আহমদ রেজা খান বেরলভী

আহমদ রেজা খান বেরলভী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
Jump to navigationJump to search
আহমদ রেজা খাঁন বেরলভী
ﺍ ﺣﻤﺪ ﺭﺿﺎ ﺧﺎ ﻥ ﺑﺮﯾﻠﻮﯼ
Imamahmedrazakhan.png
জন্ম১৪ জুন ১৮৫৬[১]
বেরেলী, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু২৮ অক্টোবর ১৯২১ (৬৫ বছর)
বেরেলী, ইউপি, ব্রিটিশ ভারত
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
যুগআধুনিক যুগ
অঞ্চলদক্ষিণ এশিয়া
ধারাবেরলভীসুন্নী
আগ্রহতাফসীরহাদিসআকীদাফিকহসুফিবাদ, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি
আহমদ রেজা খান বেরলভী (উর্দুﺍﺣﻤﺪ ﺭﺿﺎﺧﺎﻥ ﺑﺮﯾﻠﻮﯼ ‎‎, হিন্দিअहमद रज़ा खान, ১৪ জুন ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দ বা ১০ সাওয়াল ১২৭২ হিজরি - ২৮ অক্টোবর ১৯২১ খ্রিস্টাব্দ বা ২৫ সফর ১৩৪০ হিজরি), ইমাম আহমদ রেজা খানইমাম আহমদ রেজা খান কাদেরী, বা আ'লা হযরত নামেও পরিচিত যিনি একজন বিশিষ্ট মুসলিম মনীষী, সুফী এবং ব্রিটিশ ভারতের সমাজ সংস্কারক। সুন্নি ইসলামের মধ্যে বেরলভী আন্দোলনে তিনি ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা।[২][৩][৪]তাঁর অনুসারীরা তাঁকে চতুর্দশ হিজরীর (ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর) মুজাদ্দিদ মনে করে। তাঁর লেখার বিষয়বস্তুতে আইনধর্মদর্শন এবং বিজ্ঞান সহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি ইসলামী আইন-কানুনের উপর প্রায় সহস্রাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন।[৩]

জন্ম ও বংশীয় পরিচয়[সম্পাদনা]

আহমাদ রেজা খাঁন ১৪ জুন ১৮৫৬ সালে ব্রিটিশ ভারতের বেরেলী শহরের জাসলী মহল্লাতে জন্ম গ্রহণ করেন। জন্মের সময় তার নাম রাখা হয় মোহাম্মাদ।[৫] আ’লা হযরত ইমাম আহমাদ রেজা খাঁন বেরলভীর পিতা নকী আলী খান।[৬][৭] পিতামহ ছিলেন রেজা আলী খান; তাঁর পিতা হযরত মাওলানা শাহ রেজা আলী খাঁন, তাঁর পিতা হযরত মাওলানা হাফিজ শাহ্ কাজিম আলী খাঁন, তাঁর পিতা হযরত মাওলানা শাহ্ মুহাম্মদ আজম খাঁন, তাঁর পিতা হযরত মাওলানা শাহ্ সা’আদাত ইয়ার খাঁন, তাঁর পিতা হযরত মাওলানা শাহ্ সাঈদ উল্লাহ্ খাঁন। আ’লা হযরতের পূর্ব পুরুষ অর্থাৎ হযরত মাওলানা শাহ্ সাঈদ উল্লাহ খাঁন রাজ পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি মুঘল শাসনামলে লাহোর পদার্পণ করেন এবং সেখানে তিনি বিভিন্ন সম্মানিত পদে অলংকৃত হন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]


২০১৭ সালে আলা হযরতের ৯৯তম তিরোধান দিবসে (ওরস) দরগাহ-এ-আলা হযরতে লাখো মানুষের ঢল
তিনি শুক্রবার, ১৯২১ সালের ২৮ অক্টোবর (২৫ সফর ১৩৪০ হিজরি) ৬৫ বছর বয়সে বেরেলী শহরের নিজগৃহে মৃত্যুবরণ করেন।

বই[সম্পাদনা]

আহমদ রেজা খান আরবী, উর্দূ, এবং ফারসী ভাষায় বিভিন্ন বিষয়ে সহস্রাধিক বই লিখেছেন। তাঁর বিভিন্ন বই ইউরোপীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ভাষাতে অনূদিত হয়েছে।[৮][৯]



জন্ম : ১০ই শাবান ১২৭২ হিজরী / ১৮৫৬ ইং
ইনতিকাল :২৫ শে সফর ১৩৪০ হিজরী / ১৯২১ ইং। হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর মোজাদ্দেদ, ইমামে আহলে সুন্নাত, আ’লা হযরত, ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী (রহঃ) এমন এক যুগ সন্ধিক্ষণে আবির্ভূত হয়েছিলেন- যখন সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের দালাল বাতিল ফের্কাগুলো আরবে ও আজমে- সর্বত্র ইসলামের প্রতিষ্ঠিত আকিদাসমূহের উপর কঠোর আঘাত হানা শুরু করেছিল। আরবের অভিশপ্ত নজদ প্রদেশের মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর ভারতীয় অনুসারীরা ওহাবী আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষের ঈমান আকিদা বিনষ্ট করছিল, পাক-ভারত উপমহাদেশের ওহাবী আন্দোলনের ঢেউ এসে একের পর এক আঘাত হানতেছিল, ইংরেজদের সহায়তায় তারা বিরাট ধরণের দেওবন্দ ওহাবী মাদ্রাসা তৈরী করে ওহাবী মতবাদ প্রচারে লিপ্ত হয়েছিল, তাকভিয়াতুল ঈমান, তাহযিরুন্নাছ, ফতোয়ায়ে রশিদিয়া, বারাহীনে কাতেয়া, হেফযুল ঈমান ও বেহেস্তী জেরর প্রভৃতি ঈমান বিধ্বংসী ওহাবী মতবদী কিতাবসমূহ লিখে বিদেশী অর্থানুকূল্যে ছেঁপে ঘরে-ঘরে পৌছিয়ে দেয়া হচিছল। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের মান মর্যাদার উপর এসব কিতাব দ্বারা জঘন্য আক্রমন পরিচালনা করা হচ্ছিল। উদাহরণ স্বরূপ :এসব কিতাবে লিখা ছিল-“আমাদের নবীজির এলেমের চাইতে শয়তানের এলেম অধিক, নবী মরে পঁচে গলে মাটি হয়ে গেছেন, নবীজীর মর্যদা বড় ভাইয়ের তুল্য খাতামুন্নাবিয়ীন অর্থ শেষ নবী নয়, নবীজীর গায়েবী এলেমের মত এমন এলেম চতুস্পদ জন্তুরও আছে, নামাযে নবীজীর খেয়াল আসার চেয়ে গরু-গাধার খেয়াল আসা অধিক ভাল-ইত্যাদি বেদ্বীনি আকিদাসমূহ। উপরে উল্লেখিত কিতাবসমূহে এসব জঘন্য উক্তি লিখে প্রচার করা হচ্ছিল। এমন এক ঘনঘোর অমানিশা যখন উপমহাদেশের আকাশকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল, সে সময়ে আল্লাহ্র রহমত স্বরূপ ভারতের বাঁশ বেরেলীতে জন্ম গ্রহণ করেন হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (রহঃ)। ১২৭২ হিজরীতে ১০ই শওয়াল তারিখ মোতাবেক ১৪ই জুন ১৮৫৬ ঈসায়ী সালে ইমাম আহমদ রেযা খান বেরেলভী 
(রহঃ) বেরেলীর এক খান্দানী ঐতিহ্যবাহী পাঠান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সিপাহী বিদ্রোহের ১ বৎসর পূর্বেই তাঁর জন্ম। সুতরাং পরবর্তী আযাদী আন্দোলনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। 

