এক শ্রেণিতে শিক্ষার্থী একজনই

এক শ্রেণিতে শিক্ষার্থী একজনই

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি | 
  
যে ফাস্ট বয়, সেই লাস্ট বয়। অর্থাৎ একটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থী একজনই। শুনতে অবাক লাগলেও মানিকগঞ্জের নিমতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির চিত্রটা এমনই। আর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দুই শিফটে এই স্কুলের মোট শিক্ষার্থী মাত্র ২২ জন। সকালের শিফটে ৮ জন ও দুপুরে শিফটে ১৪ জন। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে দুইজন বালক ও দুইজন বালিকা, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১ জন বালক, তৃতীয় শ্রেণিতে ১জন বালক ও ৩ বালিকা, চতুর্থ শ্রেণিতে ২ জন বালক ও ৩ বালিকা এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ৩জন বালক ও ২জন বালিকা রয়েছে।
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কম কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানান, যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসে না। বিদ্যালয়ের চারপাশে কোনো রাস্তা এবং দোকানপাট নেই।
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নের নিমতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে ফসলের ক্ষেত। গ্রামের উত্তর দিকে খোলা চকে অবস্থিত চার কক্ষের নিমতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একতলা ভবন। বিদ্যালয়ে দক্ষিণ অংশ অর্ধ কিলোমিটার ছাড়া বাকী তিন দিকেই দুই কিলোমিটার এলাকায় কোন জনবসতি নেই। এই বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণি কক্ষে ৯ টি বেঞ্চ থাকলেও একজন শিক্ষার্থীকে ইংরেজি পড়াচ্ছেন শিক্ষক বেলী মণ্ডল।
শাওন মোল্লা নামের ওই শিক্ষার্থীই বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণির একমাত্র ছাত্র। অর্থাৎ এই বিদ্যালয়ের সে ফার্স্ট বয় আবার সে লাস্ট বয়ও বটে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক বেলী মণ্ডল বলেন, প্রথম শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ওঠে দুই শিক্ষার্থী। কিন্তু একজন জানুয়ারিতে অন্য বিদ্যালয়ে চলে যায়। এরপর থেকে শাওন এই ক্লাসের একমাত্র শিক্ষার্থী। একজন ছাত্রকে পড়াতে ভালো লাগে না। শিক্ষার্থী বেশি না থাকলে প্রতিযোগিতা থাকে না। কিন্তু আমরা কী করব!
শিক্ষার্থী শাওন মোল্লা জানান, ‘আমার আগে ও পরে কোন শিক্ষার্থী নেই। তাই আমার রোল নং ১। আমিই ক্লাসে ফাস্ট বয়, আমিই ক্লাসে লাস্ট বয়।’
এ দিকে বিদ্যালয়টি ক্যাচমেন্ট এলাকায় মোট লোক সংখ্যা সাড়ে ৬শ মতো। চলতি বছর ১৩ জন শিশু ভর্তি হওয়ার উপযুক্ত ছিল। কিন্তু নিমতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে মাত্র একজন ছেলে ও ২ জন মেয়ে। বাকী শিশুরা ভর্তি হয়েছে অন্য বিদ্যালয়ে। তবে বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় গত ৩ বছরে যে কয়জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলো সবাই পাশ করেছে।এবছর ৫জন শিক্ষার্থী সমাপনীতে অংশ নিচ্ছেন।
৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী শিশির মোল্লার মা শেফালি বেগম জানান, তার ৪ সন্তানের মধ্যে ৩ মেয়েই এই বিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করে গেছে। এক মাত্র ছেলে শিশিরও এখানেই পড়ে। শিক্ষকরা অনেক যত্ন করে তাদের সন্তানদের পড়ান। বর্ষা শুরু সাথে সাথে বিদ্যালয়ে চার দিকে পানি উঠে যায়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন কুমার মণ্ডল জানান, ১৯৭২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বেসরকারি বিদ্যালয় থেকে সরকারি করণ হয় ২০১৩ সালে। ওই সময় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২ শ। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ক্যাচমেন্ট এলাকায় জনবসতি কম থাকায় শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে শিক্ষকের সংখ্যা ৪ জন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছবেদ আলী জানান, বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এলাকায় মধ্য নিমতা গ্রামের পাশে রয়েছে ঘিওর উপজেলার বাশাইল, শিবালয় উপজেলার পাড়াগ্রাম ও হরিরামপুর বিজয় নগর। এই ৩টি গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ওই সব বিদ্যালয়ে ২শ থেকে ৩শ করে শিক্ষার্থী থাকলে নিমতা সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। বিদ্যালয়টির বয়স ৪৫ বছর হলেও বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার কোন রাস্তা হয়নি। এছাড়া নিমতা এলাকায় অধিকাংশ মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে বসবাস করে। জন শূন্যতার কারণে ভর্তি হওয়ার মতো শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি মনে করেন বিদ্যালয়টি যাতায়াতের জন্য রাস্তা হলে আগামীতে ভর্তি হওয়ার শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি হবে।
ঘিওর উপজেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দা নাজনীন আলম জানান, নিমতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি মূল সমস্যা হচ্ছে যোগাযোগের রাস্তা। বছরের কয়েক মাস বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তা পানি কাদায় তলিয়ে থাকে। এসব কারণে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে না এবং ক্যাচমেন্ট এলাকায় মা সমাবেশ ছাড়াও জনপ্রতিনিধি এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সভা করা হয়। যাতে শিশুরা ওই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।

সাততেতৈয়া

শরিয়ত,তরিকত,হাকিকত ও মারফত কাকে বলে? বিস্তারিত?

পবিত্র কুরআন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান।

হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)-বড় পীর এর জীবনী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

তাজবীদ

জামে মসজিদ নীতিমালা