয় সনের ১৭ রামাযান বদর নামক স্থানে উভয় দল মুখোমুখি হয় এবং সেখানেই বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়।  যুদ্ধেমুসলমানরা মহা বিজয় লাভ করেন।  যুদ্ধে মুসলমানগণ অনেক গনিমতের সম্পদ লাভ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম তাদের মাঝে সেগুলো বণ্টন করে দেন।  যুদ্ধে মোট সত্তুর জন মুশরিক নিহত হয় এবং সত্তুর জন বন্দী হয় আরমুসলমানদের শহীদের সংখ্যা মাত্র চৌদ্দজন।
22.    উহুদ যুদ্ধ :
কুরাইশদের প্রতিশোধ প্রস্তু'তি:
বদর যুদ্ধে কুরাইশরা শোচনীয় পরাজয় এবং নিজেদের বড় বড় নেতা হারিয়ে দুঃখ ভারাক্রানহৃদয়ে মক্কায় প্রত্যাবর্তন করারপর তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য মুসলমানদের পক্ষ হতে হুমকির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করে। ফলে তারা পূর্ণ এক বছর যাবৎ সৈন্য সম্পদ সঞ্চয় এবং প্রতিবেশী গোত্রীয় মিত্রদেরকে সহায়তা প্রদানের আহ্বান সহ জোর প্রস'তি গ্রহণ করে এবং আবূ সুফিয়ানেরনেতৃত্বে তিন হাজারের অধিক একটি বিশাল সেনাদল গঠন করে।
•    উহুদ অভিমুখে যাত্রা .
নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট কুরাইশদের আগমন বার্তা পৌঁছোলে তিনি মুহাজির  আনসার নিয়েগঠিত এক হাজার যোদ্ধার একটি বিশাল সেনাদল নিয়ে তাদের প্রতিরোধ করার জন্য বের হন এবং উহুদ পাহাড়ের ঢালুতেঅবস্থান গ্রহণ করেন। পাহাড় পিছনে রেখে তিনি সৈন্যদের সুসংগঠিত  বিন্যস্ত করেন। যে কোন পরিসি'তিতে স্থান ত্যাগ নাকরার জন্য তাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেন।
•    প্রাথমিক বিজয়  তিরন্দাজদের দায়িত্বে অবহেলা :
 যুদ্ধের শুরু ভাগে মুসলমানদের জয় হল এবং মুশরিকরা পিছু হটল। কিনমুসলিম তীরান্দাজগণ গনিমতের মাল সংগ্রহণকরতে গিয়ে স্বীয় 'ান ত্যাগ করে বসলেন।
•    মুশরিকদের জড়ো হওয়া  সুযোগ গ্রহণ :
কাফেররা  সুযোগে তীর নিক্ষেপের স্থানগুলো দখল করে নিল এবং মুসলমানদের পিছন দিক থেকে তীর নিক্ষেপ করতে লাগল।যার কারণে মুসলমানদের কাতার ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। এতে অনেক মুসলমান শাহাদাত বরণ করেন। তাদের মধ্যে শহীদগণেরসরদার হামযা বিন আব্দুল মুত্তালিব রাছিলেন।  যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুখমণ্ডল এবং দন্ত মুবারকআঘাতপ্রাপ্ত হয়।
উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয় হিজরী সনের তৃতীয় বছর শাওয়াল মাসের ১৫ তারিখ রোজ শনিবার।
23.    খন্দকের যুদ্ধঃ
•    ইয়াহুদীদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ  কুরাইশদের ষড়যন্ত্র :
কুরাইশরা মদীনার মুসলমানদের সমূলে ধ্বংস করে দিতে চাইল। যুদ্ধের প্রকৃত কারণমুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতাতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র  হিংসাত্মক আচরণের কারণে যে সব ইয়াহুদীদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা হতেতাড়িয়ে দেন তারা মক্কায় কুরাইশদের দলভুক্ত হয়। কুরাইশদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রেরণা জোগায় এবংতাদেরকে জনবলটাকা-পয়সা  অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
•    ধন সম্পদ একত্রিকরণ এবং বিভিন্ন গোত্রকে উৎসাহ প্রদান
ইয়াহুদীদের পরামর্শ অনুসারে মক্কা বাসী ধন-সম্পদ জোগাড় করতে আরম্ভ করল। কুরাইশরা  ইয়াহুদীরা তাদের স্বীয় গোত্র মিত্রদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানাল। পঞ্চম হিজরীতে আবূ সুফিয়ানের নেতৃত্বে দশ হাজারেরও বেশি যোদ্ধা মদীনাভিমুখেরওয়ানা হয়। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করা  তাদের নিশ্চিহ্ন করা।
•    সাহাবীদের সাথে মত বিনিময়  সালমান-এর পরিখা খননের পরামর্শ প্রদান :
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরাইশদের প্রস'তি  প্রতিজ্ঞা সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর করণীয় নির্ধারণে সহাবাগণেরসাথে পরামর্শ করেন। তারা সিদ্ধানকরেন মুসলমানগণ মদীনায় অবস্থান করে প্রতিরোধ করবে। মদীনার উত্তর পার্শ্বের সীমান্তঅরক্ষিত থাকায় সালমান ফারসী রামদীনায় দুশমনদের প্রবেশে বাধাগ্রস্থ করার লক্ষ্যে উত্তর পার্শ্বে পরিখা খননের পরামর্শদেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালমান ফারসী রাএর পরামর্শ গ্রহণ করেন।