শিক্ষা : মাত্র তের বৎসর দশ মাস চার দিনে তিনি কোরআন, হাদীস, তাফসীর, আরবী সাহিত্যসহ সমস্ত আকলী ও নকলী এলেম শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ঐদিনেই তিনি আপন পিতা আল্লামা নক্বী আলী খান (রহঃ)-এর তত্ত্বাবধানে প্রথম ফতোয়া লিখে মুফতী পদে সমাসীন হন। মজার ব্যাপার -ঐ দিনেই তার উপর নামায ফরয হয়। এই পদে একাধারে ৫৫ বৎসর দায়িত্ব পালন করে ১৩৪৯ হিজরীতে ৬৮ বৎসর বয়সে তিনি ইন্তিকাল করেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি বিভিন্ন ওস্তাদ ও নিজ প্রতিভার মাধ্যমে ৫৫ প্রকার বিদ্যা বা জ্ঞানের শাখা-প্র শাখায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। জ্ঞানের এতগুলো শাখায় বিচরণ করা এ কথাই প্রমাণ করে যে, তিনি ছিলেন যুগের দ্বিতীয় ইমাম আবু হানিফা। আল্লামা ইকবাল (রহঃ) তাঁকে এই উপাধীতেই স্মরন করতেন। দীর্ঘ ৫৫ বৎসর পর্যন্ত তিনি যেসব ফতোয়া প্রদান করেছেন-সেগুলো সম্মিলিত নাম রাখা হয়েছে ফতোয়ায়ে রজভীয়া- ৩০ খন্ডে বিরাট ভলিউমে ছাঁপা হয়েছে। এর বর্তমান হাদীয়া ৩০,০০০/= (ত্রিশ হাজার) টাকা। এই দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দী ব্যাপী সময়ে আ’লা হযরত জ্ঞানের ৫৫ টি শাখায় প্রায় ১৫০০ কিতাব রচনা করেছেন। আ’লা হযরতের জীবনী গবেষক ডঃ মাসউদ আহমদ বলেন শুধু হাদীসের ব্যাখ্যা গ্রন্থ বা টীকা গ্রন্থের সংখ্যাই ৪৬টি। পবিত্র কালাম মজিদের যে অনুবাদ তিনি রচনা করেছেন-তা অতুলনীয় ও নির্ভুল। এমনকি-গতিশীল বিজ্ঞানেও আ’লা হযরতের অনুবাদের ভুল প্রমাণ করতে পারেনি। তিনি অনুবাদের নাম রেখেছেন“কানযুল ঈমান” বা ঈমানের খনি। কোরআন মজিদের আকায়েদ সংক্রান্ত আয়াতসমূহের সঠিক অনুবাদ একমাত্র কানযুল ঈমানেই পাওয়া যায়। অন্যত্র তা খুবই বিরল। এজন্যই সৌদী সরকার কানযুল ঈমানের বড়ৎ শত্রু। কেননা, এতে তাদের কৃত অনুবাদের ও আকায়েদের অসারতা ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কানযুল ঈমানের বাংলা অনুবাদ বের হয়েছে চট্টগ্রামে থেকে স্নেহভাজন মাওলানা আবদুল মান্নান কর্তৃক। 
জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় আ’লা হযরতের অবদান :
জ্ঞান তাপস আ’লা হযরত (রহঃ) বিভিন্ন ওস্তাদ ব আপন প্রকৃতিগত প্রতিভার মাধ্যমে যে সব বিদ্যায় পারদর্শিতা লাভ করেছিলেন- তার সংখ্যা ৫৫টি। তিনি নিজেই এসব বিদ্যার একটি তালিকা তৈরী করে ১৩২৪ হিজরীতে মক্কা শরীফের মুফতী খলিল মক্কী (রহঃ)-এর কাছে পেশ করেছিলেন এবং এগুলোর এযাযত বা অনুমতি সনদও লাভ করেছিলেন। যারা হাকিমুল উম্মত-হাকিমুল উম্মত বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে যায় এবং ৯০০ কিতাবের রচয়িতা বলে তাকে সমাজে বিরাটভাবে তুলে ধরতে চায়, তাদের জানার জন্যই আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (রহঃ)-এর জ্ঞান শাখার সংখ্যা ও তার প্রণীত গ্রন্থের কিছু পরিচয় তুলে ধরা একান্ত আবশ্যক বলে মনে করছি। 
আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী (রহঃ) পরিচিতি
আ’লা হযরতের অর্জিত বিদ্যার সংখ্যা ও তালিকা :-
১.ইলমুল কোরআন, ২. ইলমুল হাদীস, ৩. ইলমে তাফসীর, ৪. ইলমে উসুলে হাদীস, ৫. ইলমে আসমাউল রিজাল (হাদীস বর্র্ণনাকারীদের জীবনী), ৬. ইলমে ফিক্হ, ৭. ইলমে উসুলে ফিক্হ, ৮. ইলমে আকাঈদ ওয়াল কালাম (দর্শন), ৯. ইলমে ফারায়েজ, ১০. ইলমে নাহু, ১১. ইলমে সরফ,১২. ইলমে মা’আনী,১৩. ইলমে বয়ান, ১৪. ইলমে বদী,১৫. ইলমে আরুজ, ১৬. ইলমে মোনাযারা, ১৭. ইলমে মানতিক, ১৮. ইলমুল আদব (সর্ব বিষয়ের সাহিত্য), ১৯. ইলমে ফিকহে হানাফী, ২০. ইলমে জদল মহাযযব, ২১. ইলমে ফালছাফা,২২. ইলমে হিসাব (গণিত), ২৩. ইলমে হাইয়াত জোতির্বিদ্যা), ২৪. ইলমে হান্দাসা (জ্যামিতি), ২৫. ইলমে ক্বেরাত, ২৬. ইলমে তাজবিদ, ২৭. ইলমে তাসাউফ (সুফীতত্ত্ব), ২৮. ইলমে সুলুক (তরিকত জগতে ভ্রমণ), ২৯. ইলমে আখলাক, ৩০. ইলমে সিয়াম, ৩১. ইলমে তারিখ (ইতিহাস), ৩২. ইলমে লুগাত (অভিধান), ৩৩. এ্যারিস মাতী ক্বী, ৩৪. যবর ও মোকাবালাহ, ৩৫. হিসাবে সিত্তানী, ৩৬. লগারিদম, ৩৭. ইলমে তাওকীত (সময় নির্দ্ধরণ বিদ্যা), ৩৮. মুনাযারা ও মারাযাহ, ৩৯. ইলমুল আকর, ৪০.যীজাত, ৪১. মুছাল্লাছে কুরভী, ৪২. মুছাল্লাছে মোসাত্তাহ, ৪৩. হাইয়াতে জাদীদা, ৪৪. মুরাব্বাআত, ৪৫. ইলমে জফর, ৪৬. ইলমে যায়েরজাহ, ৪৭. আরবী পদ্য, ৪৮. ফার্সী পদ্য, ৪৯.হিন্দী পদ্য, ৫০. আরবী গদ্য, ৫১. ফার্সী গদ্য, ৫২.হিন্দী গদ্য, ৫৩. কেতাবাত বা লিখন পদ্ধতি, ৫৪. খত্তে নাস্তালীক পদ্ধতির লিখন (ক্যালিওগ্রাফী), ৫৫. তাজবীদসহ ক্বেরাত। 

উপরোক্ত ৫৫টি বিদ্যায় আ’লা হযরতের পান্ডিত্যের ব্যাপারে একটি ঘটনা উল্লেখ করার মত। ১৩২৯ হিজরী মোতাবেক ১৯১১ ঈসায়ী সালে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলার ডঃ যিয়াউদ্দীন সাহেব রামপুর (ইউপি) হতে প্রকাশিত দবদবা-ই-সিকান্দরী নামক পত্রিকায় চতুর্ভূজ সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন প্রচার করেন। আ’লা হযরত সাথে সাথে উক্ত প্রশ্নের সমাধান দিয়ে অন্য একটি চতুর্ভূজ সংক্রান্ত প্রশ্ন তার উদ্দেশ্যে ছুড়ে মারেন। স্যার যিয়াউদ্দীন এতে হতবাক হয়ে যান-একজন আরবী জানা আলেম কি করে এই বিদ্যা অর্জন করলেন ? এই ঘটনায় স্যার যিয়াউদ্দীন আ’লা হযরতের ভক্ত হয়ে পড়েন। 
আর একটি ঘটনা। গণিত সংক্রান্ত একটি বিষয়ের সমাধানের জন্য স্যার যিয়াউদ্দীন বড় পেরেশান হয়ে পড়েন। অতঃপর প্রফেসার সুলাইমান আশরাফের অনুরোধে তিনি বেরেলী শরীফ আগমন করে অংকটি আ’লা হযরতের দরবারে পেশ করেন। আ’লা হযরত নিমিষের মধ্যে উক্ত অংকের সমাধান পেশ করে দেন। এতে স্যার যিয়াউদ্দিন হতবাক হয়ে যান এবং এক সময় মন্তব্য করেন - “মনে হয় আ’লা হযরত এই বিষয়ে পূর্বেই গবেষণা করে সমাধান তৈরী করে রেখেছিলেন। বর্তমানে ভারতবর্ষে এটা জানার মত লোক নেই”। 
(হায়াতে আ’লা হযরত)।

জামাতে ইসলামীর তৎকালীন নায়েবে আমীর কাউছার নিয়াজী বলেন, “আমি মনে করেছিরাম - ইসলামের কোন ইলম সম্পর্কে জানা আমার বাকী নেই। কিন্তু আ’লা হযরতের ফতোয়ায়ে রেজভীয়া পড়ে মনে হলো- আমি ইসলামি জ্ঞান সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি”। (আ’লা হযরত কনফারেন্স করাচী-কাউছার নিয়াজীর পঠিত প্রবন্ধ)।বিরুদ্ধ ভাবাপন্ন দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রধান মোহাদ্দেছ ইদ্রিস কান্দুলভী আ’লা হযরতের বিখ্যাত নাতিয়া কালাম- “মোস্তাফা জানে রহমত পে লাখো ছালাম” আদ্যেপান্ত পাঠ করে ভাবাবেগে বলে উঠেন “হাশরের দিনে ইমাম আহমদ রেযা (রহঃ) তাঁর অতুলনীয় এই একটি অনুপম কসিদার কারণেই নাজাত পেয়ে যেতে পারেন। (আ’লা হযরত করফারেন্স, করাচী-কাউছার নিয়াজীর জীবনী।)

আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (রহঃ)-এর কতিপয় গ্রন্থ পর্যালোচনা :-আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (রহঃ) দেড় হাজার কিতাব রচনা করে অতীতের অনেক রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন। এক একটি কিতাবের পরিধিও ছিল উল্লেখযোগ্য। ফতোয়ায়ে রেজভীয়া ও কানযুল ঈমান গ্রন্থদ্বয়ই তার প্রমাণ। জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় আ’লা হযরতের রচিত কিতাবসমূহের মধ্যে নিম্মলিখিত কয়েকটি বহুল পরিচিত ও আলোচিত। 

