৩৮ বছর ধরে ইসরায়েলি কারাগারে ৪ ইরানি কূটনীতিক, নিরব বিশ্ব
প্রায় চার দশক আগে লেবানন থেকে চার ইরানি কূটনীতিককে অপহরণ করে ইসরায়েলে নেয়ার একটি ঘটনার বিষয়ে স্বচ্ছ তদন্ত চালাতে এবং সক্রিয় ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ইরান জাতিসংঘসহ বিশ্ব সমাজের কাছে আহ্বান জানিয়েছে।
এ ছাড়াও লেবানন থেকে চার ইরানি কূটনীতিক অপহরণের রাজনৈতিক ও আইনগত দায় ইহুদিবাদী ইসরায়েল ও তার মদদদাতাদেরই নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। ওই কূটনীতিকদের অপহরণের ৩৮ তম বার্ষিকীর প্রাক্কালে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ হুঁশিয়ারি দিল।
৩৮ বছর আগে লেবানন থেকে অপহৃত দেশটির চার কূটনীতিবিদ এখনও ইহুদিবাদী ইসরায়েলের কারাগারে আটক রয়েছেন। ইরানি এ চার কূটনীতিবিদের মুক্তির জন্য তেল আবিবের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে বিশ্ব সমাজের কাছে আহ্বান জানিয়ে আসছে তেহরান।
অপহৃত কূটনীতিবিদরা হলেন আহমাদ মোতেওয়াসসেলিয়ান, সাইয়্যেদ মোহসেন মুসাভি, তাকি রাস্তেগার মোকাদ্দাম এবং কাজেম আখাওয়ান। লেবাননের উত্তরাঞ্চলে বারবারা চেকপয়েন্ট থেকে ১৯৮২ সালের ৫ জুলাই এ চার কূটনীতিবিদকে অপহরণ করা হয়েছিল।
ইহুদিবাদী ইসরায়েলের তাবেদার একটি বাহিনী তাদেরকে অপহরণ করেছিলো। সামির জা’জা ও ইলি হাবিকা ছিল ওই তাবেদার খ্রিস্টান ফ্যালাঞ্জিস্ট বাহিনীর সে সময়কার প্রধান। ইরান বলে আসছে নানা সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এটা সন্দেহাতীত যে অপহরণের পর কূটনীতিবিদদের ইহুদিবাদী ইসরায়েলের কাছে তুলে দেয়া হয় এবং বর্তমানে তারা ইসরায়েলি কারাগারে আটক রয়েছেন।
ইলি হাবিকা বলেছে, ইসরায়েলই এটা চেয়েছিল যে অপহৃত ওই চার ইরানি কূটনীতিককে যেন ইসরায়েলে পাঠানো হয়। সামির জাজাও ১৯৯৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিল ইরানের ওই চার কূটনীতিক ইসরায়েলের হাতে বন্দি হয়ে আছেন। অবশ্য ইসরায়েল বলছে ফ্যালাঞ্জিস্ট গেরিলারা ওই চার ইরানিকে অপহরনের পরপরই হত্যা করে এবং তাদের দাফনও করে। লেবাননের হিযবুল্লাহর প্রধান সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ মনে করেন ইসরায়েল শত্রুতার কারণেই কখনও এ বিষয়ে সত্য কথা বলবে না। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল অতীতেও তাদের কারাগারে অনেক মুসলিম ও আরব বন্দি থাকার কথা অস্বীকার করেছিল, কিন্তু পরে দেখা গেছে যে তারা ইসরায়েলি কারাগারেই বন্দি ছিলেন।
এ ঘটনার সময় মার্কিন মদদপুষ্ট ইসরায়েলি বাহিনী লেবানন দখল করে রেখেছিল। ইরানি চার কূটনীতিবিদের অপহরণের মতো সন্ত্রাসী ঘটনার জন্য ইহুদিবাদী ইসরায়েল ও তাদের মদদদাতারা আইনগত ও রাজনৈতিক ভাবে দায়ী।
৩৮ বছর পরও তাদের মুক্ত করতে ও তেল আবিবের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বিশ্বের মানবাধিকারের কথিত ধ্বজাধারীদের কঠোর নিন্দা জানানোর অধিকার রয়েছে ইরানের।
মানবতাবিরোধী ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকারী এ পদক্ষেপের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমাজের নীরবতাও খুবই হতাশাজনক ও নিন্দনীয়। লেবাননের পাশাপাশি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক রেডক্রস’সহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থারই উচিত রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে থেকে ইরানি কূটনীতিকদের মুক্ত করার লক্ষ্যে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া।
ইরান ও হিযবুল্লাহ বা কোনো মুসলিম দেশ যদি ইসরায়েলি অথবা পশ্চিমা কোনো কূটনীতিককে অপহরণ করত তাহলে বিশ্বজুড়ে কত ব্যাপক হৈচৈ ও নিন্দার ঝড় তোলা হত এবং সব দিক থেকে কেবল তদন্ত প্রতিনিধি দলের স্রোত নামত ও অতি জরুরি ভিত্তিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে কঠোর প্রস্তাব পাশ করা হত!
অথচ অবৈধভাবে ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে জন্ম নেয়া এবং গোটা পশ্চিম এশিয়াসহ বিশ্বের বিশাল অঞ্চলে নিরাপত্তার সংকট সৃষ্টিকারী ইহুদিবাদী ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী তৎপরতার মোকাবেলায় বিশ্ব সমাজ খুবই নিষ্ক্রিয় বা প্রায় নিরব ভূমিকা পালন করছে।
একই বিষয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক কর্মকর্তা এডওয়ার্ড স্নোডেন বলেছেন, ইহুদিবাদী ইসরায়েল, মার্কিন সরকার ও ব্রিটেন মৌমাছির চাক নামের একটি পরিকল্পনার সম্মিলিত হোতা। এ পরিকল্পনার আলোকেই সারা বিশ্ব থেকে সন্ত্রাসীদের সিরিয়ায় জড় করা হয়েছে।
কিছুকাল আগে ব্রিটেনের দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টও লিখেছে: মোসাদ হচ্ছে বিশ্বে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী- ঘাতক চক্র এবং এটি হচ্ছে ইসরায়েলের নির্দয় ঘাতক-যন্ত্র। সমস্ত সন্ত্রাসী হত্যাযজ্ঞে ইসরায়েলের এই গোয়েন্দা সংস্থার স্বাক্ষর দেখা যায় বলেও উল্লেখ করেছে এই দৈনিক। সূত্র : পার্সটুডে।