মুসলমানগণ পরিখা খনন আরম্ভ করেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই মুসলমানগণের সাথে যখন কাজেঅংশগ্রহণ করেন। পনেরো দিনের মধ্যে পরিখা খনন সম্পন্ন হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলা  শিশুদের দুর্গেআশ্রয় গ্রহণের নির্দেশ দেন। এক হাজারেরও বেশি মুসলিম যোদ্ধা মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করেন এবং মদীনা প্রতিরক্ষায়নিয়োজিত হন।
•    কাফের সেনাদের অবস্থান :
মুশরিক সৈন্যরা পরিখার অদূরে মদীনার বাইরে অবস'ান করতে বাধ্য হয়। কেননা তাদের অশ্বগুলো পরিখা অতিক্রম করতেপারেনি। অতঃপর তাদের অশ্বারোহীরা নিহত হলে অন্যরা পরাজিত হয়ে পলায়ন করে।  সময় পিছন দিক থেকেমুসলমানদেরকে আক্রমণের লক্ষ্যে বনু কুরাইযার ইয়াহুদীরা তাদের নিরাপত্তা বিধানকারী দুর্গগুলোর ফটক উন্মুক্ত করতে সম্মতহল। নুয়াইম বিন মাসউদ রাযার ইসলাম গ্রহণের খবর কুরাইশ  ইয়াহুদীরা জানত না তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির অনুমতি দেন। তিনি উক্ত কাজে সফল হন
•    আল্লাহর সৈনিক:
এক মাস পর্যন্ত মদীনা অবরুদ্ধ ছিল। প্রচণ্ড শীতের গভীর অন্ধকার রাত্রিতে প্রবল বাতাস  তুফান প্রবাহিত হল এতেমুশরিকদের তাবু ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হল এবং তাদের হাড়ি পাতিল সহ যাবতীয় সরঞ্জাম লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল এবং তাদের উপরমরুভূমির পাথর  বালূ বর্ষিত করা হল। আর আল্লাহ তাআলা তাদের অন-রে ভীতি সঞ্চার করলেন।
আবূ সুফিয়ান তার উটে আরোহন করল এবং দৌড়ে পলায়ন করল। অন্যান্য সৈন্যরাও তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করল। এভাবেমুশরিকদের ব্যর্থতা  রণক্ষেত্র থেকে পলায়নের মাধ্যমে আহযাব যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটল।
وصدق الله حيث يقول: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَاءَتْكُمْ جُنُودٌ فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيحًا وَجُنُودًا لَمْ تَرَوْهَا وَكَانَ اللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرًا ﴿﴾  (الأحزاب)
আল্লাহ তাআলা সত্যিই বলেছেন: “হে মুমিনগণতোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করযখনশত্রুবাহিনী তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিলঅতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে ঝঞ্ঝা বায়ু এবং এমন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলামযাদেরকে তোমরা দেখতে না। তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন।” (সূরা আহযাব : )
24.    হুদাইবিয়ার সন্ধি :
যষ্ঠ হিজরীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উমরা করার লক্ষ্যে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন।  সফরে তাঁর যুদ্ধকরার কোন ইচ্ছা ছিল না। চৌদ্দ শত আনসারী  মুহাজির সাহাবী তাঁর সফরের সাথি হন। যখন তারা হুদাইবিয়া নামক'ানে পৌঁছেন সকলে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় অবতরণ করেন। কুরাইশরা  সংবাদ জানতে পেরে শপথ কল যেতারা নবীকরীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তার সাথীদেরকে মক্কায় প্রবেশ করতে দেবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উসমান রাকে কুরাইশদের নিকট  খবর দিয়ে প্রেরণ করেন যেতারা যুদ্ধের জন্যমক্কার দিকে রওয়ানা হননি। বরং তারা শুধুমাত্র উমরার উদ্দেশ্যেই মক্কায় প্রবেশ করতে চান। তারপর তারা আলোচনায় বসারজন্য সম্মত হয়।
আলোচনা আরম্ভ হলে তা সন্ধির মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।  সন্ধিকেই হুদাইবিয়ার সন্ধি বলা হয়। সিদ্ধানহয় রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উমরা পালনকে এক বছর পিছিয়ে দেবেন এবং দশ বছর যাবত যুদ্ধ বন্ধ থাকবে। আর যে কোনগোত্র তাদের ইচ্ছানুসারে যে কোন দলের অন-র্ভুক্ত হতে পারবে।  চুক্তির ফলে খোযাআ’ গোত্র মুসলমানদের সাথে মিলিত হলএবং বনু বকর গোত্র কুরাইশদের সাথে মিলিত হল। সন্ধি চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পশুজবেহ করেন এবং মাথা মুড়িয়ে ফেলেন। মুসলমানগণ তাঁর অনুকরণ করেন। অতঃপর তিনি মুসলমানদেরকে নিয়ে মদীনায়ফেরত আসেন।