ফতোয়ায়ে রেজভীয়া :
১২৮৬ হিজরী থেকে ১৩৪০ হিজরী পর্যন্ত লিখিত বিভিন্ন বিষয়ের ফতোয়ার সমষ্টি। বর্তমানে ৩০ ভলিউমে সমাপ্ত। হাদিয়া প্রায় ৩০,০০০/= (ত্রিশ হাজার) টাকা। ফিকহী মাছায়েলের এমন কোন শাখা নেই - যা ফতোয়ায়ে রিজভীয়াতে বর্ণিত হয়নি। এক একটি মাসআলার উত্তরে তিনি নির্ভরযোগ্য ফিকাহর অসংখ্য দলীল এ রেফারেন্স উল্লেখ করে প্রশ্নকৃত মাসআলার উত্তর দিয়েছেন। যে কোন দক্ষ আলেম ও মুফতী ফতোয়ায়ে রেজভীয়া পাঠ করলে দলীলের সমাহার দেখে তাকে স্তম্ভিত হয়ে যেতে হয়। অতি সুহ্ম ও চুলচেরা বিশ্লেষণ সহকারে তিনি প্রশ্নসমূহের উত্তর দিতেন। ফতোয়ায়ে রশিদিয়া, বেহেস্তী জেওর নিয়ে বিরুদ্ধবাদীরা গৌরব করে- অথচ এগুলোতে শুধু সংক্ষেপেই উত্তর দেয়া আছে। দলীল খুব কমই দেখা যায়। চোখ বুঝে ভক্তরা বিশ্বাস করে নেন। কিন্তু আ’লা হযরতের প্রত্যেকটি ফতোয়ায় অসংখ্য দলীল আদিল্লা দ্বারা মাসআলাটি পরিস্কার ও বোধগম্য করে তোলা হয়েছে। এখানেই আ’লা হযরতের নিরপেক্ষতার প্রমাণ পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে। 

কানযুল ঈমান:
কোরআন মজিদের প্রামাণিক ও তাফসলি ভিত্তিক উর্দ্দু অনুবাদ। আ’লা হযরত বিষয় ভিত্তিক আয়াতসমূহের একটি পৃথক তালিকা উক্ত অনুবাদে সংযুক্ত করেছেন, যাতে যে কোন বিষয়ে একজন জ্ঞানী ও গবেষক অতি সহজে একাধিক আয়াতের সন্ধান করে নিতে পারেন। বর্তমানে কানযুল ঈমান ও পার্শ্ব টীকা খাযায়েনুল ইরফানের বাংলা অনুবাদ করেছেন স্নেহভাজন মাওলানা আব্দুল মান্নান চট্টগ্রাম। কানযুল ঈমানের অনুবাদ অন্যান্য ১২ জন লেখকের ১২ টি অনুবাদের সাথে তুলনা করে দেখানো হয়েছে যে, আ’লা হযরতের অনুবাদটিই সর্বোত্তম এবং ইসলামী আকিদার সাথে সমাঞ্জস্যপূর্ণ। (ইমাম আহমদ রেযা আওর উর্দু তারাজামে কোরআন কা তাকবুলী জায়েযাহ)।

আদ্‌দৌলাতুল মক্কিয়া বিল মাআদ্দাতিল গাইবিয়া :
এই গ্রন্থটি আরবীতে রচিত। আট ঘন্টা সময়ের মধ্যে আ’লা হযরত আরবের মক্কা শরীফে বসে উক্ত গ্রন্থখানা রচনা করেছেন। মক্কার গভর্ণর (শরীফ)-এর নির্দেশে আ’লা হযরত (রহঃ) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অদৃশ্য বিষয়ক এলম বা ইলমে গায়েব এর উপর দেড়শত পৃষ্ঠার উক্ত কিতাবখানা লিখে ফেলেন। গভর্ণর পান্ডুলিপি দেখে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইলমে গায়েবের দলীলাদি দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান। তিনি এই কিতাব রচনায় কোন রেফারেন্স গ্রন্থ সাহায্য নেয়ার সুযোগই পাননি। শরীফ তাঁর কুতুবখানায় সংরক্ষিত একটি হস্তলিখিত কিতাবের সাথে মিলিয়ে দেখেন-উক্ত গ্রন্থের হুবহু দলীল ও উদ্ধতিসমূহ আদদৌলতুল মক্কিয়ায় বিদ্যমান। এতে তিনি বিষয়টি বুঝতে পারলেন এবং আ’লা হযরতের হাতে বায়াআত হয়ে যান।

হুসসামুল হারামাঈন :
এই গ্রন্থখানা আ’লা হযরত “আল মো’তামাদ ওয়াল মোস্তানাদ” নামে আরবীতে রচনা করেন। এতে হিন্দুস্থানের ৫ জন আকাবিরীনে দেওবন্দ আলেমের কিতাবসমূহের বিভিন্ন উর্দ্দু উদ্ধৃতি উল্লেখ করে নীচে এগুলোর আরবী অনুবাদ করে ১৩২৪ হিজরীতে মক্কা মোয়াজ্জমা ও মদিনা মোনাওয়ারার ৩৩ জন মুফতীর খেদমতে পেশ করে তাঁদের মতামত চান। উক্ত ৫ জন দেওবন্দী ওলামাদের গ্রন্থসমূহে মন্তব্য ছিল নিম্মরূপ :
১.আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারে, ২. নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মরে পঁচে গলে মাটির সাথে মিশে গেছেন, ৩. নবীজীর এলেমের চেয়ে শয়তানের এলেম বেশী ছিল, ৪. নবীজীর ইলমে গায়েবের মত এমন ইলমে গায়েব চতুস্পদ জন্তুরও আছে, ৫.মূর্খরা বলে থাকে খাতামুন্নাবীয়ীন অর্থ-শেষনবী,কিন্তু খাতামুন্নাবীয়ীন-এর প্রকৃত অর্থ শেষ নবী নয় - বরং মূল নবী। তার পরে এক হাজার নবীর আগমন ধরে নিলেও “খাতমুন্নবীয়ীন বা মূল নবী হওয়ার ব্যাপারে কোন সমস্যা হবে না”। হারামাঈন শরিফাঈনের ৩৩ জন মুফতী উক্ত এবারতসমূহ পর্যালোচনা করে ঐগুলোর লেখকগণকে সরাসরি কাফের ঘোষনা করেন। তাঁর উক্ত ফতোয়ার নাম হয় “হুসসামুল হারমাঈন” বা মক্কা-মদিনার তীহ্ম তরবারী। এটা বাতিল পন্থীদের বিরুদ্ধে আ’লা হযরতের অবিস্মরণীয় অমর কীর্তি। হুসসামুল হারামাঈন-এর বঙ্গানুবাদ করেছেন হাফেজ মাওলানা আব্দুল করিম নঈমী (মুলফতগঞ্জ) এবং সম্পাদন করেছেন স্নেহভাজন আব্দুল মান্নান।

আল কাওকাবাতুশ শিহাবীয়া ফি রদ্দে আবিল ওয়াহাবিয়া:
ইসমাঈল দেহলভীর রচিত ৭০টি কুফরী ও বাতিল আকিদা সম্পন্ন কিতাব “তাকভীয়াতুল ঈমান” এর খন্ডনে লেখা হয়েছে উক্ত গ্রন্থ। সংক্ষেপে ওহাবী আকিদা জানতে হলে উক্তগ্রন্থ পাঠ করা উচিত। ওহাবী সম্প্রদায়ের প্রতিটি বাতিল আকিদার বিরুদ্ধে আ’লা হযরত একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। 

আ’লা হযরত (রহঃ) চতুর্দশ হিজরী শতাব্দীর মোজাদ্দেদ ও সুন্নী আকিদার একমাত্র ইমাম : 
আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা (রহঃ) এয়োদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে অর্থাৎ ১২৮৬ হিজরী সাল হতে তাঁর তাজদিদী কার্যক্রম শুরু করেন এবং চতুর্দশ হিজরী শতাব্দীর শেষভাগে অর্থাৎ ১২৮৬ হিজরী সাল হতে তাঁর তাজদিদী কার্যক্রম শুরু করেন এবং চতুর্দশ হিজরী শতাব্দীর প্রথম দশকে তাঁর তাজদিদী কার্যক্রম জনসমক্ষে প্রকাশ পেতে থাকে। একজন মুজাদ্দিদ হওয়ার জন্য তাঁর এলেমের প্রাধান্য বিস্তার, এক শতাব্দীর শেষ ও পরবর্তী শতাব্দীর প্রথম ভাগে সংস্কার কার্যক্রম প্রকাশ এবং এর প্রতি জনগণের স্বীকৃতি প্রদান শর্ত। আ’লা হযরতের মধ্যে এই উভয়বিদ শর্তই বিদ্যমান ছিল বলে সে যুগের আরব ও আজমের মশহুর ওলামায়ে কেরাম ও মাশায়েখীনে ইজাম তাঁর মোজাদ্দেদ হওয়ার স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। বরিশাল জেলার নেছারাবাদের মাওলানা আজিজুর রহমান নেছারাবাদী (কায়েদ সাহেব) তার মুজাদ্দিদ গ্রন্থে আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (রহঃ) কে চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ বলে স্বীকার করেছেন। তিনি তৎসঙ্গে প্রতি শতাব্দীর একজন করে মোট ১৩ জন মুজাদ্দিদের তালিকাও উক্ত গ্রন্থে প্রকাশ করেছেন।মক্কা মদিনাসহ সুন্নী জগতের ওলামাগণ বিনা ইখতিলাফে আ’লা হযরতকে চতুর্দশ শতাব্দীর সুন্নী মুজাদ্দিদ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। 
আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী (রহঃ) পরিচিতি

আ’লা হযরতের সংস্কার কার্যক্রমের প্রধান দিক ছিল আকায়েদ সংশোধন করা। ওহাবী-খারেজী-নজদী সম্প্রদায় আরব আজমসহ সর্বত্র বাতিল আকিদা সৃষ্টি করে মুসলমানদেরকে বিভ্রান্তির অতল গহবরে নিক্ষেপ করেছিল। তৎকালে তারা ইংরেজদের মদদে নিত্য নতুন বাতিল আকিদার কিতাব রচনা করে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে লাগলো। ফলে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হলো। ওহাবী, কাদিয়ানী, বাহায়ী সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হলো। মুসলমান সমাজ শতধা বিভক্ত হয়ে পড়লো। একদিকে মূল ইসলামী আকিদায় বিশ্বাসী সুন্নী মুসলমান. অন্যদিকে নব্য সৃষ্ট ওহাবী, খারেজী, কাদিয়ানী, বাহায়ী ফের্কার নতুন সম্প্রদায়সমূহ আকদাগত দ্বন্দে লিপ্ত হয়ে পড়লো। এই দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে ইংরেজরা আরবে ও ভারতে তাদের প্রভুত্ব বিস্তার করলো। ওহাবীরা কিতাবুত তাওহীদ, আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা (রহঃ) এয়োদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে অর্থাৎ ১২৮৬ হিজরী সাল হতে তাঁর তাজদিদী কার্যক্রম শুরু করেন এবং চতুর্দশ হিজরী শতাব্দীর শেষভাগে অর্থাৎ ১২৮৬ হিজরী সাল হতে তাঁর তাজদিদী কার্যক্রম শুরু করেন এবং চতুর্দশ হিজরী শতাব্দীর প্রথম দশকে তাঁর তাজদিদী কার্যক্রম জনসমক্ষে প্রকাশ পেতে থাকে। একজন মুজাদ্দিদ হওয়ার জন্য তাঁর এলেমের প্রাধান্য বিস্তার, এক শতাব্দীর শেষ ও পরবর্তী শতাব্দীর প্রথম ভাগে সংস্কার কার্যক্রম প্রকাশ এবং এর প্রতি জনগণের স্বীকৃতি প্রদান শর্ত। আ’লা হযরতের মধ্যে এই উভয়বিদ শর্তই বিদ্যমান ছিল বলে সে যুগের আরব ও আজমের মশহুর ওলামায়ে কেরাম ও মাশায়েখীনে ইজাম তাঁর মোজাদ্দেদ হওয়ার  স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। বরিশাল জেলার নেছারাবাদের মাওলানা আজিজুর রহমান নেছারাবাদী (কায়েদ সাহেব) তার মুজাদ্দিদ গ্রন্থে আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান তাকভীয়াতুল ঈমান, তাহযিরুন্নাছ, সিরাতে মোস্তাকিম, ফতোয়ায়ে রশিদিয়া, বারহীনে কাতেয়া, বেহেস্তী জেওর, হেফযুল ঈমান, ইসলামের রুছুম-প্রভৃতি বাতিল ও ক্রিয়াকর্মকে শিরক ও বিদআত বলে প্রচার করতে লাগলো। তারা ঘোষণা করলো- “যারা রাসূলকে হায়াতুন্নবী মানবে, ইয়া রাসূলাল্লাহ বলে সম্বোধন করবে, মিলাদ কিয়াম করবে, রাসূলকে হাযির নাযির বলে বিশ্বাস করবে, নামাযে রাসূলকে ছালাম করার সময় রাসূলের খেয়াল করবে, যারা“খাতাবুন্নবীয়ীন” শব্দের অর্থ করবে শেষ নবী বলে, যারা আযানের দোয়ায় হাত তুলবে, যারা নবী বখ্শ, গোলাম কাদের, গোলাম জিলানী ও গোলাম আলী ইত্যাদি নাম রাখবে- তারা গোমরাহ, বেদয়াতী ও মুশরিক”। এভাবে ওহাবীরা ভারতের সর্বত্র শিরক বিদআতের বাজার বসিয়ে সুন্নী মুসলমানকে মুশরিক ও বিদআতী বলে আখ্যায়িত করতে লাগলো। ফলে বিভেদ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামার সূত্রপাত হলো। এই সুযোগে ইংরেজরা হিন্দুদের সহায়তায় মুসলমানদেরকে নাস্তনাবুদ করে ছাড়লো। উপরে উল্লেখিত ওহাবী কিতাবসমূহ শিরক-বিদআতের উপরোক্ত ঘোষণাগুলো লিপিবদ্ধ আছে এবং এখনো কাউমী খারেজী মাদ্রাসায় এগুলোর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে।ভারতীয় মুসলমানদের এই ঘোর দুর্দিনে যিনি কলম তরবারীর মাধ্যমে বাতিল পন্থীদের উক্ত বে-দ্বীনি লেখনীর মোকাবেলা করে এগুলোকে কচুকাটা করেন সরল ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণকে দাঁতভাঙ্গা জবাব প্রদান করে ইসলামী আকায়েদকে স্বস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেন-তিনিই হচ্ছেন হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দেদ ও ইমামে আহলে সুন্নাত আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী (রহঃ)। তাঁর আকায়েদ গ্রন্থগুলো পাঠ করেই আজ আমরা নতুন উদ্যমে বাতিলের মোকাবেলায় সামনে এগিয়ে চলেছি। এদেশে তৈরী হচ্ছে সুন্নী আদর্শের নতুন কাফেলা-আ’লা হযরতের আদর্শের অসংখ্য সৈনিক। আ’লা হযরত (রহঃ) আমাদের ঈমান ও আকায়েদ রক্ষাকারী, বাতিল আকি¦দা হতে মুক্তিদাতা।

তিনি জীবদ্দশায়ই তার আদর্শ সৈনিক তৈরী করে গিয়েছেন। সদরুল আফাযেল মওলানা নাঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী, হামেদ রেযা খান, সদরুশ শরীয়াহ হযরত মাওলানা আমজাদ আলী, মালিকুল ওলামা মাওলানা যখরুদ্দীন বিহারী-প্রমুখ শাগরিদ মনিষীগণের প্রত্যেকেই ছিলেন যুগের ওহাবী-শিকারী বাজপাখী এবং কলম সম্রাট। সদরুল আফাযেলের আতইয়াবুল বয়ান, তাফসীরে খাজায়েনুল ইরফান, মাওলানা আমজাদ আলীর বাহারেশরীয়ত, মাওলানা হাশমত আলীর ইসলাহে বেহেস্তী জেওর-প্রভৃতি গ্রন্থ ওহাবী কেল্লায় এক একটি এটম বোমা  স্বরূপ। 

আ’লা হযরত (রহঃ) আধ্যাত্মিক জগতের এক কামেল মহাপুরুষ ছিলেন। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ,আরব, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকা সর্বত্র ছড়িয়ে আছে আর অসংখ্য মুরীদ ও ভক্ত। জববলপুর, বোম্বাই ও মাদ্রাজে তার মুরীদের সংখ্যা সর্বাধিক। অর্ধশতাব্দী ব্যাপী কলমযুদ্ধ চালিয়ে বাতিলের কিল্লায় মারাত্মক আঘাত হেনে এবং দ্বীন ও সুন্নীয়তের মশাল জ্বালিয়ে আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (রহঃ) ২৫ শে সফর১৩৪০ হিজরী মোতাবেক ১৯২১ খৃষ্টাব্দে ৬৮ বৎসর বয়সে পরপারে মাওলায়ে হাকিকী ও মাহবুবে এলাহী প্রেমাস্পদের সান্নিধ্যে গমন করেন। প্রতি বৎসর বেরেলী শরীফে তাঁর ওফাত দিবসে অগণিত ভক্তগণের উপস্থিতিতে উরছে আ’লা হযরত পালিত হয়। আল্লাহ তা’য়ালা আ’লা হযরত (রহঃ) কে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন। 

কানজুল ঈমান (কুরআনের অনুবাদ)[সম্পাদনা]


কানজুল ঈমানে সুরা ফাতিহার ব্যাখ্যা
কানজুল ঈমান (Urdu and Arabicﮐﻨﺰﺍﻻﯾﻤﺎﻥ ) হল সুন্নি মুসলিম আহমদ রেজা খাঁন কর্তৃক ১৯১০ সালে কোরআন শরিফের উর্দূ ভাষায় অনূদিত গ্রন্থ। এটি হানাফী মাযহাবের আইনসমুহকে সমর্থন করে[১০]। এটি ভারত উপমহাদেশের সর্বাধিক পঠিত কোরআনের অনুবাদ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]এই গ্রন্থটি ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ইংরেজী, হিন্দি, বাংলা, ডাচ, তুর্কী, সিন্ধি, গুজরাটী এবং পশতু। বাংলা ভাষায় কানযুল ঈমান গ্রন্থটি অনুবাদ করেছেন আল্লামা এম. এ. মান্নান

ফতোয়া-ই-রেজভিয়া[সম্পাদনা]


ফতোয়া-ই-রেজভিয়া
এই ফতোয়া গ্রন্থটির ব্যাপারে প্রথম অরুন শৌরি তার গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, এটি একটি ফতোয়া বা ইসলামি নিয়মকানুন সমৃদ্ধ গ্রন্থ।[১১] ১২ খন্ডের এই ফতোয়া গ্রন্থটি লেখকের জীবদ্দশায় তার ভাই সর্ব প্রথম হাসানি প্রেস থেকে প্রকাশ করেন, এছাড়া ও বিভিন্ন ফতোয়ার মাত্র দুই খন্ড তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়।[১২] বিভিন্ন সুন্নি প্রকাশনী থেকে এই গ্রন্থটি ৩০ খন্ডে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে ধর্ম থেকে শুরু করে ব্যবসা, যুদ্ধ থেকে শুরু করে বিবাহ, দৈনন্দিন জীবনের সমস্ত সমস্যার সমাধান রয়েছে।[১৩][১৪][১৫] রেযা একাডেমি ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম গ্রন্থটির বিভিন্ন খন্ড প্রকাশ করেছিল।[১৬]