25.    মক্কা বিজয় :
হুদায়বিয়ার সন্ধির পর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন গোত্রে তাঁর দাওয়াতী কর্মসূচী অধিক পরিমাণেবিস্তৃতি ঘটাতে সক্ষম হন। ফলে এক বছরের মাথায় মুসলমানদের সংখ্যা অধিক হারে বৃদ্ধি পেল। এরই মাঝে কুরাইশদের সাথেমৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ বনু বকর মুসলমানদের মিত্র কবীলায়ে খুযাআর উপর আক্রমণ করল। এর অর্থ দাঁড়াল করাইশ এবং তারমিত্ররা হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ করল।
নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  সংবাদ পেয়ে অত্যধিক ক্রুদ্ধ হন এবং মক্কা বিজয়ের উদ্দেশ্যে দশ হাজার যোদ্ধারএকটি বিশাল সেনাদল গঠন করেন।
তখন ছিল হিজরী অষ্টম বর্ষের রমাযান মাস। এদিকে কুরাইশরা নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মক্কাভিমুখেঅভিযানের সংবাদ পেয়ে তাদের নেতা  মুখপাত্র আবূ সুফিয়ানকে ক্ষমা প্রার্থনাসন্ধি চুক্তি বলবৎ এবং চুক্তির মেয়াদ আরোবাড়ানোর প্রস-াব দিয়ে নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট প্রেরণ করেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম তাদের ক্ষমার আবেদন নাকচ করে দিলেন। কেননা তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। আবূ সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ ভিন্নবাঁচার আর কোন উপায় না দেখে ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর সেনাদল (মক্কাভিমুখেরওয়ানা হয়ে মক্কার কাছাকাছি আসলেমক্কাবাসী বিশাল দল দেখে আত্মসমর্পণ করে। আর নবী আকর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানগণকে সঙ্গে নিয়ে বিজয়ীবেশে মক্কা প্রবেশ করেন।
(وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا ﴿৮১﴾ سورة الإسراء : ৮১)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করেন এবং নিজ হাতের ছড়ি দ্বারা কাবার আশেপাশে রাখাসকল প্রতিমা ভেঙে চুরমার করে দেন। আর স্বীয় রবের শেখানো আয়াত পাঠ করতে থাকেনযার অর্থ :
বলসত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছেনিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।” (সূরা ইসরা : ৮১)
অতঃপর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ঘোষণা করেন মক্কা পবিত্র  নিরাপদ।আল্লাহ তাআলা শুধুমাত্র তাঁর নবীর খাতিরেই কিঞ্চিৎ সময়ের জন্যে (যুদ্ধহালাল করেছেন। তাঁরপর আর কারো জন্যে কখনোহালাল করা হবে না।
قوله تعالى :
إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ ﴿﴾ وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا ﴿﴾ فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا ﴿﴾ (سورة النصر )
এরপর সমবেত মক্কা বাসীর প্রতি লক্ষ্য করে বললেনআমি তোমাদের সাথে কেমন আচরণ করব বলে তোমাদের ধারণাতারাবললসহানুভূতিশীলউদাহরণ ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ। আপনি মহৎ মহানুভবের ভ্রাতুষ্পুত্র। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সকলকে ক্ষমা করে দিয়ে বললেন : তোমরা সকলেই মুক্ত। এরপর মানুষ দলে দলে আল্লাহর দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হতেলাগল। আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করলেন: “যখন আল্লাহর সাহায্য  বির্জ আসবে এবং আপনি মানুষকে আল্লাহর দ্বীনে দলে দলেপ্রবেশ করতে দেখবেন।” (সূরা নাসর : -)