হাদায়েক্বে বকশিস[সম্পাদনা]


হাদায়েক্বে বকশিস
এ গ্রন্থটি আলা হযরতের নাত সমগ্র। নবী মুহাম্মদ (সা.) নিয়ে লেখা অসংখ্য নাত এ গ্রন্থটিতে লিপিবদ্ধ আছে। আহমদ রেজা খাঁনের লেখা বিখ্যাত নাত মুস্তফা জানে রহমত পেঁ লাখো সালাম এ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।

হুসসামুল হারামাঈন[সম্পাদনা]

গ্রন্থটি আলা হযরত আল মো’তামাদ ওয়াল মোস্তানা নামে আরবিতে রচনা করেন। এতে হিন্দুস্থানের ৫ জন আকাবিরীনে দেওবন্দ ওলামার কিতাব সমূহের বিভিন্ন উর্দু উদ্ধৃতি উল্লেখ করে নিজে এগুলোর আরবী অনুবাদ করে ১৩২৪ হিজরীতে মক্কা ও মদিনার ৩৩ জন মুফতির নিকট কাছে পাঠিয়ে তাঁদের মতামত চান। হারামাঈন শরীফাইনের ৩৩ জন মুফতি গ্রন্থটি পর্যালোচনা করে উক্ত ৫ জন দেওবন্দ ওলামাকে কাফের ঘোষণা করেন। মুফতিগণের উক্ত ফতোয়ার নাম হয় হুসসামুল হারামাঈন বা মক্কা-মদিনার তীক্ষ্ণ তরবারী। অন্যদিকে দেওবন্দ আলেমগণ দাবি করেছেন যে, আহমদ রেজা খান তাদের নামে মিথ্যা কথা লিখে মক্কা ও মদিনার মুফতিদের নিকট পাঠিয়েছিল।[১৭]

অন্যান্য বই[সম্পাদনা]

  • আল মো’তামাদ ওয়াল মোস্তানা
  • আল আমান ও ওয়া উলা
  • আলকাউকাবাতুস সাহাবিয়া
  • আল ইস্তিমাদ
  • আল ফুয়োজুল মাক্কীয়া
  • আল মিলাদুন নবিয়াহ
  • ফাউজে মুবিন দার হারকাতে যামীন
  • সুবহানুস সুবহ
  • সাল্লুস সায় য়াফুল হিন্দীয়া
  • আয যুবদাতুয যাক্কিয়া
  • আবনা উল মুস্তাফা
  • আনগুত্তে চুম্মে কা মাসলা

বাংলায় অনূদিত কিতাব[সম্পাদনা]

  • তফসীরে খাজাইনুল ইরফান ও তরজুমায়ে কানজুল ইমান
  • তফসীরে নুরুল ইরফান ও তরজুমায়ে কানজুল ইমান
  • ইরফানে শরীয়ত
  • খতমে নবুওয়াত
  • আহকামে শরীয়ত
  • নিদানকালে আশীর্বাদ
  • গাউসুল আজম ও গাউছিয়াত
  • কুরআন–হাদিসের আলোকে শাফায়াত
  • দৃঢ় বিশ্বাসের চেতনায় নবীকূল সম্রাট (ﷺ)
  • নুরুল মোস্তফা (ﷺ)
  • মাতা-পিতার হক (হাক্কুল-ওয়ালেদাইন)
  • প্রিয়নবীর পূর্ব পুরূষগণের ইসলাম
  • আদ্দৌলাতুল মাক্কিয়াহ বিল মাদ্দাতিল গায়বিয়াহ
  • হুসামুল হারামাইন
  • শরীয়ত ও তরীক্বত
  • ওয়াহাবীদের ভ্রান্ত আক্বীদাহ ও তাদের বিধান
  • ইরশাদে আ'লা হযরত (রহঃ)
  • আল অজীফাতুল কারীমা (বঙ্গানুবাদ)
  • সত্যের সন্ধান ও কবরে আজান
  • তাজিমী সিজদা
  • বায়'আত ও খিলাফতের বিধান
  • ফেরেশতাহ সৃষ্টির ইতিবৃত্ত
  • ফতোয়ায়ে আফ্রিকা
  • ইমানের সঠিক বিশ্লেষণ
  • তাহমিদে ইমান বিদআতিল কুরআন
  • রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর অবমাননা কারীর শরয়ী সাজা
  • কালামে রেযা
  • (হাদায়েকে বখশিশ থেকে নির্বাচিত নাত ও কাব্যানুবাদ)
  • কালামুল ইমামে ইমামুল কালাম (মোস্তফা জানে রহমাত পে লাখো সালাম এর কাব্যানুবাদ)

সমাধিস্থল[সম্পাদনা]


আ'লা হযরতের মাজার শরীফের সম্মুখভাগ
আ'লা হযরতের সমাধিস্থল ভারতের উত্তর প্রদেশের বেরেলী জেলার কারোলানে অবস্থিত। এটি দরগাহ-এ-আলা হযরত নামে পরিচিত।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

  • দরগাহ-এ-আলা হযরত
  • আখতার রেজা খান
  • আ'লা হযরত এক্সপ্রেস

  • ফতোয়া-ই-রেজভিয়া

    উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
    Jump to navigationJump to search
    ফতোয়া-ই-রেজভিয়া
    فتاویٰ رضویہ
    Fatawarazavia.jpg
    লেখকআহমেদ রেজা খান
    দেশভারত
    ভাষাউর্দুফার্সিআরবি
    প্রকাশিত১৯১১ - ২০০৫
    প্রকাশকভারত ও পাকিস্তানের বহু প্রকাশক
    পৃষ্ঠাসংখ্যা৩০ খন্ড, ২২,০০০+ পৃষ্ঠা। ছয়হাজার আটশত চল্লিশটি প্রশ্ন ও উত্তর।
    আইএসবিএন2-7451-7204-2 আরবি সংস্করণ
    ফতোয়া-ই রেজভিয়া বা ফতোয়া-ই রাদাভিয়া বেরলভি মতাবলম্বী মুসলিমদের অন্যতম প্রধান ফতোয়া গ্রন্থ।[১][২] এটি সুন্নি মুসলিম আলেমআহমদ রেজা খান বেরলভী ১৯ শতাব্দীতে সম্পাদন করেন।[৩][৪]
    এই ফতোয়া গ্রন্থটির ব্যাপারে প্রথম অরুন শৌরি তার গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, এটি একটি ফতোয়া বা ইসলামি নিয়মকানুন সমৃদ্ধ গ্রন্থ।[৫] ১২ খন্ডের এই ফতোয়া গ্রন্থটি লেখকের জীবদ্দশায় তার ভাই সর্ব প্রথম হাসানি প্রেস থেকে প্রকাশ করেন, এছাড়া ও বিভিন্ন ফতোয়ার মাত্র দুই খন্ড তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়।[৬]
    বিভিন্ন সুন্নি প্রকাশনী থেকে এই গ্রন্থটি ৩০ খন্ডে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে ধর্ম থেকে শুরু করে ব্যবসা, যুদ্ধ থেকে শুরু করে বিবাহ, দৈনিন্দিন জীবনের সমস্ত সমস্যার সমাধান রয়েছে।[৭][৮][৯] রেযা একাডেমি ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম গ্রন্থটির বিভিন্ন খন্ড প্রকাশ করেছিল।[১০]

আলা হযরতের প্রসিদ্ধ কিতাব


আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী (রহঃ) দেড় হাজার কিতাব রচনা করে অতীতের অনেক রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন। এক একটি কিতাবের পরিধিও ছিল উল্লেখযোগ্য। জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় রচিত আলা হযরতের কিতাব সমূহের মধ্যে নিম্নলিখিত কয়েকটি বহুল আলোচিত। 

ফতোয়ায়ে রেজভীয়াঃ  
১২৮৬ হিজরী থেকে ১৩৪০ হিজরী পর্যন্ত লিখিত বিভিন্ন বিষয়ের ফতোয়ার সমষ্টি। ১২ ভলিউমে সমাপ্ত। ফিকহী মাসায়েলের এমন কোন শাখা নেই- যা ফতোয়ায়ে রেজভিয়্যাতে বর্ণিত হয়নি। এক একটি মাসআলার উত্তরে তিনি নির্ভরযোগ্য ফিকাহর অসংখ্য দলিল উল্লেখ করে প্রশ্নকৃত মাসআলার উত্তর দিয়েছেন।

কানযুল ঈমানঃ 
কোরআন মজিদের প্রামাণিক ও তাফসীর ভিত্তিক উর্দ্দু অনুবাদ। আলা হযরত বিষয় ভিত্তিক আয়াত সমূহের একটি পৃথক তালিকাও উক্ত অনুবাদে সংযুক্ত করেছেন, যাতে যে কোন বিষয়ে একজন জ্ঞানী ও গবেষক অতি সহজে একাধিক আয়াতের সন্ধান করে নিতে পারেন।

আদ দৌলাতুল মাক্কিয়াহ বিল মাদ্দাতিল গাইবিয়্যাঃ  
এই গ্রন্থটি আরবীতে রচিত। মাত্র আট ঘন্টা সময়ের মধ্যে আলা হযরত আরবের মক্কা শরীফের জেলখানায় বসে উক্ত গ্রন্থখানা রচনা করেছেন। মক্কার গভর্ণর এর নির্দেশে আলা হযরত নবী করীম (সাঃ) এর এলমে গায়েবের উপর দেড়শত পৃষ্ঠার উক্ত কিতাবখানা লিখে ফেলেন। উক্ত গ্রন্থের পান্ডুলিপি দেখে হারামাঈন শরীফাইনের বহু আলেম ও মুফতীগণ আলা হযরতের হাতে বায়আত হয়ে যান। 

হুসসামুল হারামাঈনঃ  
এই গ্রন্থখানা আলা হযরত “আল মো’তামাদ ওয়াল মোস্তানাদ” নামে আরবীতে রচনা করেন। এতে হিন্দুস্থানের ৫ জন আকাবিরীনে দেওবন্দ ওলামার কিতাব সমূহের বিভিন্ন উর্দু উদ্ধৃতি উল্লেখ করে নীচে এগুলোর আরবী অনুবাদ করে ১৩২৪ হিজরীতে মক্কা মোয়াজ্জামা ও মদিনা মোনাওয়ারার ৩৩ জন মুফতীর খেদমতে পেশ করে তাদের মতামত চান। হারামাঈন শরীফাইনের ৩৩ জন মুফতী উক্ত আরবী এবারত সমূহ পর্যালোচনা করে ঐগুলোর লেখকগণকে সরাসরি কাফের ঘোষনা করেন। তাদের উক্ত ফতোয়ার নাম হয় “হুসসামুল হারামাঈন” বা মক্কা-মদিনার তীক্ষ্ণ তরবারী।

আল কাওকাবাতুশ শিবাবীয়া ফি রদ্দে আবিল ওয়াহাবিয়াঃ  
ইসমাঈদ দেহলভীর রচিত ৭০টি কুফরী ও বাতিল আকিদা সম্পন্ন কিতাব “তাকভীয়াতুল ঈমান” এর খন্ডনে লেখা হয়েছে উক্ত গ্রন্থ। সংক্ষেপে ওহাবী আকিদা জানতে হলে উক্ত গ্রন্থ পাঠ করা উচিত। 

ফতোয়ায়ে আফ্রিকাঃ 

আহকামে শরীয়তঃ 

ইমাম আহমদ রেযা ও তাঁর সংস্কারকর্ম

images (4)লেখক: পীরে তরিক্বত আল্লামা হারুনুর রশিদ রেজভী
খলিফায়ে দরবারে আ‘লা হযরত, প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত।