26.      বিদায় হজ্জ
দশম হিজরী সনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদেরকে তাঁর সাথে হজব্রত পালন  হজের আহকাম শিক্ষা গ্রহণকরতে মক্কা যাবার আহ্বান জানা।
قول الله تعالى : الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا (سورة المائدة : )
তাঁর আহ্বানে এক লক্ষের মত লোক সাড়া দিল। তাঁরা যুলকাদাহ্‌ মাসে পঁচিশ তারিখ তাঁর সাথে মক্কা পানে বের হন।বাইতুল্লাহতে পৌঁছে প্রথমে তওয়াফ করেন। অতঃপর যিলহজ্জ মাসের আট তারিখ মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এরপর নয়তারিখ জাবালে আরাফাহ অভিমুখে যাত্রা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেথা অবস'ান করেন এবংমুসলমানদের উদ্দেশ্যে তার ঐতিহাসিক অমর ভাষণ দান করে তাদেরকে ইসলামী বিধি-বিধান  হজের আহকাম শিক্ষা দেনএবং আল্লাহ তাআলার নিম্নোক্ত বাণী তিলাওয়াত করে শুনান-  আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করেদিলাম। তোমাদের প্রতি আমার নিআমত পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে মনোনীতকরলাম।
27.    পরম সুহৃদ সান্নিধ্যে :
বিদায় হজ্জ পরবর্তী বছর নবী আকরাম জ্বরাক্রান্ত  হয়ে অসুস্থহয়ে পড়েন এবং প্রিয় সহধর্মিণী আশেয়া রাএর ঘরে শয্যাগ্রহণ করেন। পরে রোগের তীব্রতা বাড়লে হিজরী একাদশ সনের ১২ রবীউল আউয়াল সোমবার ৬৩ বছর বয়সে স্বীয়প্রতিপালকের সান্নিধ্যে চলে যান।
قوله تعالى: وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ وَمَنْ يَنْقَلِبْ عَلَى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئًا وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ ﴿১৪৪﴾ (سورة آل عمران : ১৪৪)
রাসূল সুএর তিরোধানে মুসলমানগণ যার পর নাই শোকাহত হন এবং খুব ব্যথিত হন।  পরিসি'তিতে আবু বকর রাভাষণদেয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে বলেন : যাঁরা মুহাম্মাদের উপাসনা করত তারা জেনে রাখুক যেমুহাম্মাদ আজ মৃত্যুবরণ করেছেন।আর যারা আল্লাহর ‘ইবাদত করেনিশ্চয় আল্লাহ তাআলা চিরঞ্জীবকখনো মৃত্যু বরণ করবেন না। এরপর নিম্নোক্ত আয়াততিলাওয়াত করেন : “আর মুহাম্মাদ একজন রাসূল বৈ কিছু নন। তার পূর্বেও বহু রাসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে কিতিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হনতবে তোমরা পশ্চাদপসরন করবেবস্তু'কেউ যদি পশ্চাদপসরন করেতবেতাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ আল্লাহ তাদের সাওয়াব দান করবেন।
(সূরা আলে ইমরান : ১৪৪)
وَقَالَ الرَّسُولُ يَا رَبِّ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَذَا الْقُرْآنَ مَهْجُورًا 
রসূল (সঃবলবেনঃ হে আমার পালনকর্তাআমার সম্প্রদায় এই কোরআনকে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করেছে। [ সুরা আলফুরকান-৩০]
 

সাততেতৈয়া

শরিয়ত,তরিকত,হাকিকত ও মারফত কাকে বলে? বিস্তারিত?

পবিত্র কুরআন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান।

হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)-বড় পীর এর জীবনী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

তাজবীদ

জামে মসজিদ নীতিমালা