ইতিহাসের এক ক্রান্তিকালে উপমহাদেশ যখন দুর্দান্ত প্রতাপশালী ইংরেজ শাসনের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত। ইসলাম ও মুসলমানদের এ দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে সিপাহী বিপ্লবের পূর্বাহ্নে ১৮৫৬ সালের ১৪ জুন, ১২৭২ হিজরী ১০ শাওয়াল, শনিবার ভারতের উত্তর প্রদেশের বেরেলী শহরে সওদাগরা নামক মহল্লায় স্বনামধন্য খান পরিবারে ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলাইহি জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ব পুরুষগণ কাবুলের কান্দাহার প্রদেশের অধিবাসী ছিলেন। হযরত মাওলানা সাঈদ উল্লাহ্ খান রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন কান্দাহারের এক যুগশ্রেষ্ঠ আলিম ও বুযুর্গ ব্যক্তি। তিনি তথাকার এক সম্ভ্রান্ত পাঠান গোত্রের বংশধর। মোঘল আমলে তিনি সুলতান মুহাম্মদ শাহ্ এবং নাসির শাহ্ এর সঙ্গে লাহোর আগমন করেন। সেখানে তিনি পরপর কয়েকটি সরকারি উচ্চপদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। লাহোরের শীষমহল তাঁরই জায়গীর ছিল। পরবর্তীতে তিনি লাহোর হতে দিল্লিতে চলে এলে সেখানেও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ছেলে সা‘আদত ইয়ার খান মোঘল সম্রাজ্যের এক দিগি¦জয়ী সেনাপতি ছিলেন। তাঁরই এক ছেলে আযম খান ভারতের উত্তর প্রদেশ বেরেলিতে চলে আসেন। কিছুদিন সরকারি দায়িত্ব পালনের পর তিনি দুনিয়া বিমুখ হয়ে আধ্যাত্মিক সাধনায় মগ্ন হয়ে পড়েন এবং বেরেলিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের সিন্ধান্ত নেন। তাঁর পুত্র হাফেয কাযেম আলী খান ছিলেন একজন বিশিষ্ট জমিদার। আটটি পরগণার জায়গীর তাঁরই হাতে ছিল। তাঁরই পুত্র রেযা আলী খান যুগশ্রেষ্ঠ আলেম ও বুযুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। যিনি জেনারেল বখত খানের সাথে ১২৫০ হিজরিতে (১৮৩৪) ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। জেনারেল হার্টসন মাওলানা রেযা আলী খানের শিরোচ্ছেদের বিনিময়ে তৎকালীন পাঁচশ টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করেন। এক ইংরেজ ঐতিহাসিক লিখেছেন যে- Raza Ali Khan did his best against English domination and supported the freedom fighters with horses and weapons (Asad Nizami, Hadrat Mowlana) Shah Raza Ali Sahib, iham (bahawlpur 21 November 199). অর্থাৎ, রেযা আলী খান ইংরেজদের বিরোধিতায় নিজের সর্বশক্তি ব্যয় করেন। আর আযাদী আন্দোলনের সৈনিকদেরকে ঘোড়া এবং অস্ত্রশস্ত্র দ্বারা সাহায্য করেন। এ বুযুর্গ মুজাহিদ রেযা আলী খানের পুত্র হলেন আল্লামা নক্বী আলী খান। যিনি সে যুগের একজন স্বনামধন্য পন্ডিত, দার্শনিক, ফক্বীহ ও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বুযুর্গ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আর ইমাম আহমদ রেযা খান রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন তাঁরই সন্তান। এভাবে তার পূর্ব পুরুষদের প্রত্যেকেই স্ব স্ব যুগে জ্ঞান ও আমলের মূর্ত প্রতীক ছিলেন। ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র জন্মের পর তাঁর নাম ‘মুহাম্মদ’রাখা হয়। সংখ্যাতাত্ত্বিক (আবজাদী) নাম ‘আল্ মুখতার’ (১২৭২হি/১৮৫৬খ্রি)। কিন্তু তাঁর সম্মানিত পিতামহ মাওলানা রেযা আলী খান ‘আহমদ রেযা’ নামে তাঁর নাম নির্বাচিত করেন। পরবর্তীতে তিনি নিজেই স্বীয় নামের পূর্বে ‘আবদুল মুস্তফা’ (মোস্তফার গোলাম) সংযোজন করলেন। তাঁর রচিত না‘তিয়্যা কাব্যসম্ভারের এক স্থানে তিনি নিজেকে সম্বোধন করে লিখেছেন যে,
خوف نہ رکھ ذرا رضا تو تو ہے عبد مصطفی * تیرے لئے آمان ہے تيرے لئے آمان ہے
হে রেযা! তুমি বিন্দুমাত্র ভয় করো না, কেননা তুমিতো মুস্তফার গোলাম তোমার জন্যই নিরাপদ-তোমার জন্যই নিরাপদ।
ইমাম আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি’র স্মরণশক্তি ছিল বিস্ময়কর। চার বছর বয়সে পবিত্র কুরআন দেখে পঠন সমাপ্ত করেন। মকতবে প্রথম পাঠের দিনের ঘটনা থেকেই তাঁর এ অসাধারণ মেধাশক্তির প্রমাণ পাওয়া যায়। ঘটনাটা হল-মক্তবে ওস্তাদজি তাঁকে আরবি বর্ণমালা পাঠদান করছিলেন। তিনিও ওস্তাদজির মুখে মুখে আলিফ, বা, তা, সা, পড়ছিলেন; কিন্তু যুক্তাক্ষর ‘লাম-আলিফ’ পর্যন্ত এসে থেমে যান। ওস্তাদজি বললেন, পড়ছোনা কেন? ছোট ছেলে আহমদ রেযা উত্তরে বললেন, হুজূর! ইতিপূর্বে ‘আলিফ’ও পড়েছি ‘লাম’ও পড়েছি আবার পড়বো কেন? পাশে উপস্থিত পিতামহ তাঁকে ওস্তাদজির প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতে নির্দেশ দিলেন। নির্দেশ পেয়ে তিনি বিচলিত হলেন। পিতামহেরও বুঝতে দেরি হয়নি যে, তাঁর মনে যুক্তাক্ষরের রহস্য জানতে ভারী কৌতুহল জেগেছে। মাত্র তিন/চার বছরের সন্তানের মুখে এ অস্বাভাবিক ধরনের প্রশ্ন! যুগশ্রেষ্ঠ আল্লামা ওস্তাদ সেদিনই ধারণা করতে পেরেছিলেন যে, এ শিশুটি একদিন দেশ বরণ্যে আলেম হবে। ওস্তাদ বললেন, প্রিয় বৎস! তোমার প্রশ্ন যথার্থ। তুমি প্রথমে যে আলিফ পড়েছিলে প্রকৃতপক্ষে তা ছিল ‘হামযা’। আর এটাই হল প্রকৃত ‘আলিফ’। ‘আলিফ’ যেহেতু সর্বদা সাকিন থাকে এবং তা দ্বারা কোন পদ বা শব্দ আরম্ভ করা যায়না, সেহেতু এখানে ‘লামে’র সাথে ‘আলিফ’কে সংযুক্ত করে উচ্চারণ দেখানো হয়েছে। তখন আ‘লা হযরত ওস্তাদজিকে আবার প্রশ্ন করে বসলেন, ‘আলিফ’কে উচ্চারণ করার জন্য যদি অন্য অক্ষরের সাহায্য নিতে হয়, তবে এ‘লাম’ অক্ষরটির বৈশিষ্ট্যই বা কি? এ প্রশ্ন শুনে ওস্তাদ তাঁকে স্নেহভরে বুকে জড়িয়ে ধরলেন এবং প্রশ্নের জবাবে বললেন-বৎস! ‘লাম’ এবং ‘আলিফ’র মধ্যে বাহ্যিক সাদৃশ্য তো রয়েছে। তদুপরি উচ্চারণগত সর্ম্পক হলো ‘লাম’ শব্দের মধ্যবর্তী অক্ষর হল ‘আলিফ’ আর আলিফ উচ্চারণে মধ্যবর্তী অক্ষর পড়ে ‘লাম’। তাই ‘আলিফ এবং ‘লাম’এর মধ্যে এ নিবিড় সর্ম্পকের কারণে ‘লাম’ এর সাথে ‘আলিফ’কে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ অসাধারণ মেধা ও বিস্ময়কর স্মরণশক্তির কারণে অতি অল্প বয়সে অর্থাৎ মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শেষবর্ষের সনদ অর্জন করেন। শিক্ষা সমাপ্তির পর পরই তাঁর সম্মানিত পিতা নক্বী আলী খান রহমাতুল্লাহি আলাইহি ফতোয়া দানের দায়িত্ব তাঁকে অর্পন করেন এবং অল্প বয়সেই তিনি ফতোয়া লিখার কাজ আরম্ভ করেন। ইমাম বেরলভী হিজরী ১২৯৪ মুতাবেক ১৮৭৭ সালে পিতামহ তৎকালীন যুগের প্রসিদ্ধ আধ্যাত্মিক সাধক হযরত শাহ্ আলে রাসূল মারহারভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র খিদমতে হাজির হন এবং ক্বাদেররিয়া তরীক্বায় বায়‘আতের সৌভাগ্য অর্জন করেন, সাথে খিলাফত ও ইজাযত লাভেও ধন্য হন। জনৈক মুরীদ শাহ্ আলে রাসূল রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে তাঁদের তৎক্ষণাৎ খিলাফত প্রদানের রহস্য জানতে চাইলে তিনি বলেন- “অন্য ব্যক্তিবর্গ অপবিত্র আত্মা নিয়ে উপস্থিত হয়, ফলে ইবাদত ও রিয়াজতের মাধ্যমে প্রথমে আত্মার অপবিত্রতা ও পরিশুদ্ধির প্রয়োজন হয় বলে খিলাফত অর্জনে সময় লাগে; কিন্তু এরা দু’জন অত্যন্ত পবিত্র আত্মা নিয়ে আমার নিকটে এসেছে। তাঁদের জন্য শুধু শিষ্যত্বই যথেষ্ট ছিল। আর তা বায়’আতের মাধ্যমে অর্জিত হয়ে যায়। তিনি আরো এরশাদ করলেন-আমি আলে রাসূল এত দিন এ চিন্তায় পেরেশান ছিলাম যে কাল কিয়ামত দিবসে যখন আল্লাহ্ তা‘আলা জিজ্ঞেস করবেন- হে আলে রাসূল! তুমি আমার দরবারে কি নিয়ে উপস্থিত হয়েছ? আজ আমার সেই চিন্তা দূরীভূত হল। আমি উত্তরে বলবো-আল্লাহ্! আমি তোমার দরবারে আহমদ রেযাকে নিয়ে উপস্থিত হয়েছি।”
আধ্যাত্মিকতার কত মহান আসনে ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলাইহি অধিষ্ঠিত ছিলেন তা উপর্যুক্ত উক্তি থেকে সহজেই অনুমেয়। তিনি আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে এতই উন্নতি লাভ করেছিলেন যে, অনেক পীর-মাশায়েখ বায়‘আত ছাড়াও তাঁকে খিলাফত প্রদানে ধন্য করেন। প্রায় তেরটির মত সিলসিলায় তাঁর খিলাফত অর্জনের সৌভাগ্য হয়। ১৮৭৮ সালে (১২৯৫হি) পিতার সাথে প্রথম বার হজ্ব পালনোপলক্ষে মক্কায় গমন করেন। মক্কায় প্রসিদ্ধ আলিমদের কাছ থেকে কুরআন, হাদীস ও ফিক্বহ ইত্যাদির সনদ অর্জন করেন। ১৯০৫ সালে (১৩২৩হি) দ্বিতীয় বার হজ্বে গমন করেন। এ সময় মক্কা মদীনায় অবস্থানকালে তাঁকে তথাকার উলামাবৃন্দ প্রাণঢালা সম্মান প্রদর্শন করেন। অনেকে তাঁর কাছ থেকে কুরআন-হাদীস ও ফিক্বহ প্রভৃতির সনদ অর্জন করেন। এ সময়ে হিজাযের সম্মানিত উলামাবৃন্দ তাঁর নিকট প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইলমে গায়েব (অদৃশ্যজ্ঞানের ধারক হওয়া) এবং কাগজী নোট সর্ম্পকে ফতোয়া তলব করেন। তাঁদের জিজ্ঞাসিত ফতোয়ার জবাবে ‘আদ্-দাওলাতুল মাক্কিয়্যাহ্’ এবং ‘কিফলুল ফাক্বীহিল ফাহিম’ নামে আরবী ভাষায় দু’টি গ্রন্থ রচনা করেন। আরববাসী উলামা উভয় গ্রন্থে তাঁর জ্ঞানগত ও ভাষাগত গভীরতা দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন। ১৮৮০ সালে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া উলামা কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারত বর্ষের বড় বড় আলমগণ তাঁকে হিজরি চতুর্দশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ(সংস্কারক) হিসেবে স্বীকার করে নেন।
ইমাম আহমদ রেয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর জ্ঞান গবেষণার জগতে একজন অনন্য শ্রেষ্ঠ ও সফলতম ব্যক্তিত্ব। জ্ঞান রাজ্যের প্রায় পঞ্চাশের অধিক বিষয়ের উপর তিনি লিখে গেছেন। ছোট বড় মিলে তাঁর পুস্তক-পুস্তিকার সংখ্যা দেড় সহস্রাধিক। এজন্য অনেকে তাঁকে জ্ঞান জগতের এনসাইক্লোপেডিয়া বা বিশ্বকোষ বলে আখ্যায়িত করেন। তাঁর যে তিন গ্রন্থ বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তা হলো যথাক্রমে ‘কানযুল ঈমান’, ‘ফতোয়ায়ে রেজভিয়া’ ও ‘হাদায়িক্ব-ই বখশীশ (কাব্যগ্রন্থ)’। প্রথমোক্ত গ্রন্থ ‘কানযুল ঈমান’ হল পবিত্র কুরআনের উর্দূ তরজমায় এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় পবিত্র কুরআনের অনুবাদগুলোর মধ্যে তাঁর ‘কানযুল ঈমান’ নামে পবিত্র কুরআনের অনুবাদটা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। কুরআনে পাকের অন্যান্য অনুবাদের সাথে এটার তুলনামূলক আলোচনায় তাঁর এ অনুবাদটা বর্তমান বিশ্বে শ্রেষ্ঠ ও নির্ভুল অনুবাদের মর্যাদায় উত্তীর্ণ। ফলে ইংরেজি, হিন্দি, সিন্দি, বাংলা, রোমান, তুর্কি, গুজরাটি, হাঙ্গেরি প্রভৃতি ভাষায় এটার ভাষান্তরের কাজ সম্পন্ন হয়। শুধু তা নয় এ অনুবাদ গ্রন্থের উপর গবেষণা করে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩ সালে প্রফেসর মজীদ উল্লাহ্ কাদেরী পি.এইচ.ডি.ডিগ্রি লাভ করেন। পাকিস্তানে ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র জীবন ও কর্মের উপর তিনি প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি প্রাপ্ত।
দ্বিতীয় গ্রন্থ হল ‘ফতোয়া-ই-রেজভিয়া’। ইসলামী ফিক্বহ (ইসলামী জীবনবিধান বর্ণনা বিষয়ক গ্রন্থ) এর জগতে ওই গ্রন্থ বিশ্বের ওলামায়ে কেরাম, আইনবিদ ও মুসলিম সমাজের জন্য ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র এক অনন্য অবদান। উপমহাদেশের বুকে ‘ফতোয়া-ই-রেযভিয়া’র মত বিরাটকার ফতোয়াগ্রন্থ আজও রচিত হয়নি। ১২ খণ্ডে বিভক্ত প্রতি খণ্ড সহস্রাধিক পৃষ্ঠার সমন্বয়ে এ ফতোয়া গ্রন্থ তাঁর ইজতিহাদি কীর্তির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ বিরাটাকার গ্রন্থটি পৃথিবীর প্রধান চার ভাষা তথা আরবি, ঊর্দূ, ফার্সি ও ইংরেজিতে রচিত। ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর ফিক্বহী মানস ও ফতোয়া-ই রেজভিয়ার উপর ভারতের পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. হাসান রেযা ১৯৭৯ সালে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। সম্প্রতি মিসরের আল্-আযহার ইউনিভার্সিটি থেকে পাকিস্তানের এক ছাত্র তাঁর গ্রন্থের উপর গবেষণা করে ডিগ্রি অর্জন করেন।
তৃতীয় গ্রন্থ ‘হাদায়িক্ব-ই-বখশীশ’ হল ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র কাব্যগ্রন্থ। তাঁর এ কাব্য গ্রন্থে সূফীতত্ত্ব, নীতিশাস্ত্র, দর্শন, অলঙ্কার, নৃতত্ত্ব, প্রবাদ প্রবচন এবং উপমা-উৎপেক্ষা প্রভৃতি কাব্যগুণে সমুন্নত। উর্দূ, ফার্সি ও আরবি ভাষায় রচিত তাঁর প্রতিটি কবিতা, হামদ, না‘ত, মর্সিয়া প্রভৃতিতে অজানাকে জানার কৌতুহল, কাব্যিক রস, মননশীলতা, সূর, মুর্চ্ছনা, হৃদয়োত্তাপ প্রশমন, সর্বোপরি কুরআন ও হাদীসের সঠিক মূলধারা প্রাবহিত। বিশেষত তাঁর কবিতায় আমরা পাই রাসূল প্রেমের অমীয় সুধা। তাঁর কবিতায় এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে সিন্ধু ইউনিভার্সিটির এক ছাত্র তাঁর কবিত্ব ও কবিতার উপর গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রিও লাভ করেন।
মূলত: ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন ইসলমী বিশ্বের একজন জ্ঞানী-গুণী ও বিরল প্রতিভা। বড়-ছোট সব মিলে তাঁর দেড় সহস্রাধিক গ্রন্থাবলী বিশ্ব জ্ঞান ভান্ডারকে করছে সমৃদ্ধ। যা ভ্রান্তি ও কুসংস্কারে বন্দি মুসলিম মিল্লাতের এ নাজুক সন্ধিক্ষণে তাঁর দর্শন সমস্ত সঙ্কট মুক্তির পাথেরস্বরূপ এবং ইসলাম বিদ্বেষী ও বিকৃতকারী সকল পক্ষকে পরাভূত করতে তাঁর জীবন ও চিন্তাধারা বিশ্বের সত্যান্বেষী মানুষের জন্য নিয়ামত। আপন পর সকলেই তাঁর এ বিরল খিদমতকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে বিশ্বব্যাপী তাঁকে নিয়ে রচিত হয়েছে ইতহাস, সাহিত্য, কবিতা, প্রবন্ধ। আর বিভিন্ন দেশে তাঁকে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অসংখ্য সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান। তাঁর অনিন্দ্যসুন্দর জীবন ও কর্মের উপর বর্তমান বিশ্বের নিম্নলিখিত বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন গবেষক গবেষণায় রত আছেন। যেমন- * বার্কলী ইউনিভার্সিটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। * কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। * লিডেন ইউনিভার্সিটি, লিডেন, হল্যান্ড। * ডারবান ইউনিভার্সিটি, ডারবান, দক্ষিণ আফ্রিকা।* পাটনা ইউনিভার্সিটি, আলীগড়, ভারত। * মুসলিম ইউনিভার্সিটি, আলীগড়, ভারত। * উসমানিয়া ইউনিভার্সিটি, হায়দারাবাদ, ভারত। * সিন্ধু ইউনিভার্সিটি, জামসোরো, পাকিস্তান। * করাচী ইউনিভার্সিটি, পাকিস্তান। * পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি, লাহোর, পাকিস্তান। * বাহাউদ্দীন ইউনিভার্সিটি, মূলতান, পাকিস্তান।* ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ ইন্সটিটিউট,করাচি, পাকিস্তান। * মদীনাতুল হিকাম্ত হামদর্দ ফাউন্ডেশন, করাচি, পাকিস্তান। * জামেয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া ইউনিভার্সিটি, নয়া দিল্লি, ভারত। * হামদর্দ ইউনিভার্সিটি নয়া দিল্লি, ভারত। *বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্য। * নিউ কাসেল্ ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্য। * ওয়ার্ল্ড ইসলামিক মিশন সেন্টার করাচি, পাকিস্তান। * আল্লাম ইকবাল ওপেন ইউনিভার্সিটি, ইলামাবাদ, পাকিস্তান। * ক্যালটাকা ইউনিভার্সিটি, কলকাতা, ভারত। * জা-মে‘আল্-আযহার ইউনিভার্সিটি, কায়রো, মিশর। * ইবনে সাউদ ইউনিভার্সিটি, রিয়াদ, সৌদ আরব। * ঢাকা ইউনিভার্সিটি, ঢাকা, বাংলাদেশ।
তাই বিশ্বব্যাপী ইমাম আহমদ রেযাকে নিয়ে এসব গবেষণা তাঁর সর্ম্পকে জানার আমাদেরকে অনেক কিছু সুযোগ করে দেবে। আশা করবো আমাদের দেশের গবেষকগণও তাঁর মূল্যবান রচনাবলীর অনুবাদ করে জ্ঞানপিাপাষু বাংলাভাষী পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে এগিয়ে আসবেন। কারণ এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা, তাঁর লেখাগুলো সত্য সন্ধানীদের জন্য আলোকবর্তিকা স্বরূপ এবং ইসলামের সঠিক মূলধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল ওয়াল জামাতের আদর্শ প্রতিফলনে তিনি এখনো পর্যন্ত অদ্বিতীয়, অপ্রতিদ্বন্দ্বী, প্রজ্ঞাবান ও সফল লেখক। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক জগতের এ মহান ব্যক্তিত্ব ১৩৪০ হিজরীর ২৫ শে সফর (১৯২১ সালের ২৮ অক্টোবর) শুক্রবার বেলা ২টা ২৮ মিনিটে ৬৫ বছর ৩ মাস ১৪ দিন বয়সে বেরেলি শরীফে ওফাত প্রাপ্ত হন। প্রতি বছর ২৪ ও ২৫ সফর বেরেলি শহরের সওদাগরা মহল্লায় তাঁর পবিত্র ওফাত দিবস পালিত হয়। এ দিবসকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের অনেক মাসিক ও দৈনিক পত্রিকা বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে।
ইমাম আহমদ রেযা রহমতুল্লাহি আলাইহি তাসাউফ শাস্ত্রে এবং অধ্যাত্মিকতার উচ্চাসনে অসীম ছিলেন। পাক-বাংলা-ভারত উপমহাদেশে কাদেরীয়া তরীকতের ব্যাপক পরিচিতি ও প্রচার প্রসার লাভ করার পেছনে আ‘লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর অবদান সর্বোপরি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।
আ‘লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর আওলাদ, খোলাফা, শিষ্য ও উত্তরসূরীগণের অসাধারণ প্রচেষ্টা ও অবদানের ফলে প্রাচ্য-প্রাতীচ্যে সারা বিশ্বে কাদেরীয়া রেজভীয়া তরীকতের সম্প্রসারন ঘটে। রেজভীয়া মসজিদ, রেজভীয়া খানকা ও রেজভীয়া মাদরাসা জামেয়া রেজভীয়া মানযারে ইসলাম, বেরেলী শরীফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ত্রিবিধ ধারায় এ তরীকতের প্রচার প্রসার লাভ করে।
বিশেষত তাঁর সুযোগ্য সন্তান ও পরবর্তী বংশধরের মাধ্যমে আরো ব্যাপকতর লাভ করেছে। আ‘লা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর খান্দানের বর্তমান উজ্জ্বল নক্ষত্র দরবারে আ‘লা হযরত, বেরেলী শরীফ-এর বর্তমান সাজ্জাদানশীন পীরে তরিক্বত আল্লামা সুবহান রেজা খান সুবহানী মিয়া (মা.জি.আ) এ মহান তরিকার শায়খ। তিনি সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরীয়া বরকাতীয়া রেজভীয়া নুরীয়ার তরিকতানুযায়ী লোকদেরকে বায়াত করান এবং স্বীয় খলীফাগণকে উক্ত সিলসিলার ইযাযত ও খিলাফত দানে ধন্য করেন। তাঁর মুরিদের সংখ্যা হাজার নয় বরং লক্ষ কোটিও ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বের আনাচে কানাচে তাঁরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তাঁর মুরীদ ব্যতীত খলিফাগণের সংখ্যাও কম নয়। ভারতবর্ষ ব্যতীত অন্যান্য দেশসমূহে তাঁর বহু খলিফা রয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে এ মহান তরীকার শিক্ষা ও আদর্শ প্রচারের জন্য আমি মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ এবং আল্লামা মুফতি নাজিরুল আমিন রেজভী সহ আরো অনেকে আল্লামা সুবহান রেযা (মা.জি.আ) কর্তৃক নির্দেশ প্রাপ্ত খলীফা (প্রতিনিধি)।
প্রতি বৎসর ওরছে আজীমের মাধ্যমে এ মহান তরীকার প্রচার প্রসারের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। পীরে তরীকত আল্লামা মুফতি নাজিরুল আমিন রেজভী (মা.জি.আ) প্রতি বৎসর ওরছে আজীম উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র আর- রেজা প্রকাশ করে মসলকে আ‘লা হযরতের দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তাঁর এ খেদমতের জন্য আল্লাহ তা‘আলার দরবারে তাঁর নেক হায়াত কামনা করি। আমিন!

সাততেতৈয়া

শরিয়ত,তরিকত,হাকিকত ও মারফত কাকে বলে? বিস্তারিত?

পবিত্র কুরআন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান।

হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)-বড় পীর এর জীবনী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

তাজবীদ

জামে মসজিদ নীতিমালা